পি. সি. সরকার (জন্ম: ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩, মৃত্যু: ৬ জানুয়ারি ১৯৭১) ভারতবর্ষের বিখ্যাত জাদুকর। তার পুরোনাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। তিনি অন্যতম একজন আন্তর্জাতিক জাদুকর ছিলেন যিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তার জাদু দেখিয়েছেন। তার অন্যতম প্রদর্শনী ছিল ইন্দ্রজাল প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনী তিনি প্রথমে মঞ্চে ও তারপর টেলিভিশনে দেখিয়েছিলেন।
প্রতুলচন্দ্র সরকার ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের (পূর্বে: বেঙ্গল, ব্রিটিশ ভারত) টাঙ্গাইল জেলার অশোকপুর গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি তার জাদুবিদ্যার প্রাথমিক ধারণা নেন গণপতি চক্রবর্তীর কাছ থেকে। তার জাদু ১৯৩০ সালের দিকে জনপ্রিয় হওয়া শরু হয়। তিনি কলকাতা, জাপান এবং আরো অনেক দেশেই জাদু দেখিয়েছেন।
ভারত সরকার “জাদু সম্রাট পি.সি সরকার” নামে কলকাতাতে একটি সড়কের নামকরণ করেছে।
১৯৬৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।
১৯৪৬ ও ১৯৫৪ সালে জাদুর অস্কার নামে পরিচিত “দ্য ফিনিক্স” (আমেরিকা) পুরস্কার লাভ করেন।
জার্মান মেজিক সার্কেল থেকে “দ্য রয়াল মেডিলিয়ন” পুরস্কার পান।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে ভারতীয় সরকার তার প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি ৫ টাকার স্ট্যাম্প চালু করে।
![]() |
pic source: NEW YORK PUBLIC LIBRARY |
যে জাদু পিসি সরকারকে আন্তর্জাতিক স্তরে জায়গা করে দিয়েছিলঃ
সময়টা ছিল ১৯৫৬ সালের ৯ই এপ্রিল রাত সোয়া নয়টা। যুক্তরাজ্যের এই দর্শকরা মনে করেছিলেন, তখনই তারা তাদের টেলিভিশনের পর্দায় ভয়াবহ খুনের ঘটনা সরাসরি দেখলেন।
তারা ভড়কে গিয়েছিলেন। আতংকিত হয়ে তারা টেলিফোন করছিলেন বিবিসিতে। ঘটনাটি ছিল, কসাইখানায় যেভাবে মাংস কাটা হয়, সে রকম একটি টেবিলে রাখা হয়েছে সতেরো বছর বয়সী এক তরুণীকে।
আর রহস্যময় চেহারার এক জাদুকর টেবিলের উপর ঐ তরুণীর শরীর ধারালো ব্লেড দিয়ে দ্বিখন্ডিত করে মাংস কাটছেন। এই পরিস্থিতি এমন একটা উত্তেজনা তৈরি করেছিল যে, কিছু একটা ভুল হয়েছে বলে মনে করেছিলেন অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্তরা। কারণ জাদুকর এবং তার সহকারী ঐ তরুণীকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তরুনীর শরীর দ্বিখন্ডিত রেখেই জাদুকর তার মুখ এবং মাথা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন।
তখন উপস্থাপক রিচার্ড ডিম্বলবি ক্যামেরার সামনে এসে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন। এর ফলাফল যা দাঁড়িয়েছিল, তা হলো আতংকিত দর্শকদের টেলিফোনের ঝড় উঠেছিল। বিবিসি' প্যানোরমা এই অনুষ্ঠানটি করেছিল। আর শ্বাসরুদ্ধকর সেই জাদু দেখাচ্ছিলেন ভারতের জাদুসম্রাট পি সি সরকার। পশ্চিমাদের কাছে এই অনুষ্ঠানকে পি সি সরকারের জন্য একটা অভ্যূত্থান বলা যায়। কারণ সে সময় লন্ডনের ডিউক অব ইয়র্ক থিয়েটার তিন সপ্তাহের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছিল পি সি সরকারের জাদু প্রদর্শনের জন্য।
প্রথমে দর্শক পেতে তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। কিন্তু প্যানোরমার অনুষ্ঠানটি আলোড়ন সৃষ্টি করলে সেটি তাঁর জন্য একটা বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়। তিনিও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
আকস্মিকভাবে উপস্থাপক যে মাঝপথে অনুষ্ঠান শেষ করে দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল যে, বরাদ্দ করা বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মি: সরকার তাঁর জাদু শেষ করতে পারেননি। তাঁর জাদু অতিরিক্ত সময়ে চলে যাচ্ছিল।
এই যুক্তি দিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছিল, পরিস্থিতির কারণে ধারালো ব্লেড দিয়ে তরুনীর শরীর দ্বিখন্ডিত করার বিষয়টি সেভাবেই রেখে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়েছিল। পরদিন লন্ডনে সংবাদপত্রে প্রথম পৃষ্ঠায় খবর হয়েছিল যে, টিভি পর্দায় মর্মাহত করার মতো একজন তরুণীকে দ্বিখন্ডিত করার ঘটনা দেখানো হয়েছে।
কিন্তু পি সি সরকারকে যারা চিনতেন, তারা জানতেন যে, তিনি সময় মেনে চলতেন। নির্ধারিত সময়ের বাইরে তিনি কোনভাবে যেতেন না। তবে প্যানোরমা সেই অনুষ্ঠানের পর লন্ডনে পি সি সরকারের তিন সপ্তাহের শো'র সব টিকেট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বিবিসি
তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বিবিসি
Social Plugin