ভাদুড়ী মহাশয় - মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের বাণীর সংকলন : 'উপদেশ শতক'
এই বইয়ে ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের একশোটি বাণী সংকলিত হয়েছে। সর্বত্র বজায় থেকেছে সংকলক শ্রীমৎ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর উজ্জ্বল উদ্ধারের দক্ষতার পাথুরে প্রমাণ।
ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
অনুমান করে নেওয়া যায় - এর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল পরিক্রমার পথে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির জ্যোতির্ময় প্রকাশ। তাই তাঁর বাণীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আছে ভক্তি, বিশ্বাস, পবিত্রতা, বিবেক, বৈরাগ্য - আরও কতো কিছু। সেই "ভাদুড়ী মহাশয়" অর্থাৎ পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের একশোটি বাণীর সংকলন করেছেন শ্রীমৎ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী - 'উপদেশ শতক'-এ। যা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। অথচ সেখানেই আশ্চর্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্যের নিষ্ণাত পণ্ডিত শ্রীমৎ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী। নিশ্চিতভাবেই এর পেছনে কাজ করেছে - তাঁর পাণ্ডিত্যের সাথে সাথে মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের প্রবর্তিত যোগ - ভক্তি মার্গে তাঁর বিচরণ এবং সেই পরম্পরার উত্তরাধিকার বহন করে দীর্ঘ সাধনা। কারণ শ্রীমৎ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর জীবনে আক্ষরিক অর্থেই সত্য হয়েছিল -
" তদ্বিদ্বি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ।।"
-ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী তাঁর পূজনীয় গুরুদেব - মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের মানসপুত্র শ্রীমৎ ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর কাছ থেকে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে যেমন জ্ঞানগর্ভ উপদেশ পেয়েছিলেন, তেমনই বিভিন্ন প্রশ্ন করে, সেবা করে সেই জ্ঞান - উপদেশ গ্রহণ করেছিলেন।
পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ সারা পৃথিবীতে শ্রদ্ধেয় লঘিমাসিদ্ধ মহাযোগী হিসেবে। পরমহংস যোগানন্দ তাঁকে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে অভিহিত করেছেন "ভাদুড়ী মহাশয়" হিসেবে। পরমহংস যোগানন্দের লিখিত পৃথিবী বিখ্যাত গ্রন্থ 'Autobiography of a Yogi'-র সপ্তম অধ্যায় 'The Levitating Saint' -এ এবং সনন্দলাল ঘোষের লিখিত ‘Mejda' গ্রন্থের
‘SAINT PSEUDO AND TRUE' অংশেও এই নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ীর সিদ্ধির সশ্রদ্ধ উল্লেখ আছে।
বালি ইংলিশ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন ১৮৮১ সালে মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয় পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে। ‘COMPANIONS AND FOLLOWERS OF RAMAKRISHNA' গ্রন্থটিতে এই সাক্ষাতের এবং মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ীর মহাজীবনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আছে।
মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের মহাজীবনের বিভিন্ন কালবৃত্তের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের দ্বিতীয় মোহন্ত শ্রীমৎ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর লেখা – ‘শ্রীশ্রীঠাকুর যুগাচার্য মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের অনুধ্যান' আলোচনাতেও। সেই তিনিই ১৩৮২ বঙ্গাব্দে সংকলন করেন পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের দিব্য জীবনের অনুভবজাত একশোটি উপদেশ। তারই প্রকাশিত রূপ - 'উপদেশ শতক'।
৫৬ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের সূচনায় আছে গ্রন্থের প্রকাশক শ্রীমৎ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারীর নিবেদন। তারপর রয়েছে ভূমিকা। এই ভূমিকায় সংক্ষেপে পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের দিব্য মহাজীবনের এবং 'উপদেশ শতক'- এর ২০২৫-এ দ্বিতীয় প্রকাশের বিষয়ে লিখেছেন শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠের বর্তমান সম্পাদক ড. রবীন্দ্রনাথ কর। এরপর রয়েছে যুগাচার্য্য মহর্ষি শ্রীশ্রীনগেন্দ্র - উপদেশামৃত। এই ১০০টি বাণীর ব্যপ্তি ৭ পৃষ্ঠা থেকে ৫৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।
ধম্মপদ- এ আছে :
"যো মুখসংযতো ভিক্ষু মন্তভাণী অনুদ্ধতো।
অথং ধম্মং চ দীপেতি মধুরং তসস ভাসিতং।।"
(অর্থাৎ - যে ভিক্ষু সংযতবাক্, যাঁর বাক্য প্রজ্ঞাগর্ভ, যিনি বিনীত, যিনি ধর্ম ও তার অর্থ বলতে সক্ষম, তাঁর বাক্য মধুর।) - এই কথা যে কতোটা সত্য তা স্পষ্ট বোঝা যায় এই একশোটি উপদেশ পড়তে পড়তে। তাই যাঁরা সংসারে থেকে দিব্য জীবনের স্বাদ পেতে চান অথবা যাঁরা অনুভব করেছেন - "ন জাতু কামঃ কামানামুপভোগেন শাম্যতি।" - অর্থাৎ ভোগের দ্বারা কখনও কামনার উপশম হয় না - তাঁদের সকলের জন্যই সনাতনধর্ম প্রচারিণী সভা ও শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠ ও মিশন ( রামমোহন রায় রোড, কলকাতা - ৯ ) থেকে প্রকাশিত 'উপদেশ শতক' সংগ্রহে রাখার মতো।
গ্রন্থ সৌজন্যে : শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠ এবং নগেন্দ্র মিশন, কলকাতা।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊