ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনে UUPTWA দ্বারা ১০০০ ম্যানগ্রোভ চারা রোপন কর্মসূচী
গৌতম সাহা, গোসাবাঃ
এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের অধিকার রক্ষায় ঐতিহাসিক অনশন কর্মসূচীর ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি ও ২৬ শে জুলাই বিশ্ব ম্যানগ্রোভ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন UUPTWA এক মহান কর্মসূচী পালন করতে চলেছে। এই কর্মসূচী এক সপ্তাহ ব্যাপী চলবে সুন্দরবনের তিনটি আলাদা আলাদা অঞ্চল জুড়ে।
আজ গোসাবা সংলগ্ন জটিরামপুরে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচীর প্রথম দিনের চারা রোপণ সফল ভাবে সুসম্পন্ন হলো। একইভাবে আগামীকাল রায়দীঘি সংলগ্ন হরিণটানা ও পরশু বাসন্তীর পশ্চিম বাসন্তী তে ম্যানগ্রোভ রোপণ কর্মসূচী চলবে। সংগঠনের দক্ষিন ২৪ জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ সাহু জানালেন তাদের সংগঠন ২০১৯ সালের ঐতিহাসিক আমরণ অনশন কর্মসূচী কে স্মরণ করে প্রতিবছরে জুলাই মাসে নানা সামাজিক কর্মকান্ডের আয়োজন করে থাকেন। এবছর একটি নতুন ও প্রাসঙ্গিক কর্মসূচী বেছে নিয়েছেন। সেটি হলো উপকূলবর্তী নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ গাছের চারা রোপণ। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় ও সংগঠনের সদস্যবৃন্দের একান্ত আন্তরিক যোগদানে আজ এই কর্মসূচী সফলভাবে সম্পন্ন হলো। উপস্থিত ছিলেন জেলা যুগ্ম সম্পাদক রাইহান মোল্লা ও সব্যসাচী হালদার, কোষাধ্যক্ষ উত্তম বর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রায় ৪০ জন শিক্ষক।
প্রসঙগত উল্লেখযোগ্য উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ গাছ সমৃদ্ধ বনের অনেক উপযোগিতা রয়েছে। এটি উপকূলীয় অঞ্চলের সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন - নদীর পাড় ক্ষয়রোধ, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও, ম্যানগ্রোভ বন মৎস্য প্রজাতি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হিসাবে কাজ করে, কার্বন সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য জীবিকা ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%) রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতের মধ্যে।
একশোটিরও বেশি গাছ ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রে জন্মায়। কয়েকটি ম্যানগ্রোভ গাছের উদাহরণ: সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া,কেওড়া, গোলপাতা, ইত্যাদি।
ম্যানগ্রোভ বা লবণাম্বুজ এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ যা সাধারণত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনা বা লবণাক্ত জলেতেই জন্মায়।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার বদ্বীপের সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এর নাম সম্ভবত হয়েছে সুন্দরী গাছের নাম থেকে। এটি অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের থেকে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ । এর জলা জঙ্গলে যে ১০০টিরও বেশি প্রজাতির গাছ জন্মায় তার মধ্যে অন্তত ২৮টি প্রকৃত ম্যানগ্রোভ।
ম্যানগ্রোভ বনে ঝরে পড়া ফলগুলি জোয়ারের জলে ভেসে যায় — ভাটার সময় জমি থেকে দূরে এবং জোয়ারের সময় জমিতে মিশে যায়। ফলগুলি গোসাবার দুলকি গ্রামের একটি নার্সারিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বীজগুলি মাটি এবং বালির মিশ্রণে রোপণ করা হয় এবং পলিথিনের প্যাকে রাখা হয়। এরপর চারা সহ ভিত্তিটি নদীর তীরে পুনরায় রোপণ করা হয়। উপকূলীয় ঝড়, জলোচ্ছ্বাস রোধে এবং জৈব বৈচিত্র্য কে বাঁচাতে আজ ম্যানগ্রোভ চারা রোপন খুব প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙগিক হয়ে উঠেছে।
কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের মুখে। এর প্রধান কারণ হল মানুষের কার্যকলাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষিকাজ, জলজ পালন, নগরায়ন, এবং উপকূলীয় ক্ষয়, সেই সাথে চরম আবহাওয়া ম্যানগ্রোভ আবাসস্থলের ক্ষতির জন্য দায়ী। সরকারী ভাবে এই ম্যানগ্রোভ চারা রোপনের কাজ শুরু হলেও উপকূলীয় বিশালতায় এই কর্মসূচী নিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের অংশগ্রহণ খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তবে আশার কথা অনেক সংগঠন এই মহতী কাজে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন।
তাই এই রকম একটি মহান উদ্যোগ গ্রহণে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারী টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন এর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সন্দিপ ঘোষ ও সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊