Jalpaiguri girl's Google dream comes true: শ্রেয়া পেলেন স্বপ্নের চাকরি
অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম এবং মেধার জোরে কীভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করা যায়, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জলপাইগুড়ি শহরের অরবিন্দনগরের বাসিন্দা শ্রেয়া সরকার। বাবা আসবাবপত্রের দোকানের একজন সাধারণ কর্মচারী এবং মা গৃহিণী—এমন এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে শ্রেয়া অর্জন করেছেন এক অসাধারণ সাফল্য। তিনি জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট (Computer Science Graduate) হয়ে সরাসরি গুগলে (Google) সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (Software Engineer) পদে চাকরি পেয়েছেন, যার বার্ষিক বেতন ৫৪ লক্ষ টাকা। এই সাফল্য কেবল তাঁর পরিবারের নয়, জলপাইগুড়ি এবং সমগ্র রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষাজীবন: শ্রেয়ার বাবা আবির সরকার জলপাইগুড়ি শহরের বেগুনটারি এলাকায় একটি আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন এবং তাঁর মাসিক আয় মাত্র দশ হাজার টাকা। মা শিখা সরকার একজন গৃহবধূ। এমন সীমিত আয়ের মধ্যেও তাঁরা দুই মেয়েকে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত করেননি। শ্রেয়ার ছোট বোন বর্তমানে নবম শ্রেণির ছাত্রী। পারিবারিক আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শ্রেয়া ছোট থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। জলপাইগুড়ি শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর তিনি জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তির সুযোগ পান। তাঁর পারিবারিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর পড়াশোনার ফি মকুব করে দেয়। এই সুযোগ শ্রেয়ার পড়াশোনার পথকে আরও সুগম করে তোলে।
গুগলের পথে যাত্রা: কলেজে পড়াকালীনই শ্রেয়ার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তিনি গুগলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুগল মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম (Google Mentorship Program), গুগল ডেভেলপার স্টুডেন্ট ক্লাব লিড (Google Developer Student Club Lead) এবং জেনারেশন গুগল স্কলারশিপ (Generation Google Scholarship)।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীনই তাঁর কাছে গুগলে ১২ সপ্তাহের ইন্টার্নশিপ (Internship) করার সুযোগ আসে। এই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি। ইন্টার্নশিপ শেষে তিনি স্কলারশিপ (Scholarship) হিসেবে ১ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা পান। তবে, এই ইন্টার্নশিপ যে তাঁর জন্য গুগলে একটি স্বপ্নের চাকরির দরজা খুলে দেবে, তা তিনি তখনো কল্পনা করেননি।
স্বপ্নপূরণ এবং বর্তমান অবস্থান: সম্প্রতি গুগলের পক্ষ থেকে শ্রেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং ইন্টারভিউ পর্ব (Interview Process) সম্পন্ন হওয়ার পর তাঁর হাতে আসে প্রি-প্লেসমেন্ট অফার (Pre-Placement Offer)। গত ১৪ জুলাই তিনি গুগলের বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) অফিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (Software Engineer) হিসেবে যোগদান করেছেন। এই অভাবনীয় সাফল্যে তিনি আনন্দে আত্মহারা। ফোনে তিনি জানিয়েছেন, "গুগলে চাকরি পাওয়া আমার কাছে স্বপ্ন ছিল। এর জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। কলেজে পড়তে পড়তে গুগলে ইন্টার্নশিপ করেছি। বারবার ইন্টারভিউ দিয়েছি। অবশেষে গুগল থেকে প্রি-প্লেসমেন্ট অফার লেটার আসতেই আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।" তিনি আরও বলেন, "নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে চাই।"
প্রশংসা ও প্রতিক্রিয়া: শ্রেয়ার এই সাফল্যে জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান সুভাষ বর্মন উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, "আমাদের কলেজের ছাত্রী হিসেবে ওর জন্য গর্ব তো হচ্ছেই। সবচেয়ে বড় কথা, জলপাইগুড়ি থেকে অতি সাধারণ পরিবারের একটি একটি মেয়ে শুধুমাত্র মেধার জোরে গুগলের মতো সংস্থায় চাকরি পেল। শ্রেয়া আমাদের কলেজের পাশাপাশি জলপাইগুড়িরও মুখ উজ্জ্বল করল।" শ্রেয়ার বাবা আবির সরকারও মেয়ের এই সাফল্যে অত্যন্ত খুশি। তিনি বলেন, "বড় মেয়ের ছোট থেকেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে শ্রেয়া। ওর অধ্যাবসায় দেখে আমরা জানতাম, নিশ্চয়ই মেয়ে একটা কিছু করে দেখাবে। ওর এই সাফল্যে আমরা খুবই খুশি।"
শ্রেয়া সরকারের এই গল্প প্রমাণ করে যে, মেধা এবং অধ্যবসায় থাকলে কোনো বাধাই সাফল্যের পথে অন্তরায় হতে পারে না। তাঁর এই অর্জন অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে অনুপ্রাণিত করবে এবং দেখিয়ে দেবে যে, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊