প্রাথমিক শিক্ষকদের বহু প্রতিক্ষিত 'NOTIONAL EFFECT' প্রাপ্তির দাবীতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করল UUPTWA

UUPTWA in kolkata high court



গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ

আজ পশ্চিমবঙগের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন UUPTWA এর তরফ থেকে বেতন বঞ্চনা তথা 'NOTIONAL EFFECT' এর দাবীতে হাইকোর্টে মামলা করা হলো। মামলাটি দায়ের হলো বিচারক মাননীয় অভিজিৎ গাঙ্গুলির এজলাসে। উকিল হিসাবে এই মামলাটি লড়ছেন এডভোকেট্ বিক্রম ব্যানার্জী। ইতিমধ্যে আপনারা অবগত আছেন পশ্চিমবঙগের সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষকরা বেতন বৃদ্ধির সঙগে 'NOTIONAL EFFECT' এর সুবিধা থেকে বেশ কয়েক বছর ধরেই বঞ্চিত।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ২০০৯ সাল থেকে দেশের সমস্ত রাজ্যে RTE-2009 আইন চালু হয়েছিল। এই আইন অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫০% নম্বর সহ উঃ মাঃ পাশ ও ২ বছরের ডি.এল.এড পাশ করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের PRT scale এ বেতন দেওয়া শুরু হলেও ব্যতিক্রমী হিসাবে দুএকটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙগ ছিল অন্যতম। অথচ প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, বাংলা আজ যা ভাবে পুরো দেশ সেটা পরে ভাবে।  আরও পড়ুনঃ HS Exam 2023: উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি

পশ্চিমবঙগের প্রায় দুই লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকারা বঞ্চিত হয়েছিল PRT Scale এর বেতন থেকে অথচ তারা প্রত্যেকেই RTE-2009 অনুযায়ী সঠিক যোগ্যতামানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। আর এই যোগ্যতামানে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বেশ কয়েকবছর কেটে গেলেও বেতনের সংশোধন বা পরিবর্তনের ঘটনা সরকারী ভাবে হয়নি। কোন প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনই এই ব্যাপারে কোন সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। যখন তথাকথিত শিক্ষক সংগঠনগুলি শিক্ষকদের কাছে অপ্রাসঙগিক হয়ে উঠছিল ঠিক তখনই ফিনিক্স পাখির মতন উত্থান UUPTWA তথা উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারী টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের। নবনির্মিত এই সংগঠনটির নেতৃত্বে নানা দপ্তরে আবেদন নিবেদন করা হলেও এ বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি। তারপর নানা লড়াই আন্দোলন করে অবশেষে আমরণ অনশনের মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধির সরকারি নোটিশ জারি হয় ২৬/৭/২০১৯ তারিখে। কিন্তু এই নোটিশটি কার্যকারী করতে দেখা গেল শুধু PB2 থেকে PB3 গ্রেড পে বৃদ্ধি হলেও পে রিভিশন অনুযায়ী নোশনাল এফেক্ট দিয়ে বেতন সংশোধন করা হয়নি। ফলে সিনিয়র - জুনিয়র শিক্ষক- শিক্ষকাদের বেতন অনেকেরই এক হয়ে যায়। ফলে জন্ম নেই আরও এক নতুন বেতন বৈষম্যের। প্রাথমিক শিক্ষক মহলে নেমে আসে চরম হতাশা। আরও পড়ুনঃ DA News: রাজ্য সরকারি DA মামলায় নিয়ে বড় আপডেট

এরপর UUPTWA সংগঠনের নেতৃত্ব নতুন করে আন্দোলন শুরু করলেও করোনার করাল গ্রাসে তা বন্ধ হয়ে যায়। সমস্ত আন্দোলন থেকে সরে এসে ত্রাণ ও সহায়তার কাজে মনোনিবেশ করে UUPTWA।মানুষের পাশে মানবিক মুখ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এই সংগঠনটি। আর পড়ুনঃ Primary TET 2022 Answer KEY: আবার প্রকাশিত হয়েছে প্রাইমারি টেটের Answer Key, এখনি দেখেনিন 

বর্তমানে করোনা অতিমারীর অবসান ঘটলেও আরো একটি বঞ্চনা তথা DA এর দাবীতে মনোনিবেশ করে UUPTWA। প্রায় ২৮ টি সংগঠন কে একত্রিত করে 'সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ' তৈরী করে এক উল্লেখযোগ্য নজির স্থাপন করে UUPTWA যেটি এ রাজ্যে তথা দেশে বিরল।

এদিকে তলে তলে কার্যকারী নথিপত্র জোগাড় করে অবশেষে বহু প্রতিক্ষিত 'NOTIONAL EFFECT' এর মামলাটি আজ দায়ের হলো কোর্টে। হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি সন্দিপ ঘোষ, সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ,রাজ্য কমিটির উল্লেখযোগ্য সদস্য সৌগত লাহিড়ী ও সাহসিনী বেলা সাহা। এই মামলাটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মামলাটির মূল মস্তিস্ক সৌগত বাবু জানালেন মামলাটির জয়ের ব্যাপারে তিনি ১০০ % আত্মবিশ্বাসী। দিন রাত এক করে তিনি এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করেছেন যেগুলি কোর্টে পেশ করলে জয় কেবল কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।




তিনি আরও জানান বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত সরকারী আদেশনামাটি ভুলে ভরা কারণ ROPA -2009 অনুযায়ী এই ধরনের বেতনবৃদ্ধি হলো প্রকৃতপক্ষে Pay Revision। কিন্তু সরকারী নোটিশে পে রিভিশনের উল্লেখ না করেই PB 2 থেকে PB 3 বৃদ্ধি করার যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা ROPA-2009 আইন বিরোধী। সুকৌশলে পে রিভিশন এর আদেশনামার বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়নি যাতে NOTIONAL EFFECT না পাওয়া যায়। তাই এ ধরনের বেতন বৃদ্ধি সম্পূর্ণ আইন বিরোধী ও নজিরবিহীন। তাই তাদের লড়াই এ রাজ্যের সমস্ত বঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য। এ লড়াই এ জয় যে কোন মূল্যে তিনি বা তাদের সংগঠন ছিনিয়ে আনবেন বলেই তিনি প্রত্যয়ী।




এছাড়াও তিনি বলেন সরকার ২০১৯ সালে ROPA তে সমস্ত দপ্তরের পে রিভিশনে নোশনাল এফেক্ট এর অপশান থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের ROPA তে নোশনাল এফেক্টের কোন অপশানই নেই। তাই তাদের লড়ার সামগ্রিক ভাবে সমস্ত বঞ্চনার বিরুদ্ধেই।




তিনি এও জানান তাদের দাবী এই নোশনাল এফেক্ট তাদের ০১/০১/২০০৬ থেকে কার্যকারী করতে হবে।




এখন দেখা যাক প্রথম শুনানীর দিন এই কেস কোন দিকে মোড় নেয়। তবে পশ্চিমবঙগের আপামোর শিক্ষক- শিক্ষিকারা যে বেতন সংশোধনের ব্যাপারে নতুন করে স্বপ্ন দেখতেই পারেন তা বলাই বাহুল্য।