নদিয়ার পালপাড়ার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন পান্নালাল ভট্টাচার্য
১৯৬৬ সাল তাঁর জীবনের শেষ বছর। তবু চলে যাওয়ার এতো বছর পরেও দীপান্বিতা উৎসবের আবহে নিজের শ্যামা সংগীতে জেগে ওঠেন সাধক শিল্পী পান্নালাল। আজও বাঙালির কাছে শ্যামা সংগীত এবং পান্নালাল ভট্টাচার্য সমার্থক।
১১ ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠতম পান্নালালের - বড়দি ইন্দুমতির বিয়ে হয়েছিল নদিয়ার পালপাড়ার ঢোল পরিবারের ভোলানাথ ঢোলের সঙ্গে। সেই সূত্রেই বড়দির বাড়িতে আসতেন পান্নালাল।
এটা যে সময়ের ঘটনা - তখন পান্নালালের বিরাট নাম ডাক। তাঁর বড়দা প্রফুল্ল ভট্টাচার্য তখন সুরকার হিসেবে সুখ্যাত আর মেজদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য তো তখন বাংলা সংগীত জগতে খ্যাতির শীর্ষে।
পান্নালাল বড়দির বাড়িতে আসতেন মাছ ধরতে আর ঘুড়ি ওড়াতে। অবসর সময়ে বসে থাকতেন বড়দির বাড়ির শিব মন্দির। পান্নালাল যে ভাদুড়ী বংশে জন্মেছিলেন সেই বংশে সাধনা আর সংগীত দুই-ই ছিল পাশাপাশি। পান্নালালের পিতা সুরেন্দ্রনাথের কাকা ছিলেন পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ - যাঁকে পরমহংস যোগানন্দ সশ্রদ্ধায় উল্লেখ করেছেন "ভাদুড়ী মহাশয়" নামে। এই মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের পরমার্থ সংগীতের মুগ্ধ শ্রোতা ছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণ। কাকা নগেন্দ্রনাথের মতো অসাধারণ গান গাইতেন ননীলাল ভাদুড়ী এবং সুরেন্দ্রনাথও। এই ননীলাল ভাদুড়ী পরবর্তী সময়ের সিদ্ধ যোগ সাধক ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারী। এই বংশের কেউ বর্ধমান মহারাজার কাছ থেকে তাঁর শাস্ত্রজ্ঞানের কারণে ভট্টাচার্য উপাধি পান। সুরেন্দ্রনাথ সেই কারণে ভট্টাচার্য ব্যবহার করতেন। এই সংগীত এবং ভক্তির ধারা পান্নালালের মধ্যেও ছিল। সেই কারণে এই প্রাচীন শিব মন্দির তাঁর খুবই পছন্দের ছিল।
একবার এই শিব মন্দিরেই বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে গান গাইতে বসেন পান্নালাল। প্রচুর ভিড় হয় মন্দিরে। তাঁদের সকলের অনুরোধে একের পর এক শ্যামা সংগীত গাইতে থাকেন পান্নালাল। মুগ্ধ হয়ে যান সকলে।
এরপর ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা। এই ঘটনার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পান্নালাল ভট্টাচার্যের বড়দা সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্যের কন্যা শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সেদিন শ্যামা সংগীত গাইতে গাইতে হঠাৎ করে ভাবের জগতে চলে যান ছোট কাকা। গান শেষে সবাই অবাক হয়ে দেখেন - ছোট কাকার শরীর অদ্ভুত উজ্জ্বল! এই বিস্ময়ের ঘোর সেদিন কাটিয়ে উঠতে পারেননি কেউই।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊