মুম্বাইয়ের মঞ্চ কাঁপিয়ে দিল উত্তরের শিল্পীরা: ভাওয়াইয়া–তুক্ষার সুরে মুগ্ধ মহানগর
মধুসূদন রায়, ময়নাগুড়িঃ উত্তরবঙ্গের লোকসংগীতের চিরচেনা সুর, ভাওয়াইয়ার টান আর তুক্ষার মাটির গন্ধ—এই দুইয়ের সম্মিলনে মুম্বাইয়ের সাংস্কৃতিক মঞ্চ রীতিমতো কেঁপে উঠল। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস প্রযোজিত ও বেনিয়ান ট্রির আয়োজিত বার্ষিক লোকসঙ্গীত উৎসব ‘রুহানিয়াত’–এর ২৫তম সংস্করণে এ বছর বিশেষ আকর্ষণ ছিল উত্তরবঙ্গের তুক্ষা একাডেমির শিল্পী অনিন্দিতা রায় ও তাঁর দল।
২৯ ও ৩০শে নভেম্বর মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয় ফোর্টে অনুষ্ঠিত হয় এই আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব। ভাওয়াইয়া ও তুক্ষা—মাটির গানে মুগ্ধ মুম্বাই । অনিন্দিতা রায় ও তাঁর দলের পরিবেশিত ভাওয়াইয়া ছিল উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষার সহজাত শক্তি। মঞ্চে শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও বাদ্যযন্ত্রও দর্শকদের নজর কাড়ে।
জানা যায়, এ বছর লোকসংগীতের এই সম্মিলনীতে North Bengal-এর পাশাপাশি অংশগ্রহণ করে Gujarat, Rajasthan, Italy, South Africa–এর শিল্পীরাও। প্রত্যেকেই নিজেদের ভাষায়, নিজেদের অঞ্চলের সুর ও সংস্কৃতি মুম্বাইয়ের শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন। বহুভাষিক ও বহু সংস্কৃতির এই মিলনমেলা যেন ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যের বার্তা বহন করে। আর সেই যায়গায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের উপস্থাপনায় ভরপুর এই উৎসবে উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া ও তুক্ষার সুর যেন নতুন মাত্রা যোগ করল। অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তুক্ষা একাডেমির পরিচালক ও শিল্পী অনিন্দিতা রায়, সঙ্গে তাঁর টিমের আরও পাঁচ সদস্য—পূজা রায়, মোনা রায়, হেমশ্রী রায়, সোনালী বর্মন এবং শ্রদ্ধা ওড়াও।
উত্তরবঙ্গ থেকে মুম্বাই, তারপর দিল্লি—সুরযাত্রায় শিল্পীরা। দলটি ২৭শে নভেম্বর উত্তরবঙ্গ থেকে মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। মুম্বাইয়ে ৩০শে নভেম্বর জমজমাট পারফর্মেন্সের পর দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে তারা এখন দিল্লির পথে।
পাশাপাশি জানা গেছে, মুম্বাইয়ের দর্শকদের বিপুল ভালোবাসা ও দাঁড়িয়ে অভিবাদনের স্মৃতি নিয়েই শিল্পীরা এবার ভারতের রাজধানীতে গিয়ে আরও এক দফা লোকসংগীতের ঝড় তুলবেন।
তুক্ষা একাডেমির পরিচালক ও শিল্পী অনিন্দিতা রায় বলেন, “মুম্বাইয়ে ভাওয়াইয়া ও তুক্ষাকে মানুষ যেভাবে গ্রহণ করেছে, তা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। দিল্লির মঞ্চেও আমরা উত্তরবঙ্গের মাটির সুর পৌঁছে দিতে আগ্রহী।”
উত্তরবঙ্গের এই শিল্পীদের যাত্রা শুধু সাংস্কৃতিক নয়; এটি পরিচয়, ঐতিহ্য আর উত্তরবঙ্গের লোকগানের গর্ব—যা এবার মুম্বাই থেকে দিল্লি, এবং সেখান থেকে দেশ–বিদেশের শ্রোতা-হৃদয়ে পৌঁছে যাবে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊