দেশের কৃষকদের এবং বিশেষ করে বাংলার কৃষকদের প্রতি বিভিন্ন অবিচার তুলে ধরতে সাংবাদিক সম্মেলন

সাংবাদিক সম্মেলন


কোলকাতা, ২৫শে মে, ২০২২: ১১টি রাজ্যে সক্রিয় সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন জয় কিষান আন্দোলন, দেশের কৃষকদের এবং বিশেষ করে বাংলার কৃষকদের প্রতি বিভিন্ন অবিচার তুলে ধরতে কোলকাতায় আজ এক সাংবাদিক সম্মেলন করে। 

ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জয় কিষাণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র যাদব, সর্বভারতীয় সভাপতি অভীক সাহা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি প্রবীর মিশ্র, বাঁকুড়া জেলা সভাপতি ননী রায় এবং হুগলি জেলা সভাপতি সুশান্ত কাঁড়ি প্রমুখ।  

তাঁরা যে সমস্যাগুলি তুলে ধরেন তার মধ্যে রয়েছে -

(১) সংযুক্ত কিষান মোর্চা-র (জয় কিষান আন্দোলন যার অধিভুক্ত সংগঠন)  দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা এমএসপি গ্যারান্টি আইন প্রণয়ন 

(২) অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি-র (জয় কিষান আন্দোলন যার অধিভুক্ত সংগঠন) দাবি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য স্তরের এমএসপি আইন প্রণয়ন 

(৩) জয় কিষাণ আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী রাজ্যে লিজ চাষিদের জন্য আইন প্রণয়ন 

(৪) জয় কিষান আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী বাংলা ফসল বীমা যোজনার অধীনে সব ফসলের বীমা এবং দ্রুত উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান 

(৫) জয় কিষান আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী বাংলার উদ্বাস্তু কৃষকদের সরকারের দেওয়া জমির জন্য অবিলম্বে পরচা প্রদান এবং 

(৬) জয় কিষান আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী রাজ্যের সব কৃষককে  পিঁ এম কিষাণ নিধি প্রকল্প এবং কৃষক বন্ধু প্রকল্পের অধীনে আনা।


যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন: কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এমএসপি গ্যারান্টি আইন তৈরির বিষয়ে কৃষকদের বোকা বানাচ্ছে কিন্তু কৃষকরা আর লুণ্ঠিত ও প্রতারিত হতে প্রস্তুত নয়। কৃষকদের উপর এই অন্যায়ের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ গড়ে উঠছে এবং এবার শেষ দেখে ছাড়া হবে। বিক্ষোভ শুধু দিল্লিতে নয়, প্রতিটি রাজ্যের রাজধানী, প্রতিটি জেলা সদর, প্রতিটি ব্লক অফিসে সংগঠিত করা হবে। আমরা বুঝতে পারিনা কেন দেশের কোনো রাজ্য সরকারই  কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার অধিকার রক্ষার কথা ভাবে না।  যদিওবা কেন্দ্রীয় সরকার ২৩টি ফসলের এমএসপির কাগুজে গ্যারান্টি দেয়, রাজ্য সরকারগুলি তাদের রাজ্যের অন্যান্য ফসলের জন্য এই ধরনের গ্যারান্টি দেওয়ার কথা বিবেচনাও করে না। এই রাজ্যের ফসলের এমএসপিঁ গ্যারান্টি আইন প্রণয়ন করার পদক্ষেপ হিসেবে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে এআইকেএসসিসি একটি খসড়া আইন বানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঠিয়ে বিবেচনা করার প্রস্তাব দেয় কিন্তু লজ্জার বিষয়, সরকার  খসড়াটির প্রাপ্তি স্বীকার অবধি করেনি। কৃষকদের আয়ের নিশ্চয়তা সরকারের মূল নীতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত কিন্তু সরকারগুলি তা এড়িয়ে যাচ্ছে কারণ তারা চায় না দেশের শ্রমজীবী মানুষের সবচেয়ে বড় অংশ নিরাপদ থাকুক। যদি প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি এবং বাংলার কৃষক বন্ধুর মতো আয় সহায়তা প্রকল্পগুলিকে চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে কৃষকদের আয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। এমএসপি আইনের মত মৌলিক আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন না করা অপরাধমূলক অপশাসন।


অভীক সাহা বলেছেন: পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের আয় সুরক্ষার বিষয়ে অসংবেদনশীল এবং উদাসীন। এই সরকারের হয় কোনো নীতি নেই বা এদের শুধু কাগুজে নীতি আছে যা বাস্তবায়িত হয় না। কৃষকদের শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয় কিন্তু রুপায়ন করা হয়না। রাজ্যর প্রধান ফসল ধানের সংগ্রহে আপাদমস্তক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয় এবং অধিকাংশ কৃষককে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে এমএসপি মূল্যের অনেক কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য করে, বিশাল অঙ্কের টাকা পকেটস্থ করা হয়। জয় কিষান আন্দোলন বাংলার লিজ চাষিদের স্বীকৃতি দিয়ে একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে যাতে তারা কৃষকদের জন্য ঘোষিত সরকারী ভর্তুকি এবং সুবিধাগুলি পেতে পারে, কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলস্বরূপ, বাংলার প্রায় ৪0% কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে এবং এই সুবিধা অকৃষক জমি মালিকরা পেয়ে যাচ্ছে।  আমরা শীঘ্রই সরকারের কাছে লিজ চাষিদের জন্য একটি খসড়া আইন বানিয়ে পেশ করব এবং সরকারকে এটি পাস করতে বাধ্য করব।


প্রবীর মিশ্র বলেছেন: বাংলা শস্য বীমার আওতায় কভারেজ খুবই কম এবং অধিকাংশ কৃষকই এর আওতায় পড়েনি। আলুর মতো অনেক প্রধান ফসলই এর আওতায় আনা হয় না। সার্বিক কভারেজ না থাকলে কৃষকরা সুরক্ষিত হচ্ছে না। সুন্দরবনের মতো দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলিতে কৃষকরা একের পর এক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে কিন্তু ফসল বীমার কোন সুরক্ষা পাচ্ছে না। এর ফলে ব্যাপক অভিবাসন, নারী ও শিশু পাচার এবং অন্যান্য অনেক সামাজিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সব  কৃষকের সব প্রধান ফসলগুলি বীমার আওতায় নিশ্চিত করতে সরকার কেন "দুয়ারে বীমা" প্রকল্প আনতে পারছে না?


ননী রায় বলেন: রাজ্যে উদ্বাস্তু কৃষকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। তাদের বামফ্রন্ট আমলে জমির দলিল দেওয়া হয়েছে কিন্তু পর্চা দেওয়া হয়নি। ফলস্বরূপ, তারা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ নিধি, কৃষক বন্ধু, সার ভর্তুকি ইত্যাদির সুবিধা পাচ্ছেন না। জয় কিষাণ আন্দোলন আদালতে মামলা করেছে, অনুকূল আদেশ পেয়েছে কিন্তু তারপরও সরকার পর্চা দিচ্ছেনা। আমরা আদালত অবমাননার আবেদন করেছি। ন্যায্য পাওনার জন্য যদি কৃষককে আদালতে যেতে হয়, তাহলে প্রশাসন থেকে লাভ কী? এমনকি উদ্বাস্তু কৃষকদের পর্চা দেওয়ার অনুরোধ করে আজও যোগেন্দ্রজি মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।


সুশান্ত কাঁড়ি বলেছেন: প্রতিরোধ খাড়া করে রাজ্য সরকার বাংলার কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী কিষাণ নিধি প্রকল্পের সুবিধা পেতে দেয়নি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি কৃষকের ২০০০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর পরে, প্রকল্পটি সবেমাত্র কৃষকদের কাছে পৌঁছেছে। 'কৃষকবন্ধু'তেও গল্পটা খুব একটা আলাদা নয়। জমির রেকর্ডের ভয়াবহ অবস্থার কারণে, বেশিরভাগ কৃষক এই প্রকল্পের অধীনে আসতে অক্ষম। এতে ব্যাপক বঞ্চনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দাবি করছি সব ন্যায্য সুবিধাপ্রাপকদের সব প্রকল্পের অধীনে আনা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কৃষকদের অপর্যাপ্ত আয়ের কিছুটা হলেও সুরাহা হতে পারে।