পাশের হার বৃদ্ধি পেলেও  দিনহাটার নতুন ঘোষিত কলেজের কোন দেখা নেই 


অন্যান্য বছরের থেকে একদিকে যেমন পাশের হার বেশি, তেমনি অন্যদিকে লকডাউনে বিপর্যস্ত অর্থনিতিকে চাঙ্গা করতে ভোকেশনাল শিক্ষার প্রতি নজর দিচ্ছে সরকার সেখানে   কোচবিহার জেলার সদর মহকুমা বাদে অবশিষ্ট চারটি মহকুমার মধ্যে দিনহাটা সবদিক থেকে বড়, অথচ এই মহকুমায় তিনটি ব্লকের মধ্যে একটি মাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ একটি মাত্র ডিগ্রী কলেজ- দিনহাটা মহাবিদ্যালয়। এখানে ট্র্যাডিশনাল বিষয় ছাড়া অত্যাধুনিক  যুগোপোযোগী কর্মসংস্থানমুখী বিষয় যেমন B.B.A., B.B.M.,TOURISM, JOURNALISM, HOSPITALITY, COMPUTER SCIENCE, B.C.A এই ধরনের কোন বিষয় এতদিনেও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে জীবিকামুখি কোর্সের জন্য এখানকার ছাত্রছাত্রীদের ছুটতে হয় দক্ষিণবঙ্গে।


ফলে দীর্ঘদিন থেকেই দিনহাটার শিক্ষানুরাগী মানুষজন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত কর্মসংস্থানমুখী ডিগ্রী কলেজের অভাব অনুভব করছেন। যখন 'রামচন্দ্র সাহা মহাবিদ্যালয়' এর সংবাদ জনমানসে প্রচারিত হয়,স্বাভাবিকভাবেই দিনহাটাবাসী দ্বিতীয় কলেজের আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল।

কোচবিহার জেলায় মোট ১৫ টি কলেজের মধ্যে কোচবিহার সদর মহকুমায় মোট ৬ টি, মাথাভাঙ্গা মহকুমায় ৪ টি, তুফানগঞ্জ এবং মেখলিগঞ্জ মহকুমায় ২টি করে আর দিনহাটায় ১ টি কলেজ রয়েছে। ফলে দিনহাটায় আর একটি কলেজের প্রয়োজনীয়তা স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে। 

২০১৮ সালের ১৮ই মার্চ একটি নাগরিক কনভেনশানে সিদ্ধান্ত হয় দিনহাটায় প্রস্তাবিত কলেজটির নাম হবে- 'রামচন্দ্র সাহা মহাবিদ্যালয়'  এমনকি এই কলেজের জন্য ১৬ জন সদস্যের একটি অর্গানাইজিং  কমিটি গঠিত হয়। কলেজের স্থান পরিদর্শন করে একপ্রকার কলেজের জন্য স্থান নির্বাচনও করেন তারা। সীমান্ত লাগোয়া ভেকরাপুল সংলগ্ন অঞ্চলে নতুন কলেজ হবে বলেও সংবাদে প্রকাশিত হয়।

৫-১২-২০১৭ তে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়- 'দিনহাটা ও সিতাইয়ে নতুন কলেজ তৈরির ব্যাপারে অনুমতি দিল শিক্ষা দপ্তর'  ২০১৮ তে মে মাসে প্রথমসারির সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হয়- 'চলতি বছরেই ক্লাস শুরু হচ্ছে দিনহাটার নতুন কলেজে' (উত্তরবঙ্গ সংবাদ-১২-০৩-২০১৮) এমনকি 'আগাম জানিয়ে উদয়নের ফেসবুক পোস্ট' এও বিতর্ক হয়। (সূত্রঃ বর্তমান,১২ মার্চ,২০১৮)  কিন্তু এই সমস্ত ঘটনার তাল কাটে ২৯ অক্টোবর ২০১৮ তে। কোচবিহারে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন 'দিনহাটা ও সিতাইয়ে আপাতত নতুন ডিগ্রি কলেজ গড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যার ফলে আপামর দিনহাটাবাসী চরম হতাশ হন। 

এর ফল গত লোকসভা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন। কারন গত লোকসভায় কোচবিহারে ভরাডুবি ঘটে তৃণমূলের।  এই ভরাডুবি থেকে যখন উঠবার প্রয়াসে মরিয়া তৃণমূল শিবির তখন অনেকেই আবার আশার আলো দেখছেন। মনে করছেন  এবার 'রামচন্দ্র সাহা মহাবিদ্যালয়' হয়তো শুরু হবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আবদার জমা পড়েছে 'দিদিকে বলো' নাম্বারেও। 

কিন্তু এখনো কোন আশার আলো দেখা যায়নি। প্রসঙ্গত  SUCI এর দিনহাটা মহকুমা কমিটির সদস্য আজিজুল হক  বলেন- " এবছর পাশের হার বিগত বছরের তুলনায় বেশি, তার উপর কর্মমুখী কোর্সের বিশেষ প্রয়োজন বর্তমান সময়ে । আর এই পরিস্থিতিতে কেন সব ঠিক হয়ে থাকা  কলেজ এর কাজ শুরু করছে না সরকার তা অস্পষ্ট। সরকারের উচিৎ এই শিক্ষা বর্ষেই এই নতুন কলেজের পঠন পাঠন শুরু করা যেহেতু ইতিমধ্যে সাহেব গঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে অস্থায়ী  পঠন পাঠনের জন্য NOC দিয়েছেন।" 

SFI এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শুভ্রালোক দাস বলেন- "যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী এ বছর পাশ করছে তা ধারণ করবার ক্ষমতা দিনহাটা কলেজ এর নেই তা আমরা কয়েক বছর থেকে বলে আসছি। কিন্তু বর্তমান সরকার শিক্ষা বিষয়ে যে কোন ভাবেই আগ্রহী নন তা দিনহাটার নতুন কলেজ ঘোষণার পর ৩ বছর অতিক্রান্ত হতে চললে তার কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্পষ্ট। অথচ ১ কোটি টাকা দিনহাটার মহানুভব ব্যক্তি রামচন্দ্র সাহা মহাশয় কলেজ করার জন্য দান করলেও কেন সরকার এখনো কলেজ করছে না তা জনসমক্ষে বলা উচিৎ। আমরা আবারও কলেজের দাবীতে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবো।"