আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার কৃষকের ছেলে,উচ্চমাধ্যমিকে ৯৮.২%



উত্তর প্রদেশের এক কৃষকের ঘরে জন্মানো অনুরাগ তিওয়ারি। সংসারের ব্যয়ভার মেটাতে বাবা করেন রাজমিস্ত্রির কাজ। CBSE (ভারতের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা) ক্লাস দ্বাদশে ৯৮.2% নম্বর পেয়ে এ বছর উত্তীর্ণ হয়েছেন। পড়তে যাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল-বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কোনো বিনা-খরচে স্কলারশিপ টাকায় পড়বেন তিনি। 



সাধারণ ঘরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও অনুরাগ তিওয়ারি আসলে কোনো সাধারণ ছেলে নন। উত্তর প্রদেশের লখিমপুর জেলার ছোট গ্রাম সারাসানে জন্ম। ১৩ জুলাই ফল ঘোষণার পরে গ্রামের সবাই একটু অবাক। সবাইকে আরও অবাক করেছেন গবেষণার জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাচ্ছেন বলে।



অনুরাগ ইতিহাস ও অর্থনীতিতে পেয়েছেন পুরো নম্বর, ১০০। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১ কম পেয়েছেন (৯৯) ইতিহাস ও অর্থনীতির চেয়ে। ইংরেজিতে ৯৭ আর অঙ্কে ৯৫।প্রান্তিক কৃষকের ছেলে অনুরাগ তিওয়ারি সিবিএসইতে অবিশ্বাস্য ফল ছাড়াও তাঁর গ্রামের প্রথম ব্যক্তি, যিনি ভারতের বাইরে পা রাখতে চলেছেন। আর নিজ যোগ্যতার কারণে ১০০ শতাংশ বৃত্তি নিয়ে বিশ্বের একটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যাবেন। তবে করোনার কারণে তাঁর যাওয়াটা পিছিয়েছে।অনুরাগ তিওয়ারির পড়াশোনা উত্তর প্রদেশের বিদ্যাজ্ঞান একাডেমিতে। 


ভবিষ্যতের ভালো কিছু করার আশায়। কোনো সময় নষ্ট না করা কৃষকের ছেলের স্বপ্ন পড়া শেষে ভারতেই ফিরবেন। তিনি আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও গণিত নিয়ে পড়বেন এমনটাই জানা যাচ্ছে পরিবার সূত্রে, ভারতে ফিরে নিজের মতো অন্যশিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ তৈরিতে করবেন এমনটাই আশা উত্তর-প্রদেশের ছেলে অনুরাগের তারা যেন অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে,সেই সুযোগ করে দিতে চান।



অনুরাগ তিওয়ারি বলেন,বোর্ড পরীক্ষাগুলোর জন্য নিজের তৈরি স্টাডি প্ল্যান অনুসরণ করেছিলেন। ‘আমি কোথায় পড়াশোনা করছি, সেই পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে পড়ার পরিকল্পনাটা করা জরুরি,’। দিন শুরু ভোর সাড়ে চারটার পরে। সব ক্লাসেই উপস্থিত থাকতেন তিনি এমনটা জনিয়াছেন। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পছন্দ করতেন ঘুমাতে যেতেন রাত ১১টার পর। 



তিনি এও জানিয়েছেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্কুলে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে বা বন্ধুরা পড়ায় সহায়তা চাইলে বা মাঝেমধ্যে পড়াশোনা করতে ইচ্ছা না করলে আমার পরিকল্পনাগুলো পরিবর্তন করতাম।’ মজার ব্যাপার হলো, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে জোরকদমে পড়াশোনা করেন। অনুরাগের জন্য বিষয়টি ছিল একটু আলাদা।



বোর্ড পরীক্ষা শুরুর মাসখানেক আগে চাপ কমিয়ে পড়ার রুটিন তৈরি করেন অনুরাগ তিওয়ারি। এর কারণ, মানসিক চাপ কমিয়ে বেশি বেশি ঘুম। ফাইনাল বোর্ড পরীক্ষার বিরতির মধ্যেও ক্রিকেট খেলেছেন। কোনো পরীক্ষায় দু-তিন দিন বিরতি থাকলে তিনি ক্রিকেট খেলা ছাড়াও স্কুল লাইব্রেরিতে নিয়মিত বই পড়তেন। বন্ধুদের সঙ্গেও সময়ে কাটাতে পছন্দ করতেন অনুরাগ। অন্যকে কীভাবে পড়া শেখানো যায়, তার একটি দুর্দান্ত উপায় বের করা ।



অনুরাগ বলেন, পাড়ায়/ক্লাসে কোনো কিছু না বুঝলে বন্ধুদের সহায়তা নিতে দ্বিধা বোধ করতাম না।আমি কোথায় পড়াশোনা করছি, সে ভারতে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী আছে, যাদের অনেকেরই অবিশ্বাস্য প্রতিভা রয়েছে। তবে এগুলো যথাসময়ে ‘খুঁজে পাওয়া যায় না’। অনুরাগের এক চাচাতো ভাই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনুরাগকে জানান। আর বড় তিন বোন বিদ্যাজ্ঞানে ভর্তির প্রস্তুতিতে সহায়তা করেছিলেন।২০১৩ সালের ৮ জুলাই অনুরাগ তিওয়ারি বাড়ি ছেড়ে সীতাপুরের বিদ্যাজ্ঞান একাডেমিতে পা রাখেন। সেখানকার পড়াশোনার রীতিনীতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনে এবং ভবিষ্যতের জন্য ‘অসম্ভব’ স্বপ্ন দেখার পথ তৈরি করে দেয়। অনুরাগের ভাষ্য, ‘বিদ্যাজ্ঞানে পৌঁছে আমি জানতে পারি শিক্ষার অর্থ আসলে কী। এটি আমাকে নতুন কল্পনাশক্তি ও দূরের পথ দেখার দৃষ্টি দিয়েছে।’বিদ্যাজ্ঞানের একটি পরিবর্তন দেখেছিলেন অনুরাগ তিওয়ারি। তাঁর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতি আগ্রহ ছিল না। তাঁর নতুন সহকর্মীরা পড়াশোনা অনেক পছন্দ করতেন। সেখান পড়ার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। শিক্ষক, বন্ধু ও সিনিয়রদের সহায়তায় অনুরাগ ভাষাটি রপ্ত করে ফেলেন। এখন বেশ সাবলীল ইংরেজিতে।



অনুরাগ তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। এ সময়ের একটি সিদ্ধান্ত তাঁর বাকি জীবনকে অদ্ভুতভাবে বদলে দিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজে–বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য স্যাটের (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলেন। এবং তিনি স্যাটে ১৩৭০ স্কোর করেন, যা ৯০ শতাংশেরও বেশি ।ইংরেজি স্যারে ছিল তার অনুপ্রেরনা।