স্বর্ণলতা রায়কে চিঠি - ৬
রানা সরকার

ফাল্গুনের মেঘলা আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে এলে মন যেন উথাল পাথাল সমুদ্রে ডুব দিতে চায়। এই বসন্ত বৃষ্টিতে মন ঘরের কোণে একেবারেই টিকতে চায় না, সে খবর তুমি তো জানো। বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করে ভ্রামরী দেবীর মন্দিরের সেই লাল পলাশ গাছের নিচে যেখানে যত্ন করে রেখে এসেছি আমাদের বন্ধুত্ব বিলাপ কিংবা রাজবাড়ির দিঘী যেখানে ফেলে এসেছি রাজহাঁস - হংসীদের প্রেম নিবেদন।

এই বসন্ত বৃষ্টিতে লুকিয়ে ফেলতে হয় সমস্ত কবিতার বই। আর, আমার একটিই মাত্র অনুরোধ - "তোমার সমস্ত কবিতার বই বাক্স বন্দি করে রাখো।" নয়তো মনে পড়ে যাবে একে একে তোমার সমস্ত প্রাক্তন প্রেমিককে। তুমি বারেবারে স্মৃতি রোমান্থনে ডুবে যাবে। হৃদয় খুঁড়ে খুঁড়ে আগুন জ্বালিয়ে মৃত জীবাশ্মকে জীবন্ত ফুল বলে ভ্রম করবে। আমার একটিই মাত্র অনুরোধ - "তুমি এই বসন্ত বৃষ্টিতে একটিও কবিতার বই পড়বে না। "

জানো তো আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আজকাল, একটিও দোয়েল কিংবা চড়ুই অথবা ঘাস ফড়িং কেউই আমার জানালাতে এসে  পয়গম্বরের দেশের বার্তা দিয়ে যায় না। এই মন খারাপের দিনে আমি "প্রলাপসিন্ধু" - তে মুখ ডুবিয়ে রাখি। আর ধীরে ধীরে মানুষ থেকে গাছ হয়ে যাই আর মন পাখিরা খুবলে খুবলে বাসা বাঁধে হৃদয়ে।

তুমি তো জানো বৃষ্টিতে ভিজতে ভীষণ ভালোবাসি আমি। এইরকম দিনে বেড়িয়ে পড়ি দেখতে গাছেদের সঙ্গম কিংবা পাহাড়ের গায়ে বয়ে আসা ঝর্ণার আত্মতৃপ্তি। পাখিরাও জানে বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ হবো না বরং জঙলী বাবা বনারণ্যের মধ্যে ময়ূরী পেখম তুলে আমার কাছে গচ্ছিত রাখে বিশল্যকরণী।

অতঃপর,  লচকা নদীর শ্মশানের নিভে যাওয়া চিতার ধোঁয়ার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ি। একলা ডোম শুধু বোঝে ওই মৃতদেহ কিংবা নিভে যাওয়া চিতার অর্থ। সমস্ত অভিমান রাগ ফুলকি হয়ে শূলের মতো প্রবেশ করে চোখে, চোখ ঠিক যেন লাল পলাশ। এই বসন্ত বৃষ্টি জানে প্রত্যেকটি নদী শুকিয়ে এলে অহংকারের কোন হেতু নেই। জল শুকিয়ে গেলে মাটি শুকিয়ে যায় আর মাটি শুকিয়ে গেলে প্রেম হারিয়ে যায়।

আমার একটিই মাত্র অনুরোধ - "তুমি এই বসন্ত বৃষ্টিতে একটিও কবিতার বই পড়বে না।"
মেঘের ভেলাঅনলাইন সাহিত্য পত্রিকায় আপনার লেখা পাঠাতে
যোগাযোগ করুন