৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের আগে জাতির উদ্দ্যেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ 

President address to the nation on the eve of the 74th Independence Day

১৫ই অগাস্ট ভারতের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের আগে ১৪ই অগাস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতির উদ্দ্যেশে ভাষণে দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ চিন-পাকিস্তানের নাম না করে কড়া বার্তা দেন। পাশাপাশি, স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসেবে যুবকদের বিশেষভাবে গর্বিত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


তিনি বলেছেন, ‘অশান্তি তৈরির চেষ্টা হলে জবাব দেবে ভারত।‘আগ্রাসন নীতিতে অনড় প্রতিবেশী দেশ। লাদাখে ভারতীয় সেনা বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে।’

তিনি বলেন, বিশ্ব যখন বিরাট চ্যালঞ্জের সম্মুখীন, জোটবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের প্রয়োজন তখন  প্রতিবেশী দেশ তাদের সম্প্রসারণবাদী গতিবিধি চালাকির সঙ্গে চালানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে। এমন একটা সময়ে দেশের সীমানা রক্ষা করে গিয়ে দেশের বীর জওয়ানরা আত্মবলিদান দিয়েছেন। ভারতমাতার এই সুসন্তানরা দেশের গৌরবের জন্যই জীবন ধারন করেছেন এবং দেশের জন্যই তার বলিদান দিয়েছেন। সমগ্র দেশ গালওয়ান উপত্যকায় এই আত্মবলিদানকে কুর্ণিশ জানিয়েছে। প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়েই তাঁদের পরিবারবর্গের প্রতি রয়েছে কৃতজ্ঞতা। তাঁদের শৌর্য্য দেখিয়ে দিয়েছে যে, ভারত শান্তির প্রতি আস্থাশীল হলেও কেউ অশান্তি তৈরির চেষ্টা করলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। দেশের সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনীর জন্য সবাই গর্বিত। তাঁরা আমাদের সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অতন্দ্র প্রহরী। তাঁরা সীমান্ত সুরক্ষার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেন।

পাশাপাশি, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার বার্তা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘দেশে ৮০ কোটি মানুষ বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন।করোনার বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব লড়াই করছে।ভারত এব্যাপারে সঠিক সময়ে, সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।’

তিনি বলেন, দরিদ্র ও দৈনিক মজুরি-উপার্জনকারীরা মহামারী দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সঙ্কটের এই পর্যায়ে তাদের সমর্থন করার জন্য, ভাইরাস সংক্রমণ-প্রচেষ্টা কল্যাণমূলক হস্তক্ষেপ দ্বারা পরিপূরক হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ যোজনা’ প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি মানুষকে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম করেছে, এবং মহামারী দ্বারা সৃষ্ট চাকরি-ক্ষতি, স্থানচ্যূতকরণ ও ব্যাঘাতের প্রভাব হ্রাস করেছে। সরকার কর্পোরেট উদ্যোগ, নাগরিক সমাজ এবং নাগরিকদের দ্বারা আন্তরিকভাবে সমর্থিত বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে চলেছে।

তিনি বলেন, অভাবীদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে কোনও পরিবার ক্ষুধার্ত না হয়। প্রতিমাসে প্রায় ৮০ কোটি লোককে খাদ্য সরবরাহের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমটি ২০২০ সালের নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অভিবাসী রেশন কার্ডধারীরা দেশের যে কোনও জায়গায় রেশন পান তা নিশ্চিত করার জন্য, সমস্ত রাজ্যকে ‘এক জাতি - একটি রেশন কার্ড’ প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে।

পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন, বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আটকা পড়ে থাকা আমাদের জনগণের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সরকার ‘বন্দে ভারত মিশনের’ অধীনে ১০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়কে ফিরিয়ে এনেছে। এই চ্যালেঞ্জীং পরিস্থিতিতে ভারতীয় রেললাইন ট্রেন পরিষেবা পরিচালনা করছে, লোক ও পণ্য পরিবহন ও পরিবহণের সুবিধার্থে।


জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়েও আলোকপাত করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, "জাতীয় শিক্ষানীতি’ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সহ একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘অন্তর্ভুক্তি’, ‘উদ্ভাবন’ এবং ‘প্রতিষ্ঠান’ সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করবে। তরুণদের মন স্বতঃস্ফুর্তভাবে বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটি ভারতীয় ভাষাগুলির পাশাপাশি দেশের ঐক্যকে জোরদার করবে। একটি শক্তিশালী জাতি গঠনের জন্য যুব ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ এই দিকের সঠিক পদক্ষেপ।"


অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘১০দিন আগে অযোধ্যায়র রাম মন্দির তৈরির সূচনা হয়েছে।বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে দেশবাসী দীর্ঘদিন এজন্য অপেক্ষা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, সমস্ত সংশ্লিষ্ট দল এবং জনগণ শ্রদ্ধার সাথে সুপ্রিম কোর্টের রায় গ্রহণ করেছে এবং বিশ্বকে, ভারতীয় শান্তির, অহিংসা, ভালবাসা এবং সম্প্রীতির নীতি প্রদর্শন করেছে। আমি সকল সহকর্মীদের প্রশংসনীয় আচরণের জন্য অভিনন্দন জানাই। 


পাশাপাশি, এদিন তিনি ভারতের আত্মনির্ভরতার কথাও তুলে ধরেন। ভারত বিশ্ব বাজার ব্যবস্থায় সামিল থাকবে, সেইসঙ্গে নিজস্ব সক্ষমতারও স্বাক্ষর রাখবে বলেও জানান তিনি। 

সর্বশেষ তিনি আবাও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, আমি আবারও আপনাদের 74 তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে অভিনন্দন জানাই। আমি আপনার সুস্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা করি।