নদী হারিয়ে গেলেও গঙ্গা-বারুনী মেলা হয় বুড়ীরহাটে


baruni meal


সম্রাট দাস, বুড়িরহাট: 

আজ শুরু বারণী মেলা। ভাগবতপুরাণে কথিত আছে যে কোন এক সময় ভারতবর্ষে ‘সাগর’ বংশ নামে একটি রাজবংশ ছিল। কপিলমুনির বংশের সেই ষাট হাজার রাজপুত্র আগুনে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যায়। তবে তাদের মুক্তির পথ হিসেবে তিনি জানান যখন মা গঙ্গা ব্রহ্মার কুন্তল থেকে বেড়িয়ে ধরাধামে প্রবাহিত হবেন - তখন মা গঙ্গার পূণ্য স্পর্শে তাদের আত্মার মুক্তি ঘটবে।

মুনির কথা মতন সেই ষাট হাজার রাজপুত্রের বহু উত্তরপুরুষ গঙ্গাকে মর্তধামে আনবার জন্য কঠোর তপস্যা করেন, কিন্তু তাদের কেউই সফল হতে পারেননি। সাগর বংশের শষ রাজপুত্র ‘ভগীরথ’ কঠোর তপস্যা করে গঙ্গাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন এবং পূর্ব পুরুষদের আত্মার মুক্তি দেন। এই দিনটিকে হিন্দুরা গঙ্গাবার্ণি রূপে পালিত করে আসছে।

baruni mela

কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার অন্তর্গত বুড়িরহাট অঞ্চলের মাঝ দিয়ে একসময় বয়ে চলা একটি ছোট নদীকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু সময় পরেই এই এলাকার শ্রী দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মতোন কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে গঙ্গাবারুনী মেলার যে শুভ সূচনা হয়েছিল তা আজও চলে আসছে। তবে সেই নদী আজ প্রশাসনিক এবং জনসাধারণের উদাসীনতায় শুধু স্রোত নয় পথও হারিয়ে ফেলেছে। বর্ষার সময় শুধু মৃত নদীটি জেগে উঠে অতীত যৌবনের ইঙ্গিত দেয় মাত্র।

baruni mela

বর্তমানে বুড়িরহাট প্রাণেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাটিতে গঙ্গা বারুনীর এই মেলা হয়ে চলেছে। পূর্বে বুড়িরহাটের এই মেলাটিতে সকাল থেকেই পূণ্যার্থীরা পূণ্যস্নান, সখা-সখী পাতানো, শ্রাদ্ধ তর্পন করার জন্য ভীর করতেন এবং সন্ধ্যায় মেলায় রকমারি দোকানপাট থেকে কেনাকাটা করে শেষে ভুরিভোজ করে বাড়ি ফিরতেন। তবে এখন সব কিছু সেরকমই থাকলেও নদীটিতে জল না থাকায় সকাল বেলায় পূণ্যার্থীদের ভীড় এখন আর হয় না। অনেক দিন থেকে চলে আসা ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই মেলাটি শুধুমাত্র বিকেলবেলা থেকে জমে উঠতে থাকে।

তবে আর একটি কথা বলে রাখা ভালো- এই মেলা হিন্দু ধর্মাশ্রিত হলেও অন্যান্য সকল ধর্মের উপস্থিতিতে মেলাটি সার্থকরূপ পেয়েছে। বুড়িরহাট শুধু নয় আশেপাশের অন্যান্য এলাকা থেকে আসা মানুষের পদচারণে বুড়িরহাট প্রাণেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন গঙ্গাবারুনী মেলার দিন ভরে উঠে সম্প্রীতির এক সুন্দর ছবি এঁকে দেয়।