নাসার আবিষ্কার: সৌরজগতের চেয়েও পুরনো ধূমকেতু পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাচ্ছে

নাসার আবিষ্কার: সৌরজগতের চেয়েও পুরনো আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু থ্রি আই-অ্যাটলাস পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাচ্ছে

নাসা সম্প্রতি মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে একটি বিরল আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু শনাক্ত করেছে, যার নাম 3I/ATLAS। এটি সৌরজগতের বাইরের তৃতীয় ধূমকেতু হিসেবে স্বীকৃত, যা বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের সৌরজগতের গঠনের আগেই অন্য কোনও নক্ষত্রপুঞ্জে জন্ম নিয়েছে। এই ধূমকেতুটি ২০২৫ সালের জুলাই মাসে প্রথম আবিষ্কৃত হয় এবং বর্তমানে এটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অতিক্রম করছে।

এই ধূমকেতুর গতিপথ এবং রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি একটি আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু, অর্থাৎ এটি আমাদের সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত নয়, বরং অন্য কোনও নক্ষত্রের সৃষ্ট বস্তু হিসেবে সৌরজগতের ভেতরে প্রবেশ করেছে। এর হাইপারবোলিক কক্ষপথ এবং অস্বাভাবিক রাসায়নিক গঠন একে সাধারণ সৌরজগতের ধূমকেতু থেকে আলাদা করে তুলেছে।

নাসার Mars Reconnaissance Orbiter এবং MAVEN সহ মোট ১২টি মহাকাশ মিশন এই ধূমকেতুর ছবি তুলেছে এবং বিশ্লেষণ করেছে। ডিসেম্বর ১৯ তারিখে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে, প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মাইল দূরত্বে। এই সময় নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ সংস্থা লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে এর ছবি এবং তথ্য জনসাধারণের সামনে তুলে ধরবে।

ধূমকেতুর গঠন নিয়ে কিছু বিজ্ঞানী প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে এটি হয়তো ভিনগ্রহী প্রযুক্তি হতে পারে। তবে নাসা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, 3I/ATLAS একটি প্রাকৃতিক ধূমকেতু, এবং এর গঠন ও গতিপথ কোনও কৃত্রিম প্রযুক্তির ইঙ্গিত দেয় না। এটি ATLAS (Asteroid Terrestrial-impact Last Alert System) টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথম শনাক্ত হয়, যার নামেই ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়েছে।

এই ধূমকেতুর আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিরল সুযোগ তৈরি করেছে, কারণ এটি ভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের পদার্থ বহন করে এনেছে। এর মাধ্যমে গ্রহ ও ধূমকেতুর গঠনের বহুমাত্রিকতা বোঝা সম্ভব হবে, যা আমাদের সৌরজগতের বাইরের জগৎ সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করবে।

এই আবিষ্কার শুধু মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, বরং ভবিষ্যতের আন্তঃনাক্ষত্রিক অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, 3I/ATLAS-এর বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া তথ্য ভবিষ্যতে ভিনগ্রহী বস্তু শনাক্তকরণ ও মহাকাশ রসায়ন বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।