Pranab Mukherjee, India’s former president and one of the country’s most admired political leaders, died on Monday.

প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়


দেশের প্রাক্তন তথা প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে যার অবদান উল্লেখযোগ্য। সাংসদীয় রাজনীতিতে যেকোনো সংকটে অনায়াসে সামলাতেন তিনি। ট্রাবলশ্যুটার বা ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। তিনি হলেন ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য। 


১৯৩৫ সালের ১১ই অগাস্ট ব্রিটিশ ভারতের মিরাটি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তাঁর বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন তাঁর বাবা। মা রাজলক্ষ্মীদেবী। কীর্ণাহার শিবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুল জীবন শুরু হয় তাঁর। সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর, ১৯৬৩ সালে আইন পাস করেন তিনি। পড়াশুনা শেষ করেই কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। এছাড়াও, 'দেশের ডাক' নামে একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১৯৬৩ এর পর ২০১৬-এ রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেয়াদ ফুরনোর ঠিক এক বছর আগের শিক্ষকদিবসের অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ফের দিল্লির রাজেন্দ্রপ্রসাদ সর্বোদয় বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ক্লাসে ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাস ও বিবর্তন বিষয়ে পড়ান তিনি। 



১৯৬৯ সালে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। এরপর দীর্ঘ ছয় দশকব্যাপী রাজনৈতিক কর্মজীবন তাঁর। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন প্রবীন নেতা। বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ১৯৬৯ সালে রাজ্যসভার কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হন প্রণববাবু। আর তারপরেই একের পর এক গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ইন্দিরা গান্ধীর ক্যাবিনেট মন্ত্রিসভায় স্থান পান। এরপর একে একে ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালেও তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং বিদেশ, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, রাজস্ব ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন প্রণব বাবু। তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে আনুগত্য শুধু দলেই নয় দলের বাইরেও শ্রদ্ধার পাত্র করে তুলেছিল। ২০১২ সালের ২৫ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।



দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও অতুলনীয় অবদানের জন্য এই বাঙালি রাষ্ট্রপতি নানাবিধ দেশ ও বিদেশী পুরষ্কার পেয়েছেন। 


১৯৮৪ সালে ‘ইউরোমানি’ পত্রিকার সমীক্ষায় প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী বলা হয়েছে। 

২০০৮ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। 

২০১০ সালে বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের দৈনিক সংবাদপত্র ‘এমার্জিং মার্কেটস’ তাঁকে ‘ফাইনান্স মিনিস্টার অফ দ্য ইয়ার ফর এশিয়া’ পুরস্কার দিয়েছিল।

২০১১ সালে উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টর অফ লেটারস ডিগ্রি দেয়। 


২০১২ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বেশ্বরায়া প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সাম্মানিক ডি. লিট ডিগ্রি দেয়।

২০১৩ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ সম্মানে ভূষিত হন। 

২০১৩ সালে মরিশাস বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ‘ডক্টর অফ ল’ সম্মান দেয়। 

২০১৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় প্রণব মুখোপাধ্যায়কে।



ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট কন্ডোলিজা রাইস সেকশন ১২৩ চুক্তি সই করেন তিনি। সেই সময় তিনি ছিলেন দেশের বিদেশমন্ত্রী। সালটা ২০০৮। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংকের বোর্ড অফ গভর্নরসের সদস্যও ছিলেন তিনি।

১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রুপ অফ টোয়েন্টিফোরের সভাপতিত্ব করেন তিনি। 

১৯৯৫ সালের মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি সার্ক মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলনেও সভাপতিত্ব করেছিলেন।

যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি।




কয়েকদিন কোমাচ্ছন্ন থাকার পর ৩১শে আগস্ট ২০২০, সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাবার মৃত্যু সংবাদ দেশবাসীকে টুইট করে জানান প্রণব বাবুর ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। বাড়িতে পরে গিয়ে মাথায় চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে, করোনা টেস্ট করালেও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাঁর। এরপর মাথায় জমাট বাঁধা রক্ত অস্ত্রপাচার করে সরানো হয়। এরপর, ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। চলে যান গভীর কোমায়। অবশেষে দিল্লীর আর্মি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশবাসী। কেন্দ্রীয় সরকার প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা করে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৪ বছর। 



রাজনীতির চাণক্যের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও শোক প্রকাশ করেন'গত ৫০ বছর তাঁর জীবন গত ৫০বছরের ভারতের ইতিহাস বলেও মন্তব্য করেন সনিয়া গান্ধী। শোক প্রকাশ করেন সনিয়া গান্ধী।  প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে সাতদিনের জাতীয় ঘোষণা করে কেন্দ্র। এদিকে ঘরের ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হ্যে পড়েছিল বাংলা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোক প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। শুধু ভারতই নয় প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেন। পাশাপাশি, একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।