Exclusive Report: ভাইরাল কাঁচা বাদামের শিল্পীর সাথে মুখোমুখি সংবাদ একলব্য - বাদাম, বাদাম, দাদা কাঁচা বাদাম

kacha badam


সেখ রিয়াজ উদ্দিন, বীরভূম:- গুন গুন সুরে গান থেকে নিজমনে গড়ানো গান এবং সুর দিয়ে বীরভূমের বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকর এখন সারা ভূবনের অলিগলিতে সরগরম। "বাদাম, বাদাম, দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বা..দা..ম... "- হ্যাঁ,এই গানটিই এখন সোস্যাল মিডিয়ায়  ভাইরাল এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। 


সারা বিশ্বের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন মানুষ গানের কথা ও ভিডিও দেখে ফেলেছেন। এখন মোবাইলের ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটিক,  ইত্যাদি খুললেই ভেসে আসছে সেই সুর সেই গান। এ যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "অমল ও দইওয়ালা"- গল্পের সেই "দই, দই, ভালো দই", - হাঁক দেওয়া সুরে পাগল ঘর বন্দি শিশু র কথা ভেসে ওঠে। যে মানুষটি গানের সুরে নেট দুনিয়াকে পাগল করেছেন, তিনি আসলে পেশায় একজন বাদাম বিক্রেতা। নাম ভুবন বাদ্যকর,ঠিকানা বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের  লক্ষ্মীনারায়ণপুর অঞ্চলস্থ কুড়ালজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। 



দৈনন্দিন জীবিকার তাগিদে তিনি একটি পুরনো মোটর সাইকেল করে খালি পায়ে এলাকার বিভিন্ন গ্রাম সহ  পাশ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডের ও বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করে বেড়ান। সেই সাথে  মানুষকে মনোরঞ্জন দেওয়ার জন্য গানও করেন। আর বাদামওয়ালার সেই সুমধুর গানের সুরে ছুটে আসেন অনেকেই।



শুধু গান শোনা নয়, গানের পাশাপাশি তাঁর কাছে  বাদামও কিনেন অনেকেই। তিনি সিটি গোল্ডের চেন, চুড়ি, হাতের বালা, মোবাইল ভাঙা, হাঁসের পালক, মাথার চুল ইত্যাদির বিনিময়ে ক্রেতাদের বাদাম দেন।তিনি আদানপ্রদান সরঞ্জামের নাম দিয়ে বেঁধেছেন এমন একটি গান যা এখন সর্বত্র সবার মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকরের গাওয়া এই গান সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই অনেকেই ছুটে এসেছেন তাঁর বাড়িতে,অনেকের যাতায়াত এখনো অব্যাহত। এক কথায় রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাবার মত বিষয়। 



পারিবারিক অবস্থানে জানা যায় তাঁর রয়েছে একটি মাটির খড়ের বাড়ি,তাও আবার ত্রিপল দেওয়া। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান। 



ভুবনবাবু জানান, আমি প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে গান কর করেই বাদাম বিক্রী করি। এই বাদাম বিক্রি করে আমার প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা উপার্জন হয়। বিগত ১০ বছরের জীবন জীবিকা বলতে বাদাম বিক্রি করেই সংসার যাপন। বাদাম বিক্রি করতে গেলেই  গ্রামে ঘুরে ঘুরে এই গান করি। সেই সময় একটি ছেলে সেই গান ক্যামেরা করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়, আমি কিন্তু  সেই ছেলেকে চিনি না। শুনে খুব ভালো লাগছে যে আমার গাওয়া গান সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ দেখে ফেলেছেন। যদি আমাকে কেউ সুযোগ দেন তাহলে আরো কিছু ভালো গান শোনাব। যদিও আমি কোনদিন গানের স্কুলে গান গাওয়া শিখিনি।



স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা মিঠু খান জানান, ভুবন বাদ্যকর একজন বাদাম বিক্রেতা,তিনি বাদাম বিক্রির তাগিদে নতুনত্ব হিসেবে নিজেই গান বেঁধে এবং সুর দিয়ে গান গেয়ে বেড়ান বাদাম বিক্রির সময়। আমাদের খুব ভালো লাগছে যে আমাদের ছোট্ট গ্রামে এমন এক প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। 

অন্যদিকে ওয়াহিদ রাজা খান জানান, পুরো বিশ্বে ভুবন বাদ্যকরের গান ছড়িয়ে যাচ্ছে। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটে তাঁর গান শুনছেন। এমনকী বাংলাদেশের টিকটিক স্টাররা তাঁর গান লিপসিং করে ভাইরাল করছেন। এতে আমরা খুবই গর্বিত। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কয়েকটি গান করে ভাইরাল হয়েছেন এই জেলার রতন কাহার, রাণাঘাটের রানু মণ্ডল, ছত্তিসগড়ের শুকমার বাসিন্দা সহদেব দিরদো। এবার আরও একজন সংযোজিত, তিনি হলেন বীরভূমের বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকর।