HS BENGALI 2021 উচ্চমাধ্যমিক ২০২১ বাংলা সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব-২
প্রথম পর্বে আমরা গল্প নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর দিয়েছিলাম। আজ কবিতা থেকে কিছু প্রশ্ন দিচ্ছি সাথে নমুনা উত্তর।
১। 'সে কখনো করেনা বঞ্চনা'- কে কখনো বঞ্চনা করেনা? কবি কীভাবে এই ভাবনায় উপনীত হয়েছেন?২। 'আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন'- কবির এমন অনুভবের কারন কী?৩। 'শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়'-শহরের অসুখ কী? এই অসুখ নিরাময়ের জন্য কবি কী করতে বলেছেন?৪। 'ওই সবুজের ভীষণ দরকার'- 'ওই সবুজ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? তার দরকার কেন?৫। 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে' কবিতায় কবি জননীকে ক্রন্দনরতা বলেছেন কেন? এই পরিস্থিতিতে কবি কী করা উচিৎ বলে মনে করেছেন?৬। 'আমি কি তাকাব আকাশের দিকে/ বিধির বিচার চেয়ে?'- কবির এমন বলার কারন কি? কবি কি করেছিলেন?
নমুনা উত্তরঃ
১। 'সে কখনো করেনা বঞ্চনা'- কে কখনো বঞ্চনা করেনা? কবি কীভাবে এই ভাবনায় উপনীত হয়েছেন?
উত্তরঃ
সত্য কখনো বঞ্চনা করেনাঃ
‘রূপনারানের কূলে’ সত্য কঠিন এবং বেদনাদায়ক-আর এই কঠিনকেই তথা বেদনাকে স্বীকারের মধ্যদিয়েই জীবনের স্বার্থকতা । সত্য কখনো বঞ্চনা করেনা।
সত্য কঠিন এবং বেদনাদায়কঃ
রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুঞ্জয়ী কবি । মৃত্যুর অভিজ্ঞতাই তাঁর জীবনকে পূর্নতা দান করেছে । ‘শেষলেখা’ কাব্যগ্রন্থের ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় মৃত্যুর অভিজ্ঞতা পূর্ন প্রানের পরিচয় সুস্পষ্ট ।
‘বিচিত্র ছলনা জালে আকির্ন সৃষ্টির পথ’, ‘দুঃখের আধার রাত্রি’ ‘আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা’ সব কিছু উত্তির্ন হয়ে এসে ‘রক্তের অক্ষরে আঁকা আপনার রূপ’ দেখে নিয়েছেন কবি, অন্তরে মহা অজানার নির্ভয় পরিচয় লাভ করেছেন, পরম আমিত্বকে জেনে অক্ষয় শান্তি লাভ করেছেন ।
কবিতায় কবির স্পষ্ট বক্তব্য-
ক) মৃত্যুর ছলনা কখনো জীবনের গতিকে রুদ্ধ করে না ।
খ) মৃত্যুভয়কে ছিন্ন করে কঠিন সত্যকে স্বীকার করতে হবে ।
গ) এই পার্থিব জীবনের সত্যমূল্য অর্জিত হয় দুঃখের দহন জ্বালার মধ্যদিয়ে ।
ঘ) মৃত্যু সত্য- সত্য কঠিন এবং বেদনাদায়ক-আর এই কঠিনকেই তথা বেদনাকে স্বীকারের মধ্যদিয়েই জীবনের স্বার্থকতা । কবির ভাষায়- ‘ আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন’।
২।'শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়'-শহরের অসুখ কী? এই অসুখ নিরাময়ের জন্য কবি কী করতে বলেছেন?
উত্তরঃ
শহরের অসুখঃ
যে কলকাতা কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শৈশবের, কৈশরের, যৌবনের, বার্দ্ধক্যের, সে কলকাতা এখন গভীর অসুখে মুখ ঢেকেছে। এই অসুখ সভ্যতার অসুখ, সময়ের সংকট, নাগরিক যান্ত্রিকতা- ‘যা কেবল সবুজ খায়’ ।
পরিত্রানের উপায়ঃ
পৃথিবীর বুকে প্রথম প্রাণের স্পন্দন নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো উদ্ভিদ । তারপর ধীরে ধীরে সে ছড়িয়ে পড়েছে, সৃষ্টি করেছে বিশ্ব প্রকৃতির মনোলোভা রূপ । কালের বিবর্তনে সভ্যতার রথে চেপে এসেছে মানুষ, লোভ লালসার তাড়নায় ধ্বংস করেছে শ্যামলা বন লক্ষ্মীকে । ইট কাঠ পাষাণ প্রাচীরে গড়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতা । বিদায় নিয়েছে সবুজ গালিচাপাতা – বিদায় নিয়েছে অরন্যের স্নিগ্ধ সুনিবিড় বেদ- উপনিষদের যুগ । এসেছে গগনচুম্বী অট্টালিকা, কলকারখানা পরিবৃত নাগরিক জীবন । তার বিষময় ফল ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে ।
এই আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় হাফিয়ে উঠেছে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় । কারন এখানে সবুজ নেই- নেই প্রাণের স্পন্দন ।
তাইতো কবি অসুখে আক্রান্ত শহরেই সবুজের আগমন ঘটাতে চান। কারন শহরে ধূসরতার যে অসুখ বাসা বেঁধেছে তা একমাত্র ঠিক হতে পারে সবুজের ছোঁয়ায় ।
সবুজ তাই শুধু উদ্ভিদ নয় –হয়ে উঠেছে প্রাণের প্রতিক, জীবনের মূলমন্ত্র। কবিতো তাই শুধু সবুজ চান-
‘গাছ তুলে আনো
বাগানে বসাও আমি দেখি
চোখ তো সবুজ চায়!
দেহ চায় সবুজ বাগান।’
৩।'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে' কবিতায় কবি জননীকে ক্রন্দনরতা বলেছেন কেন? এই পরিস্থিতিতে কবি কী করা উচিৎ বলে মনে করেছেন?
উত্তরঃ
জননী ক্রন্দনরতাঃ
মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে' কবিতায় স্বাধীনতা-পরবর্তী এক অস্থির সময়ের ছবি এঁকেছেন। যে সময় রক্ত ভেজা আর শবদেহের মিছিলে ভরা। দেশের এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে- দেশের সন্তানের এমন করুন পরিণতিতে অস্থির, ব্যাকুলা দেশ মাতৃকা । তাই তো দেশ মা কান্নায় চোখ ভেজায়।
জননীর পাশে এখন যদি না থাকিঃ
মানবিকতা – মনুষ্যত্ব শব্দ গুলো আজ যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে –এই অবক্ষয়ের সময়েও মননশীল মানুষেরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় না – প্রতিবাদে গর্জে ওঠে না । কবি মৃদুল দাশগুপ্ত পারেনা এই অন্যায় সহ্য করতে – তাইতো তার প্রতিবাদ রূপ পায় তার কবিতার ভাষায় ।
যেখানে কন্ঠ স্বর রুদ্ধ হয়ে যায় – সেখানে কবিতাইতো পারে মনের ভেতরের সমস্ত যন্ত্রণাকে নিঙরে বেড় করে আনতে । কবিতাইতো পারে অন্যের মনে বিদ্রোহের আগুন জ্বালাতে । কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাইতো প্রশ্ন রাখেন -
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে
এখন যদি না থাকি
কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া
কেন তবে আঁকা আঁকি ?’
তাইতো কবি লেখার মধ্যদিয়ে-কবিতার মধ্যদিয়ে প্রতিবাদ জানান- কবিতার মধ্যদিয়ে কান্নারতা মায়ের পাশে দাঁড়ান।
শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি কবিতাকে করে তুলতে চেয়েছেন প্রতিবাদের হাতিয়ার। তাই কবিতার মধ্যেই তিনি মজুত করতে চান বিক্ষোভের বারুদ, সামান্য অগ্নিস্ফুলিঙ্গে যা থেকে ঘটবে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ। কবির ভাষায়- “যা পারি কেবল/ সে-ই কবিতায় জাগে/ আমার বিবেক, আমার বারুদ/ বিস্ফোরনের আগে।”
দুটো পর্বে আমরা গল্প এবং কবিতার বড় প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করলাম। তৃতীয় পর্বে নজর রাখো। যদি কোন বিষয় জানতে বা বুঝতে চাও তবে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাও। \
প্রথম পর্ব দেখতে ক্লিক করো
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊