Karwa Chauth 2025: স্বামীর মঙ্গল কামনায় উপবাসের ব্রত - করবা চৌথ
শুভ তিথিতে স্বামীর জন্য মঙ্গল কামনা... চন্দ্র দেবতার কাছে প্রার্থনা সেই মঙ্গল কামনায়। কার্তিক মাসের প্রথম পূর্ণিমার পরে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথির এই ব্রত আসলে শ্রদ্ধা, ভক্তি আর ভালবাসার এক উৎসব।
ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ হয়েছে বাঙালির দুর্গাপুজো। এবার করবা চৌথ। মূলত উত্তর ও পশ্চিম ভারতে এই করবা চৌথ পালনের বিধি বহুল প্রচলিত। অনেক জায়গায় এই কারবা চৌথকে করক চতুর্থীও বলে। এই রীতি অবাঙালি হলেও এই রীতি পালনে আজ নিজেদের সংযুক্ত করছেন বাঙালিরাও।
মনে করা হয় - প্রাথমিকভাবে এই ব্রতের সঙ্গে সংযোগ ছিল যোদ্ধাদের। যুদ্ধ ক্ষেত্রে থাকা স্বামীর মঙ্গল কামনায় স্ত্রীরা এই বিশেষ উপবাস ব্রত পালন করতেন। পরে অবশ্য এই ব্রত জনপ্রিয়তা পায়। ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে।
বলা হয় - ‘করবা’ শব্দের অর্থ হলো কড়াই। আর ‘চৌথ’ মানে চতুর্থী তিথি। 'করবা' আর 'চৌথ' - এই দুই মিলেই 'করবা চৌথ'।
এই ব্রতর ক্ষেত্রে কড়াই বা মাটির পাত্রর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ব্রত রাখেন - তাঁরা নতুন কড়াই কেনেন। সেখানে রাখা হয় নতুন কাপড়, কাঁচের চুড়ি, পুজোর সামগ্রী, খাবার, মিষ্টি ইত্যাদি। এই ব্রতে বিবাহিত মহিলারা তাঁদের স্বামীর মঙ্গল কামনায় সারাদিন নির্জলা উপবাস রাখেন। সূর্যোদয় থেকে শুরু হয় উপবাস পর্ব। উপবাসের দিন সূর্য ওঠার আগে রান্না করা খাবার খেয়ে উপবাস শুরু হয়। উপবাস শুরুর আগের এই খাবারকে বলে সারগি। করবা চৌথের আগে রীতি আছে মেহেন্দি পরার। অনেকেই সেখানে লেখেন স্বামীর নাম। সন্ধ্যা নামলে সাধারণভাবে লাল অথবা সোনালি রঙের পোশাকে নতুন পোশাক ও অলঙ্কারে সুসজ্জিত ওঠেন স্ত্রীরা। তারপর সন্ধ্যা বেলায় চন্দ্রদেবের উপাসনা করে চালনির মধ্যে দিয়ে চাঁদ দেখে স্বামীর মুখ দর্শন করেন তাঁরা। একটি প্রদীপের আলোয় দেখা হয় স্বামীর মুখ। বরণ ডালা থেকে জলপাত্র নিয়ে স্ত্রীর মুখের সামনে ধরেন স্বামী। সেই জল পান করেই স্ত্রী উপবাস ভঙ্গ করেন।
জনশ্রুতি - রানি বীরবতী তাঁর পিতৃগৃহে এই ব্রত পালন করার সময় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই উপবাস ভঙ্গ করে ফেলেন। তারপরেই তাঁর কাছে আসে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ। এরপরও বীরবতী করবা চৌথ পালন করেন এবং যমরাজের কৃপায় স্বামীর প্রাণ ফিরে পান। সেই থেকেই এই ব্রত পালনের রীতি শুরু হয়। অন্য একটি কাহিনিতে আবার আছে - করবা নামের এক পতিব্রতা নারীর কথা। তিনি কুমিরের মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন তাঁর স্বামীকে। তাঁর নামেই এই ব্রত।
আবার ‘করবা’ বলতে বোঝায় গমের পাত্রকেও। সেই সূত্রে কেউ কেউ বলেন, এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রবি শস্য। এই উৎসবের শিকড়ে আছে সেই বিষয়টিই।
এর অন্য তাৎপর্যও থাকতে পারে। হতেই পারে এর একেবারে সূচনায় ছিল চন্দ্র বংশীয়দের উৎসব। আবার আমার পিতামহ পণ্ডিতপ্রবর সন্তোষ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় "চন্দ্রমা মনসো জাতঃ" সামনে রেখে বলতেন, যাঁরা মানুষকে উদ্ধার করতে এসেছেন তাঁরা সবাই চন্দ্রের কারণেই মানসজাত। সেই সূত্র ধরে মনে হয় - হয়তো এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে স্বামীর বংশের সেই উদ্ধার কর্তা পূর্বপুরুষদেরও স্মরণ করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊