UUPTWA এর ডাকে ২৬ শে জুলাই বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় রক্তদান ও বৃক্ষরোপন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হলো





গৌতম সাহা,বর্ধমানঃ

গত বছর ২৬ শে জুলাই যখন সারা দেশ কার্গিল বিজয় দিবস পালন করছে ঠিক সেই দিনেই UUPTWA এর অহিংস তীব্র আন্দোলনের ফলে সরকার বাধ্য হয়েছিলো অনৈতিক ভাবে বদলি করা ১৪ জন শিক্ষক- শিক্ষিকাদের বদলি অর্ডার বাতিল করতে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী নতুন বেতনক্রমের সংশোধিত অর্ডার প্রকাশ করতে। তাই ২৬ শে জুলাই দিনটি প্রাথমিক শিক্ষক তথা বঞ্চিত সমস্ত শিক্ষক সম্প্রদায়ের কাছে একপ্রকার বিজয় দিবস হিসাবেই মান্যতা পেয়েছে।

জলকামান,পুলিশের লাঠি, লাথি খাওয়া,জেলবন্দী হওয়া তথা অমরণ অনশনের মতো জীবন বাজি রাখা কর্মসূচী সহ যে লড়াই আন্দোলন উস্থিয়ানরা করেছিলেন তার ফলে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনায্য বদলীর অর্ডার পরিবর্তন তথা বেতনক্রম PB-2 থেকে আজ PB-3 তে উত্তীর্ণ করা গেছে। সুতরাং বলা বাহুল্য পরিণতি পেয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষকদের দীর্ঘ দুবছরের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনটির। 

তাই ২৬ শে জুলাই দিনটি প্রাথমিক শিক্ষক সম্প্রদায়ের কাছে এক স্মরণীয় দিন। এই বিশেষ দিনটিকে UUPTWA সংগঠন জেলায় জেলায় উৎযাপন করল মানব কল্যানকারী মহৎ সামাজিক কাজ যথা বৃক্ষরোপন ও রক্তদান শিবির অায়োজনের মাধ্যমে। ২৬ শে জুলাই যে সমস্ত জেলা পুলিশ পারমিশন পায়নি তাদের ২৮ শে জুলাই এই কর্মসূচী নিতে বলা হয়েছিল। গত ২৬ শে জুলাই বেশ কয়েকটি জেলায় সাফল্যের সঙ্গে সেটি সম্পন্ন হয়েছে। আজকে কয়েকটি জেলায় এই কর্মসূচী পালিত হলো। এরকম একটি হল জেলা পূর্ব বর্ধমান জেলা। এই জেলার UUPTWA সংগঠন এবং লায়ন্স ক্লাব অফ হাটগোবিন্দপুর মিলন এর যৌথ উদ্যোগে হাটগোবিন্দপুরে চড়কতলায় রক্ত দান শিবির অনুষ্ঠিত হলো। রক্তদান শিবিরটি পরিচালনা করলেন দুর্গাপুরের গৌরী দেবী হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটউট এ্যান্ড ব্লাডব্যাংক।হাটগোবিন্দপুরের নিকটবর্তী চাকুন্দি, নবস্থা, পারহাটি, সাতগাছিয়া প্রভৃতি এলাকার শিক্ষক- শিক্ষকারা করোনা ভয় কে জয় করে এই শিবিরে এসে রক্তদান করে গেলেন। করোনা পরবর্তী লকডাউন পরিস্থিতির ও সামাজিক দুরত্ত্ব বজায় রাখতে সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী গৌরী দেবী হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটউট জানিয়েছিলেন তারা মাত্র 25 ইউনিট পর্যন্ত রক্ত সংগ্রহ করবেন কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে তার চাইতে বেশি রক্ত দাতার সমাগম সকলের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। পূর্ব বর্ধমান জেলাতে UUPTWA এর পক্ষ থেকে এটাই ছিল প্রথম রক্তদান শিবির। মহামারী পরিস্থিতিতে এই রক্ত দান শিবিরে সকলের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের জন্য জেলার কনভেনর মাধাই চন্দ্র মণ্ডল সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং তিনি একজন অনশনকারী হয়েও নিজে রক্ত দানের মাধ্যমে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। রক্তদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জেলার আর এক অনশনকারী পীয়ূষকান্তী রায়।

মহামারী পরিস্থিতিতে এই ধরনের শিবিরের আয়োজন করা খুব সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও জেলার কনভেনর মাধাই চন্দ্র মণ্ডলের নিরলস প্রচেষ্টাতে সামাজিক সুরক্ষা, মাস্কের ব্যাবহার ও স্যানিটাইজের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই প্রথম রক্তদান শিবিরটি সফল ভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। UUPTWA এর যে কোনো কাজই সমাজের বুকে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তা আগে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। আজকের এই শিবিরে সংগঠনের এক সহযোদ্ধা তার বাবার সঙ্গে রক্ত দান শিবিরে এসেছিলেন।  ওই শিক্ষক মাত্র দশ দিন আগে অন্য শিবিরে রক্ত দান করেছেন, তাই উনি রক্ত দিতে পারবেন না সেটা শুনে তাঁর বাবা  রক্ত দানে ইচ্ছুক একথা জানান এবং অনুরোধ করেন।কিন্তু ওনাকে বিরত করার চেষ্টা হলেও উনি রাজি হলেন না ফলে ওনার জেদের কাছে সকলকে হার মানতে হলো। প্রণম্য সেই পিতা, শিক্ষকদের তথা সমাজকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেলেন। সকল রক্তদাতা কে UUPTWA,পূর্ব বর্ধমান জেলা শাখার পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।ধন্যবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি সন্দীপ ঘোষ মহাশয়। তিনি জানান করোনা পরিস্থিতি অনুযায়ী বেশ কয়েকটি জেলা এখনও এই রকম শিবির আয়োজনের সম্মতি পাননি কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হলে কিছু দিনের মধ্যেই সেই জেলায় শিবির গুলি অনুষ্ঠিত হবে।