মা আর আসেননা দ্বারে, মন খারাপ পূর্ব বর্ধমানের মানকরবাসীদের
তনজিৎ সাহা, কলকাতা
সে অনেক বছর আগের কথা। পূর্ব বর্ধমানের মানকর রাজবাড়ীতে খুব ঘটা করে মায়ের আরাধনা করা হতো। নানান রঙের আলোর রোশনাই সাথে মিষ্টি সানাই-এর সুরে সারা দিন রাত মেতে থাকতো রাজবাড়ি। ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি মিষ্টি সানাইয়ের সুরে আনন্দ করতেন মানকরবাসীরা। বিশাল বিশাল হাঁড়িতে হতো মায়ের ভোগ। ঘণ্টা ঘর থেকে বাজতো ঘণ্টা যার শব্দ শুনে দলে দলে রাজবাড়িতে যোগ দিতেন প্রজারা। একসাথে হাজার জন প্রজা বস্থেন প্রীতিভোজ এ। খাওয়া দাওয়া ও যাবতীয় পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন রানীমা নিজেই। সুদূর কলকাতা থেকে সেরা গাইয়েরা আসতো পালা গানের জন্য। রাত ভোর হতো যাত্রাপালা।
মানকর রাজবাড়ি তৈরি করেন বর্ধমানের রাজারা। বর্ধমানের মহারাজ চিত্রসেন ও তাঁর পুত্র কার্তিক চাঁদ কোনৌজ ব্রাহ্মণ ভক্তলাল গোস্বামীর দীক্ষায় দীক্ষিত হন।কার্তিক চাঁদ দীক্ষা স্বরূপ তাঁর গুরুকে রঙমহল গড়ে দিয়েছিলেন। রঙমহল এর মাঝেই ছিল রাধা রধাবল্লভের মন্দির এবং শিব মন্দির। ওখানেই পুজো হতো মা চন্ডিকার। মা চন্ডীর ছিল সোনার প্রতিমা। রঙমহলকে ঘিরে ছিল রাজবাড়ির কর্মচারীদের আবাস। ছিল বারোটি শানবাঁধানো ঘাটের জলাশয় কৃষ্ণগঙ্গা। তার সামনের মনোরম বাগান, পুজো দেখার জন্য দলে দলে প্রজারা ভিড় করতো। প্রজাদের সম্পূর্ণ খাওয়ার বহন রাজাই নিতেন।
কেটে গেছে অনেক বছর।জমিদারি বিলুপ্তের পর অসহায় হয় রঙমহল।এক এক করে সেখান থেকে বিদায় নিতে থাকেন কর্মীরা। পুজো হতো তবে ন হওয়ার মতো করে। সংস্কারের অভাবে এক এক করে ভাঙতে থাকে স্থাপন। প্রায় দেড় দশক আগে প্রতিমা এনে মূল মন্দিরের সামনে পুজো হোয়ে ছিল শেষবারের মত। তারপর আর দিন রাত সানাই বাজেনা, আগের মত ঝলমলে আলো জ্বালানো হয়না। দেওয়াল গুলি জুড়ে শুধু শ্যাওলার আস্তরণ। পুজোর দিন গুলিতে রাজ বাড়ি যেনো প্রেতপুরী তে রূপান্তরিত হয়। আগের মত ঘণ্টা শুনে প্রজারা যায়না , হয়না পুজোর বোধন রাজবাড়িতে। সব মিলিয়ে যেনো মন ভালো নেই মানকরের।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊