ছোটদের ভোট, তাও আবার ইভিএমে ! 

student



২০১৯ সাল থেকে বিদ্যালয়ে শিশু সংসদ গঠিত হয়ে আসছে নির্বাচনের মাধ্যমে। বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এই শিশু সংসদে প্রধানমন্ত্রী ,পরিবেশ ও শিক্ষা মন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী ,ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রীর পদ রয়েছে। এদের অধীনে পাঁচজন কে নিয়ে স্থায়ী সমিতি গঠন হয়। প্রধানমন্ত্রী স্কুলের দৈনন্দিন সমস্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখেন ও সকল দপ্তরের কাজ নজরদারী করে।খাদ্যমন্ত্রী মূলত স্কুলের মিড ডে মিল ঠিকঠাক চলছে কিনা ও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে রান্না পরিবেশন ও শিশুরা হাত মুখ সাবান দিয়ে ধুচ্ছে কিনা দেখে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমত নখ, চুল কাটছে কিনা বা ‘বেসিক হাইজিন’ মেনে চলছে কিনা তা দেখে। পরিবেশমন্ত্রী স্কুল প্রাঙ্গণ পরিস্কার রাখার বিষয়টি নজরে রাখে আর ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমত শরীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখছে কিনা তা দেখা ও টিফিনের সময় সকলকে খেলার সামগ্রী বন্টন করে।


সপ্তাহে একদিন সকলে মিলে মিটিং করে পরের সপ্তাহে কাজের পরিকল্পনা রচনা করে। প্রয়োজনে গ্রাম ও বিদ্যালয়ের প্রয়োজন বিষয়গুলো লিপিবদ্ধকরে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে জানাবে। অভিনব " আমাদের বলো " নামক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা নিজেদের সমস্যা ও গ্রাম সার্ভে করে সমস্যার সমাধান করেছে। তাদের সক্রিয় ভূমিকায় ২০১৯ সালে জেলার সেরা বিদ্যালয় ও রাজ্যস্তরীয় শিশুমিত্র বিদ্যালয় পুরস্কার অর্জন করে এই বিদ্যালয় এমনকি জেলা ও রাজ্যস্তরে স্বচ্ছবিদ্যালয় স্বীকৃতি পায়।কেন্দ্রীয় টিম বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।


শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভাবে ভোট হলো বেলডাঙা চক্রের ৩০ নং আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভোট ঘোষণার পর থেকেই বিদ্যালয়ে সহ গ্রামে একটি সাজ সাজ রব ছিল। ছোটদের ভোট তাও আবার ইভিএমে, সেইজন্য দেখার কৌতুহল ও আগ্রহ ছিল চরম মাত্রায়।সকাল ৬ টার আগেই সকলে উপস্থিত। নিরাপত্তার জন্য প্রধান শিক্ষক ব্লাকক্যাট বাহিনী প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়োগ করেছিল তারা কালো পোষাক পরে ভীষণ কাড়া ভাবেই দায়িত্ব পালন করেছে। পোলিং অফিসার হিসাবে পাঁচজন প্রাক্তন ছাত্রী, কেও অসুস্থ হলে ও ভোটাদের সামান্য চাহিদা মেটাতেও নিয়োগ ছিল ছয়জন প্রাক্তন ছাত্রী সকলের গলায় আই কার্ড ছিলো তারা যে স্কুল নির্বাচনের নিয়োগ প্রাপ্ত। ছিল রেস্ট রুম,আপদকালীন শুশ্রূষার ব্যবস্থা, হুইল চেয়ার সহ ঠান্ডা জলের ব্যাবস্থা।


ভোটদান কক্ষে যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল।একএকে লাইন করে সচিত্র পরিচয় পত্র দেখিয়ে পরপর পোলিং অফিসারের পর্যবেক্ষণ ও ১৭ সি স্বাক্ষর করে হাতের আঙ্গুলে কালি লাগিয়ে ঠিক বড়দের মতোই ভোটদান কক্ষে প্রবেশ করে বোতাম টিপে একগাল হাসি নিয়ে একে একে ভোট দিল।


বিগতদিনে শিশু সংসদ নির্বাচনে পঞ্চায়েত ভোটের ন্যায় বিভিন্ন রং ও অভিনব চিহ্নের ব্যালট পেপার, ভোটার লিস্ট, ভোটদান কক্ষ, ১৭সি, আই কার্ড, প্রিজাইটিং সহ পোলিং অফিসার, নিরাপত্তা রক্ষী সবই থাকচ্ছে কিন্তু ব্যালট পেপার এর যায়গায় এবার রাজ্য তথা দেশে প্রথম কোন শিশু সংসদ নির্বাচন হলো সম্পূর্ণ ভাবে ডিজিটাল ডিভাইস এর মাধ্যমে। বড়দের মতো কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট,ভিভিপ্যাড। বোতাম টিপে নিজের পছন্দসই প্রার্থী কে ভোট দিলো প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিশুরা। বেঁছে নিলো আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী সহ চার মন্ত্রীকে। কাদের হাতে তুলে দেবে বিদ্যালয়ের গুরুদায়িত্ব তা ঠিক করলো নিজেরাই ।


বিদ্যালয়ের বাইরের গেটে বড় ফ্লেক্স, ভিতরে নানা ধরনের সামাজিক বার্তার পোস্টার, ভোট সংক্রান্ত সচেতনতা পোস্টার,বেলুন দিয়ে ভোট কক্ষ সজ্জা। উৎসবের আমেজে মূল্যায়ন শেষে ভোটে মাতলো সকলেই।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত জানান- "সংসদ গঠন হলে পড়ুয়াদের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। ছোট থেকেই নেতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে। সমাজ সম্পর্কে সচেতনতাও বাড়বে। তাছাড়া ডিজিটাল ডিভাইসে এখনও গ্রামেগঞ্জে নানা কুসংস্কার ও অজ্ঞতা রয়েছে। যার ফলে ইচ্ছে থাকে এক আর ভোট পরে যায় অন্য যায়গায়। দ্বিতীয় বার বোতামটিপেও আর কিছু করার থাকে না। আবার পাঁচ বছর পর আবার একই ভুল। সেটা যাতে না হয়, শিশুরাই সচেতন করবে তাদের পরিবারের লোকেদের। পথ দেখাবে আণ্ডিরণের কচিকাঁচারা এটা বিশ্বাস করি।"