Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Freedom Fighter: স্বাধীনতার স্মৃতি নিয়ে দিলমহম্মদ, বয়স ১০২, অভাব-অনাটনেই চলছে জীবন

স্বাধীনতার স্মৃতি নিয়ে দিলমহম্মদ, বয়স ১০২, অভাব-অনাটনেই চলছে জীবন

Freedom Fighter Dil Mahammad


সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান:-

ভাল নেই সেখ দিলমহম্মদ। শরীর দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। ছেলেপিলেরা থেকেও হাতের কাছে কেউই নেই। একমাত্র ভরসা প্রতিবেশীরা। কার্যত তাঁরাই এখনও পর্যন্ত দেশের পরাধীন ভারতে জন্ম নেওয়া এবং চোখের সামনে দেশের স্বাধীনতা দেখা মানুষটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রতিবেশীরাই জানিয়েছেন, দিল মহম্মদ চাচার বয়স ১০২ বছর। কারণ তাঁরই প্রতিবেশী এবং সমসাময়িক ১০২ বছরের এক বৃদ্ধা সম্প্রতি মারা গেছেন। 



আর দিল মহম্মদ জানিয়েছেন, তাঁর বয়স ১০০ পেরিয়ে গেছে। এখন রীতিমত অসুস্থ। শীর্ণকায় দেহে চৌকির ওপরে বসেই তাঁর দিন কাটছে। বাড়িতে রয়েছে তাঁরই পোষ্য ৫টি ছাগল। সেই ছাগল প্রতিপালন করেই তাঁর দিন চলেছে এতদিন। সরকারী বার্ধক্য ভাতা ১০০০ টাকা পান। কিন্তু তা দিয়ে কি হয়? রাত পোহালেই গোটা দেশ স্বাধীনতা দিবস নিয়ে মেতে উঠবে। কত আয়োজন, কত ভাষণ। কিন্তু দিল মহম্মদ চাচার আর সেসবে কোনো কান নেই। 



তিনি জানিয়েছেন, ছোটবেলাতেই বাবা মারা যাবার পর দিদিমার সঙ্গে চলে আসেন বর্ধমান ২নং ব্লকের হাটগোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়াল গ্রামে। জানিয়েছেন, এখন আর ঠিক মনে করতে পারছেন না। তবে যেদিন ভারত স্বাধীন হল সেদিন সকাল বেলায় আশপাশের মানুষজন হাতে শাঁখ নিয়ে মিছিল করে বেড়িয়েছিল। হাতে ছিল তিরঙা পতাকা। তিনিও সেই পতাকা হাতে নিয়ে ঘুরেছিলেন হাটগোবিন্দপুর, রাইপুর, কাশিয়াড়া, আটাঘর প্রভৃতি এলাকা। আর্থিক অভাবে পড়াশোনা হয়নি। ছোটবেলা থেকেই লোকের ছাগল, গরু চড়িয়ে উপার্জন করতে হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে লড়াই করেছিলেন সেই লড়াই অবশ্য তিনি করেননি। কিন্তু যখনই মিছিল বের হত তখনই সেই মিছিলে তিনি ভিড়েছেন। দেশ যেদিন স্বাধীন হল সেদিন সকাল থেকেই আশপাশের লোকের উন্মাদনায় সামিল হয়েছিলেন সেখ দিল মহম্মদ। 



তিনি জানিয়েছেন, কখনও সখনও মাথায় লাল টুপি ওয়ালা পুলিশ দেখেছেন। হাফ প্যাণ্ট পরে আসত। দেখেছেন লালজামা পড়া লোকদেরও। অত্যাচারিত তিনি হননি ঠিকই কিংবা অতকিছু বোঝার মত তাঁর সামর্থ্যও ছিল না। কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পর বুঝেছিলেন স্বাধীনতার স্বাদ কি। কারণ তার আগে কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে নানান বাধা আসত। যাওয়া যাবে না বলে অভিভাবকরা বলতেন। কিন্তু এখন তো সবাই একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। 



সেখ দিলমহম্মদ জানিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই, বোমা, গুলি, বন্দুক তিনি দেখেননি। একেবারে গেঁয়ো ছাগল, গরু চড়ানো সেদিনের সেই রোগা পটকা ছেলেটা স্বাধীনতার জন্য লড়াই কি তাও জানত না। কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পর অনুভব করেছিলেন। বয়স আর রোগের ভারে নুইয়ে পড়া সেখ দিল মহম্মদ জানিয়েছেন, দেশ স্বাধীন হবার পর যবে থেকে ভোট দেওয়া চালু হয়েছে। তিনি একবারও বাদ দেননি। এবারেও এত শরীর খারাপের মাঝেও তিনি পঞ্চায়েত ভোট দিয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে দেশ স্বাধীন হবার পর তাঁর কর্তব্য ভোটটা ঠিকঠাক দেওয়া। দেশের জন্য তিনি এটা করেছেন। 



প্রতিবেশী রোজিনা বিবি, নূরনেহার বিবি সেখ, রানুবিবি মোল্লারা জানিয়েছেন, দিল মহম্মদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। প্রতিবেশীরা যা সাহায্য করেন তা দিয়েই তিনি বেঁচে আছেন। সরকারীভাবে তাঁকে কোনো সহায়তা দিলে হয়ত তিনি আরো কিছুদিন ভালভাবে বাঁচতে পারবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code