সন্তান-সন্ততির মঙ্গলকামনার্থে হিন্দু মায়েরা পালন করেন চাপড়া ষষ্ঠীর ব্রত 

চাপড়া ষষ্ঠী

সুজাতা ঘোষ :

ভাদ্রের নদ-নদী, খাল-বিল যখন বর্ষার জলে ফুলে-ফেঁপে ওঠে ঠিক সেইসময় রূপসী বাংলার অপরূপ রূপ পরিলক্ষিত হয়। খাল-বিলে পদ্ম ফুলের বাহার দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আর এই ভাদ্র মাসের শুক্লষষ্ঠীর তিথিতে পালিত হয় চাপড়া ষষ্ঠী ।


চাপড়া ষষ্ঠী


মূলত সন্তান-সন্ততির মঙ্গলকামনার্থে হিন্দু মায়েরা এই ব্রত পালন করে থাকেন। এই ষষ্ঠী দেবী হলেন বহির বঙ্গীয় সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক পৌরাণিক দেবী । হিন্দু শাস্ত্রানুসারে এই ষষ্ঠীদেবী প্রতিমাসেই বিভিন্ন নামে পূজিত হন আর ভাদ্র মাসে চাপড়াষষ্ঠী বা মন্থন ষষ্ঠী নামে পূজিতা হন।


চাপড়া ষষ্ঠী

এই ব্রত পালনের পেছনে প্রচলিত একটি কাহিনী রয়েছে - ' এক দেশে এক সওদাগর আর গিন্নি তিন ছেলে বউ আর তাদের ছেলেপুলেদের নিয়ে বাস করত। তাদের অবস্থা বেশ ভালো ছিল। তাদের তিন বউয়ের তিন ছেলে। তারমধ্যে ছোট বউয়ের ছেলেকে সবাই একটু ভালোবাসতো । একসময় ভাদ্র মাসে ষষ্ঠী পুজো আসবার সময় গিন্নি সওদাগর কে বলল বউ, ছেলেপুলে নিয়ে অন্যদের পুকুরে ষষ্ঠী পুজো দিতে যেতে ভালো লাগেনা । যদি নিজেদের পুকুর থাকত ,কত ভালো হতো এই কথা শুনে সওদাগর তার বাড়ির সামনে মজুর ডাকিয়ে বড় করে পুকুর কাটালো ও তার চারদিকে ঘাট বাঁধিয়ে নানা গাছ লাগিয়ে দিলো। কিন্তু পুকুরে একফোঁটা জুটলো না । তাই দেখে সওদাগর আর তার পরিবার খুব দুঃখ পেল । আর পাড়ার লোকেরা বলতে থাকলো , নিশ্চয়ই ওরা পাপী লোক, তাই ওদের পুকুরে জল উঠছে না । এসব কথা শুনে সওদাগর মনে মনে মা ষষ্ঠীকে ডাকতে থাকলো।


একরাত্রে সওদাগর স্বপ্ন দেখল মা ষষ্ঠী তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বলছেন, কালতো ষষ্ঠী তুই তোর যে ছোট নাতিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসিস তাকে কেটে ও রক্ত পুকুরে দিতে পারিস। তাহলে এই পুকুরে জল উঠবে। ঘুম ভেঙ্গে সওদাগর হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো । গিন্নিকে সব কথা জানাল, সকালে নিজের কাজ সেরে ছোট নাতিকে কাছে নিয়ে এলো তাকে খুব আদর করে নিজের মনকে শক্ত করে ভাবল মা ষষ্ঠীর আদেশ পালন করতেই হবে ।মা-র দয়া হলে আবার মা নাতিকে ফিরিয়ে দেবেন এই আশায়, ভরসায় সে তার ছোট নাতিকে কেটে তার রক্ত পুকুরে দিয়ে দিল। তখনই পুকুরের চারদিকে ভরে গেল জলে। সওদাগর তাড়াতাড়ি গিন্নিকে ডেকে আনল। তারপর পুরোহিত ডেকে পুকুর প্রতিষ্ঠিত করল। সেদিন ছিল ষষ্ঠী। তারা সবাই মিলে ঘাটে ষষ্ঠী পুজো করতে বসল। পুজোর শেষে ব্রত কথা শুনে সবাই তার ছেলের নাম করে পিটুলির পুতুল ও চাপড়া জলে ভাসাল ,আর নিজের নিজের ছেলের নাম করে বলল -চাপরা গেল ভেসে অমুক এল হেসে ।


চাপড়া ষষ্ঠী



অমনি ছোট বউয়ের ছেলে তারা আঁচলে টান দিতেই জলের ভিতর থেকে উঠে এলো তার ছেলে। তারপর ছোট বউ তার ছেলের গা মুছিয়ে কোলে বসিয়ে খুব আদর করলো কিন্তু কীভাবে সে জলের ভেতর থেকে উঠে এলো জিজ্ঞেস করলে ছেলে কিছু বলল না । এরপর সওদাগর তার স্বপ্নের কথা সবাইকে জানানো ।ছোট বউ ভয়ে মূর্ছা গেল ।পরে চেতনা ফিরলে সে মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে খুব কাঁদলো ।তারপর তিন বউ মিলে মা ষষ্ঠীর খুব নাম জপ করল। তাদের ছেলে কেটে তার রক্তে পুকুরের জল ওঠা আবার মা ষষ্ঠীর কৃপায় ছেলেকে ফিরে পাবার গল্প চারিদিকে প্রচার হতে লাগল। সওদাগর আর তার পরিবার আনন্দের সাথে চাপড়া ষষ্ঠী ব্রত কথা ,তার মহিমা চারিদিকে প্রচার করতে লাগলো।

সেই থেকে হিন্দু রমণীরাও এই চাপড়া ষষ্ঠীর ব্রত করতে শুরু করলো। আজ ছিলো এই চাপড়া ষষ্ঠীর ব্রত।