আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে জেলা বইমেলা শুরু, দার্জিলিংয়ে সূচনা, নদীয়ায় সমাপ্তি
শিলিগুড়ি: রাজ্যের বইপ্রেমীদের জন্য এক আনন্দ বার্তা। আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক জেলা বইমেলা। এই বছর রাজ্যের মোট ২৪টি জেলায় মেলা অনুষ্ঠিত হবে, যার সূচনা হবে দার্জিলিং থেকে এবং সমাপ্তি হবে নদিয়া জেলায় আগামী ১২ জানুয়ারি ২০২৬। দার্জিলিংয়ে বইমেলা চলবে ২৪ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত এবং তা বসবে গোর্খা রঙ্গমঞ্চ ভবন সংলগ্ন এলাকায়।
এছাড়াও, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বইমেলা আগামী ২৫শে ডিসেম্বর থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর জেলা বইমেলার মূল ভাবনা নির্ধারণ করা হয়েছে— “ভাষার ঐতিহ্য রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার”। প্রতিটি জেলায় মেলাটি চলবে সাতদিন ধরে, যেখানে বইপ্রেমীদের জন্য প্রতিদিন দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রবেশাধিকার থাকবে।
শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের গণশিক্ষা সম্প্রসারণ ও গ্রন্থাগার পরিষেবা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বইমেলা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তাঁর সঙ্গে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ি এসডিও, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিকরা এবং অন্যান্য সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা। মন্ত্রী জানান, এ বছর জেলা বইমেলাকে আরও সুশৃঙ্খল করতে নতুন করে উনত্রিশ দফা নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় গ্রন্থাগার কর্তৃক একটি জেলা বইমেলা কমিটি গঠন করা হবে, যার সভাপতি থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক এবং সম্পাদক হবেন জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকার ক্ষেত্রে যথাক্রমে মহকুমা শাসক এবং সহ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক এই দায়িত্ব পালন করবেন।
এবারের বইমেলায় সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারের সংখ্যার ভিত্তিতে স্টল বরাদ্দ করা হবে। স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে মোট স্টলের দশ শতাংশ দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, উর্দু, হিন্দি ও নেপালি ভাষার প্রকাশনার জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। পাশাপাশি, বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বই বিক্রেতাদের কাছে স্টল বরাদ্দ করা যাবে না। এছাড়াও, সর্বত্র শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রকাশনা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গ্রন্থাগারগুলির বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আর্থিক নির্দেশিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গ্রামীণ গ্রন্থাগারকে কমপক্ষে $১৮,০০০$ টাকা, শহর বা মহকুমা গ্রন্থাগারকে কমপক্ষে $২৫,০০০$ টাকা এবং জেলা গ্রন্থাগারকে ন্যূনতম $৪৫,০০০$ টাকার বই কিনতেই হবে। রেফারেন্স বই এবং বৃত্তি-সহায়ক বই কেনার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এই ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো একক স্টল থেকে নয়, একাধিক স্টল থেকে বই কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, বইমেলা কেবল বই কেনাবেচার স্থান নয়, বরং বাংলার সংস্কৃতি, লোকশিল্প, জেলার ঐতিহ্য এবং গ্রন্থাগার আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। তাই প্রতিটি জেলায় বইমেলা চলাকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, বিতর্ক, সেমিনার এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক আয়োজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই সমস্ত অনুষ্ঠানে স্থানীয় গবেষক, অধ্যাপক, লেখক, শিক্ষক এবং বিষয়বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হবে।
গতবারের বইমেলায় দার্জিলিংয়ের ক্যাপিটাল হলে ৪০ জন প্রকাশক অংশ নিয়েছিলেন এবং প্রায় ৭০,০০০ বইপ্রেমী সেখানে ভিড় করেছিলেন, যেখানে ১০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকারও বেশি বই বিক্রয় হয়েছিল। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে অনুষ্ঠিত বইমেলায় ৪৫ জন প্রকাশক উপস্থিত ছিলেন এবং প্রায় ৫০,০০০ দর্শনার্থী এসেছিলেন, সেখানকার বিক্রয় ছিল ৮ লক্ষ টাকা। মালদা ছিল সর্বোচ্চ বিক্রয়কারী জেলা—১৩৫ জন প্রকাশকের উপস্থিতিতে সেখানে ২ লক্ষ ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ বই কিনতে এসেছিলেন এবং মোট বিক্রয় হয়েছিল ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকারও বেশি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল মুর্শিদাবাদ, যেখানে ৯৬ জন প্রকাশকের বই বিক্রির পরিমাণ ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছিল। রাজ্যের মোট ১,৬৬৩ জন প্রকাশক গতবারের বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বইমেলাগুলিতে মোট ২১ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি বইপ্রেমীর ভিড় হয়েছিল, যার ফলে মোট বিক্রির অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল ১৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকারও বেশি। এ বছর সেই সংখ্যা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজ্য গ্রন্থাগার দপ্তর ২৫ লক্ষ বইপ্রেমীর টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে এবং প্রতিটি জেলায় বাড়তি নজরদারি ও পরিকাঠামোর ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊