Darjeeling: নৃপেন্দ্র নারায়ণ বেঙ্গলি হিন্দু হল-এর শ্রী মন্দির দুর্গাপূজা
শরৎকাল এলেই পাহাড়ের রাণী দার্জিলিং (Darjeeling) সেজে ওঠে এক অন্য রূপে। কাঞ্চনজঙ্ঘার পটভূমিতে এই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র হলো শহরের অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপূজা— নৃপেন্দ্র নারায়ণ বেঙ্গলি হিন্দু হল (NNBHH)-এর শ্রী মন্দির দুর্গাপূজা। এই বছর পুজোটি ১১১তম বর্ষে পদার্পণ করেছে, এবং এই বিশেষ উপলক্ষ্যে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পুজোর এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্য, যা এই উৎসবকে আরও বিশেষ করে তুলেছে।
১৯১৪ সাল নাগাদ ব্রিটিশ শাসনকালে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর-এর উদ্যোগে এবং তাঁর নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত এই হল-এ পুজোর সূচনা হয়। প্রথম দিকে রাজপরিবারের তত্ত্বাবধানে মহা জাঁকজমকের সঙ্গে এই পুজো অনুষ্ঠিত হতো।
ঐতিহাসিক নথি অনুযায়ী, একসময় বাংলার বহু বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এই পুজোয় অংশ নিয়েছিলেন। কিংবদন্তি শিল্পী কে. এল. সায়গল, সিস্টার নিবেদিতা, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, এবং বিপ্লবী বাঘা যতীনের মতো ব্যক্তিত্বরা এই পুজো মণ্ডপে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
এই পুজোর ইতিহাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো প্রতিমা আগমন ও বিসর্জনের এক সময়ের অনন্য রীতি। একসময় প্রতিমা তৈরি হতো কলকাতার কৃষ্ণনগর-এ। সেখান থেকে প্রথমে শিলিগুড়িতে আনা হতো, এবং তারপর টয় ট্রেনে (দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে) চেপে পাড়ি দিত দার্জিলিং-এর পাহাড়ে। সেই ট্রেনযাত্রার হর্ষধ্বনিই যেন পাহাড়ে আগমনীর বার্তা নিয়ে আসত।
বিসর্জনের শোভাযাত্রাও ছিল রাজকীয়। প্রতিমা কাঁধে চাপিয়ে গোটা শহর ঘোরানো হতো এবং পথে বর্ধমান রাজবাড়ির সামনে থামানো হতো। সেখানে বর্ধমানের মহারাজা দেবীকে স্বর্ণমুদ্রা (মোহর) প্রদান করে শ্রদ্ধা জানাতেন। এরপর কাজঝোরা (Kakjhora) ঝর্ণায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হতো।
১১০ বছরের মাইলফলক অতিক্রম করে নৃপেন্দ্র নারায়ণ হিন্দু হল কর্তৃপক্ষ এবছর পুরোনো ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেক্রেটারি শুভাশিস সেনগুপ্ত জানান- বিসর্জনের দিন প্রতিমাকে পাহাড় জুড়ে শোভাযাত্রার পর টয় ট্রেনের মাধ্যমে বিসর্জন দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে, যা শতাব্দী প্রাচীন এক স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করবে।
এছাড়াও, সমতলের পুজোগুলিকে টেক্কা দিতে এই বছর পুজোয় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আনা হয়েছে মহিলা ঢাকীর দল । যাদের ঢাকের আওয়াজে মুখরিত হচ্ছে পাহাড়।
দার্জিলিং-এর এই দুর্গাপূজা শুধু বাঙালি বা হিন্দুদের উৎসব নয়। পাহাড়ের কোলে এটি পরিণত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অসাধারণ মঞ্চে। বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষ—গোর্খা, লেপচা এবং স্থানীয় অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন—একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই উৎসবে অংশ নেন। ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি আর ধুনুচি নাচের মধ্যে দিয়ে গোটা পাহাড় যেন উৎসবের রঙে মেতে ওঠে। দার্জিলিং-এর এই দুর্গাপূজা বাংলার ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং পাহাড়ের স্নিগ্ধতা—এই তিনের এক দুর্লভ মেলবন্ধন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊