২০২৬ সালের দুর্গাপূজার তারিখ ও সময়সূচি দেখে নিন
আগামী ২০২৬ সালে মা দুর্গা আসবেন দেবীপক্ষের সূচনায়, নির্দিষ্ট তিথি ও নক্ষত্র মেনে। শরৎকালের এই আগমনী বার্তা শুধু উৎসবের নয়, মিলন ও ভালোবাসার। এই প্রতিবেদনে ২০২৬ সালের দুর্গাপূজার সঠিক তারিখ, তিথি ও সময়সূচি বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
শারদ উৎসবের প্রধান তারিখসমূহ
২০২৬ সালে দুর্গাপূজা শুরু হবে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর শরৎকালে শুক্লপক্ষে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মহালয়ার দিন থেকে দেবীপক্ষের সূচনা হয়, আর ষষ্ঠীর দিনে কল্পারম্ভের মাধ্যমে মূল উৎসবের শুরু।
পূজার দিন | তিথি (বাংলা) | ইংরেজি তারিখ (২০২৬) | মূল অনুষ্ঠান |
মহালয়া | অমাবস্যা | ১0 অক্টোবর, শনিবার | পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ও দেবীপক্ষের সূচনা |
ষষ্ঠী | শুক্লা ষষ্ঠী | ১৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার | কল্পারম্ভ, দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস |
সপ্তমী | শুক্লা সপ্তমী | ১৬ অক্টোবর, শুক্রবার | নবপত্রিকা স্থাপন, দেবীর মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা |
অষ্টমী | শুক্লা অষ্টমী | ১৭ অক্টোবর, শনিবার | কুমারী পূজা, সন্ধিপূজা (অষ্টমী ও নবমীর সংযোগকাল) |
নবমী | শুক্লা নবমী | ১৮ অক্টোবর, রবিবার | মহা-নবমী পূজা, যজ্ঞ ও বলিদান (কোথাও কোথাও) |
দশমী (বিজয়া দশমী) | শুক্লা দশমী | ১৯ অক্টোবর, সোমবার | দেবীর বিসর্জন ও শান্তি জল গ্রহণ, শুভ বিজয়া |
মহালয়া: দেবীপক্ষের সূচনা
২০২৬ সালের মহালয়া অনুষ্ঠিত হবে ১০ অক্টোবর, রবিবার। এই দিন পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়। মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। পঞ্জিকা অনুসারে, এই দিন থেকে দুর্গাপূজার মূল সুর বেঁধে যায়।
ষষ্ঠী (কল্পারম্ভ): উৎসবের শুভ সূচনা
পূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ষষ্ঠী তিথিতে, যা ২০২৬ সালে ১৫ অক্টোবর, বৃহস্পতি বার। এই দিনটিকে কল্পারম্ভ বলা হয়। এ দিনে কল্প অর্থাৎ সঙ্কল্প করা হয় এবং দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মুখ উন্মোচন করা হয় এবং উৎসবের আলোকসজ্জা চূড়ান্ত রূপ পায়।
সপ্তমী ও অষ্টমীর বিশেষ মাহাত্ম্য
সপ্তমী অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর, শুক্রবার, এই দিনটিকে নবপত্রিকা স্থাপন বা কলা বৌ স্নান করানো হয়। এরপর দেবীর মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে মূল পূজা শুরু হয়।
অষ্টমী তিথি (১৭ অক্টোবর, শনিবার) দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দিনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং তিথির শেষে সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট - মোট ৪৮ মিনিটের এই সময়টিকে সন্ধিক্ষণ বলা হয়। এই সময়ে দেবী দুর্গা চামুণ্ডা রূপে আবির্ভূতা হন। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই পূজা বিশেষ ফলদায়ী বলে মনে করা হয়।
নবমী ও বিজয়া দশমী
নবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে ১৮ অক্টোবর, রবিবার। এই দিনে মহা-নবমীর পূজা, যজ্ঞ ও হোম সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন মণ্ডপে দেবীর কাছে পশুবলি বা প্রতীকী বলিদানের মাধ্যমে পূজা শেষ হয়।
এরপর আসে আনন্দের সমাপ্তি, বিজয়া দশমী (১৯ অক্টোবর, সোমবার)। এই দিন দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করেছিলেন। তাই এই দিনটি বিজয়া অর্থাৎ বিজয়ের প্রতীক। এই দিনে দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর 'শুভ বিজয়া' জানিয়ে চলে প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময়। মিষ্টি মুখ করা এবং বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার মাধ্যমে উৎসবের রেশ ধরে রাখা হয়।
দেবী দুর্গার আগমন ও গমন
২০২৬ সালে দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের বাহন কী হবে, তা তিথি ও বার দেখে নির্ধারণ করা হবে। এই বাহনগুলো সামাজিক ও প্রাকৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ বার্তা বহন করে। পঞ্জিকা অনুসারে,
- দেবী দুর্গার আগমন (ষষ্ঠী তিথি: ১৫ অক্টোবর): পঞ্জিকা মতে, শুক্রবার ষষ্ঠী হলে দেবীর আগমন হয় দোলায় (পালকি)। দোলায় আগমন অশুভ সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মর্ত্যলোকে রোগ ও মড়কের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করা হয়।
- দেবী দুর্গার গমন (দশমী তিথি: ১৯ অক্টোবর): মঙ্গলবার বিজয়া দশমী হলে দেবীর গমন হয় ঘোড়ায় (অশ্ব)। ঘোড়ায় গমনও অশুভ সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়, যা ছত্রভঙ্গ অর্থাৎ সামাজিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
আগমন ও গমনের বাহন যাই হোক না কেন, বাঙালি এই বিশ্বাসে ভরসা রাখে যে মায়ের আশীর্বাদে সমস্ত অশুভ শক্তি দূরীভূত হবে।
২০২৬ সালের দুর্গাপূজা ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে শেষ হবে। এই পাঁচ দিনের উৎসব বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মিকতার এক মহামিলন ক্ষেত্র। এই তিথি ও সময়সূচি মেনে প্রতিটি বাঙালি পরিবারে নেমে আসুক আনন্দ ও শান্তির ধারা—এই আমাদের একান্ত কামনা।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊