.
প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বচ্ছ ও ধারাবাহিক হওয়া দরকার এবং ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ছোট করে দেখা উচিত্‍ নয় রাজ্যের। :  IMCT প্রধান অপূর্ব চন্দ্র 
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব সিংহকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, এ রাজ্যে কোভিডে মৃত্যুর হার ১২.৮ শতাংশ, যা গোটা দেশের নিরিখে সর্বোচ্চ।
করোনা পরিস্থিতির জেরে সারা দেশ আতঙ্কিত। কেন্দ্র সরকারের তরফে করোনা পরিস্থিতি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রজ্যে আসা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপান উতার চরমে পৌঁছে যায়। একে একে রাজ্য ও কেন্দ্র মুখ্যসচিবের চিঠি বিনিময়ও হয়। ফিরে যাওয়ার আগে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দিয়ে তীব্র অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন ওই কেন্দ্রীয় টিমের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। 

প্রায় দুই সপ্তাহ রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নজরদারি চালায়। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণের শেষ দিনে IMCT প্রধান অপূর্ব চন্দ্র রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির চিত্র লিখিত আকারে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেই জানা গেছে। সেই চিঠিতে IMCT প্রধান অপূর্ব চন্দ্র লেখেন, "প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বচ্ছ ও ধারাবাহিক হওয়া দরকার এবং ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ছোট করে দেখা উচিত্‍ নয় রাজ্যের।" এছাড়াও, এই রিপোর্টে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন তিনি।পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে কত জন আক্রান্ত হয়েছেন বা কতজন মারা গিয়েছেন তা নিয়ে অসঙ্গতি ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে জানান।

চিঠিতে তিনি বলেছেন, আমরা দেখেছি ৩০ এপ্রিল রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যু এ বার থেকে দৈনন্দিন পরিসংখ্যানে স্থান পাবে। স্বচ্ছতা বজায় রাখার উদ্দেশে এটা বড় পদক্ষেপ ঠিকই। কিন্তু এর থেকে আর একটা বড় ছবি পাওয়া যাচ্ছে। তা হল, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে ৮১৬ টি কোভিড পজিটিভ কেস পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে মারা গিয়েছিলেন ১০৫ জন। যার অর্থ পশ্চিমবঙ্গে কোভিডে মৃত্যুর হার ১২.৮ শতাংশ। যা গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই চড়া মৃত্যুর হার স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে যে পশ্চিমবঙ্গে টেস্টিং কম হচ্ছে এবং নজরদারিও অতিশয় দুর্বল।

রাজ্য সরকার হাসপাতালগুলিতে আরও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করুক। দরকার হলে অতিরিক্ত সময় কাজ করার জন্য তাদের ভাতা দেওয়া হোক বলেই মুখ্যসচিবকে চিঠিতে জানান কেন্দ্রীয় দল।
কেন্দ্রীয় দলের মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধেও অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন। দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র বলেছেন, আমি আপনাকে সাতটি আর বিভিন্ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে ৪ টি চিঠি লিখেছি। কোনও জবাব পাইনি। আমাদের এটাই মনে হচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় টিমের বিরোধিতা করার মানসিকতা নিয়ে চলছিল। দেশের অন্য রাজ্যেও কেন্দ্রীয় টিম গিয়েছে। কোনও রাজ্যে এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি।

করোনা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে রাজ্যকে স্বচ্ছতা বজায় রাখা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কোভিড নিয়ে কনটেনমেন্ট এলাকাগুলিতে নজরদারি প্রসঙ্গেও রাাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় দল। অপূর্ব চন্দ্র লিখেছেন,'' রাজ্য দাবি করেছিল যে তাঁদের অত্যন্ত সুসংহত এবং শক্তিশালী নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দু'সপ্তাহ সফর সময়ের মধ্যে চারটি জেলায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষের উপর নজরদারির ক্ষেত্রে যে বিশাল পরিকাঠামো দরকার তা দেখতে পাইনি।' বলা হয়েছে, নিয়মিত নজরদারি রাখলে যে বিপুল তথ্যভান্ডার থাকার কথা, সেই ডেটাবেস থাকার কোনও প্রমাণ তাঁরা দেখতে পাননি।

সমালোচনার পাশাপাশি, রাজ্যের সাম্প্রতিক কয়েকটি উদ্যোদের প্রসংশাও করা হয়েছে অপূর্ব চন্দ্রের এই চিঠিতে। কোভিড আক্রান্তের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৩০ এপ্রিল রাজ্যের ঘোষণার প্রশংসা করা হয়েছে। ওই দিন মুখ্যসচিব ঘোষণা করেন, যে হাসপাতালের চিকিত্‍সকরাই মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেট দেবে। রাজ্যের এই ঘোষণাকে কোভিড পরিসংখ্যান নিয়ে স্বচ্ছতা আনার পথে একটা বড় পদক্ষেপ বলে বর্ননা করে হয়েছে। রাজ্যের ৬ টি পরীক্ষাগারে পুল টেস্ট শুরু করা নিয়েও প্রশংসা করা হয়েছে রাজ্যের উদ্যোগের।