Sheikh Hasina Extradition: যে দুটি কারনে ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে না
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরও ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে না—এটা এখন স্পষ্ট। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের দাবি জানালেও ভারত তাকে নিরাপদে রেখেছে। সোমবার ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এই বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া না থাকলেও, ভারতীয় অবস্থান স্পষ্টতই রাজনৈতিক ও মানবাধিকারভিত্তিক।
২০১৩ সালের ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি এবং তার ২০১৬ সালের সংশোধনী অনুযায়ী, অপরাধী প্রত্যর্পণ তখনই সম্ভব, যখন অপরাধটি উভয় দেশে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকে। এই চুক্তির আওতায় ভারত ২০২০ সালে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন।
দুইটি প্রধান কারণ রয়েছে, যার ভিত্তিতে ভারত প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে:
১. রাজনৈতিক অপরাধের বিধান (ধারা ৬): যদিও হত্যা, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ এই ধারার বাইরে, হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত বলে ভারত দাবি করতে পারে। ট্রাইব্যুনালের গঠন, বিচারক নিয়োগ এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে।
২. ন্যায্য বিচারের অভাব (ধারা ৮): হাসিনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি, আইনজীবী নিয়োগে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং বিচারকরা সরকারের চাপের মধ্যে ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
কূটনৈতিক চাপ ও সম্পর্কের সম্ভাব্য অবনতি সত্ত্বেও, ভারত-বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরতা—বিশেষ করে বাণিজ্য ও জ্বালানি ক্ষেত্রে—সম্পর্ক ছিন্ন করার সম্ভাবনাকে দুর্বল করে। তবে বাংলাদেশ যদি চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, তাহলে ভারতের কৌশলগত অবস্থান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে একটি পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আইনি ও রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ হাইকোর্টে রায় চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন, অথবা ভারত ও অন্যান্য দেশের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক মহলে চাপ সৃষ্টি করে সাজা স্থগিতের দাবি তুলতে পারে।
জাতিসংঘ ও আইসিসির ভূমিকা সীমিত হলেও, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করতে পারে এবং মামলাটি আইসিসির কাছে পাঠাতে পারে। যদি আইসিসি বিচারে অনিয়ম খুঁজে পায়, তাহলে ভারত সেই ভিত্তিতে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
এই পরিস্থিতি শুধু একটি আইনি বিতর্ক নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্য, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন। ভারত তার অবস্থানকে মানবিক ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে চলেছে, যা ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊