বদলে যাওয়া সময় , অসাধু মন বৃত্তি আর আমাদের মধ্যবিত্ত যাপন । শেষ কোথায় ? 
শুভাশিস দাশ 


পৃথিবী আজ এক চরম সংকটে । সভ্যতাকে পদতলে চেপে দাপিয়ে বেরাচ্ছে এক ভয়ংকর ভাইরাস যার নাম করোনা । চিনের উহান শহরে যার উত্পত্তি স্থল । 

সব ঠিকঠাক চলছিল । দু হাজার উনিশ শেষে আমাদের যে বার্তা আসলো তা রীতিমত ভয়ের , আতংকের ! 

আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে এই করোনা সংকট আরও এক নতুন সংকটের সৃষ্টি করেছে । বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে ভারতবর্ষের তুলনা করা বাতুলতা মাত্র কিন্তু আমাদের এই দেশে যেমন সাধুসন্ত দের বাস তেমনি চোর চোট্টাদেরও অন্ত নেই । 


বলতে দ্বিধা নেই যে দেশে শিশু খাদ্য চুরি হয় সেদেশে এই সংকট কালে যে কিছু হবে না তা না ভাবার কোন কারণ নেই । 

এক শ্রেণীর অসাধু লোক এই সংকট কালে মুনাফা লুটে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে । নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে জীবনদায়ী ঔষধ নিয়ে কালো বাজারি শুরু করে দিয়েছে । 

সেসব তো গেলো এবার আসি রিলিফ চুরির কথায় । ত্রাণ চুরি এটা কোন নতুন বিষয় নয় । আমাদের দেশে এবং রাজ্যে যখনই কোন সংকট দেখা দিয়েছে তখনই চুরির ঘটনা এসেছে সামনে । কি বন্যা কি ঝঞ্ঝা কি মহামারী ! 


দেশের পঞ্চায়েত রাজ কায়ম আছে । একেবারে মাটির মানুষের কাছে সরকারি সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য এর চেয়ে আর সহজ মাধ্যম নেই । গ্রামের মানুষ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি জানবেন তাঁর অঞ্চলে কজন মানুষ আছেন , কজন স্বচ্ছল আর কত জন অস্বচ্ছল । 


কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই দু একজন বাদ দিলে বাকী প্রতিনিধিরা কেবল আশায় থাকেন কখন সরকারি সাহায্য আসবে পঞ্চায়েতের ঘরে । 


সরকারি সাহায্যেই কোপ পড়ে আর তো রিলিফ ? 


খবরের কাগজে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় হরফে ছাপা হচ্ছে চাল চুরির কথা । অমুক বিধায়ক কিংবা অমুক প্রধান এর বিরুদ্ধে আসছে চাল চুরির অভিযোগ । 


এদিকে করোনা সংকটে যে শ্রেণীটা প্রায় নেতিয়ে পড়েছে তাঁরা মধ্যবিত্ত । 


একমাস দুদিন পর বাজারের পথে দেখা মিললো আমাদের শহর ঘেঁষা ভিলেজ ওয়ানের ছোট্ট দোকানী পলাশ রায়ের সাথে । আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো কাকু আর যে চলে না । 


দোকান খুলতে পারছিনা । পুঁজি শেষ । এখন খাবো কী ? এঁরা মধ্যবিত্ত । 


কিছু বলতে পারিনি পলাশ কে । ওর ছোট্ট পানের দোকান । চারজনের সংসার । কী করে চলবে ? এরা নিজেরা করে খায় , লোকের কাছে হাত পাততে লজ্জা করে বৈকি ! 


আমাদের দিনহাটায় লক ডাউনের পরদিন থেকে দেখছি সরকারি উদ্যোগে লঙ্গর খানা খুলেছে । দু বেলা পেট পুরে খাবার ব্যাবস্থা হয়েছে সেখানে কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ আছে যাঁরা অভাবী নয় , তাঁদের আনাগোনা ভাবিয়ে তুলছে । এই শ্রেণীর মানুষগুলো সকাল বিকেল চাল সংগ্রহ করছে , পাশাপাশি দুবেলা লঙ্গরখানায় দিব্যি সাটিয়ে যাচ্ছে । আর প্রকৃত যাঁরা অভুক্ত তাঁরা কিন্তু অনাহারেই দিন কাটাচ্ছে । এই সময় এই কথা গুলো হয়তো কারো ভালো নাও লাগতে পারে কিন্তু এটাই বাস্তব । অভাবী মানুষজন খাচ্ছেন তবে তারা হাতে গোনা । 


লেখলিখির মানুষ হিসেবে এই লক ডাউন সময়ে বাইরে খবরের জন্য বেরিয়ে এসব নজরে আসছে । 


প্রশাসন তৎপর কিন্তুু তাঁরা বুঝবে কী করে ? কে অভুক্ত আর কে খেয়ে আছে ? 


পুলিশ পার্সনরা তাঁদের সবরকম সহায়তা দিচ্ছেন । বেশ কিছু মানবিক বোধের সংস্থা এগিয়ে এসেছে অভুক্ত দের মুখে অন্ন তুলে দিতে । কিন্তু আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ঘুণপোকা বাসা বেঁধেছে সে বাসা কে ভাঙবে ? 


আর কতদিন চলবে এই লক ডাউন কেউ উত্তর দিতে পারবেন না । ধরে নিই আরো মাস খানেক এবং তারপরও আস্তে আস্তে উঠবে এই লক ডাউন কিন্তু ততদিনে করোনা ভাইরাসের কারণে নয় মানুষ মরবে অপুষ্টির অভাবে এবং অনাহারে । 


' অভাবে স্বভাব নষ্ট ' এই কথাটি ফিরে এলে বাড়বে চুরি ডাকাতি ছিনতাই এর মতো ঘটনা । কেননা পাঁচশ বা হাজার টাকা দিয়ে করোনার খিদে মেটানো যাবে না । 


এর মধ্যেই শুরু হয়েছে আত্মহননের প্রচেষ্টা । রেশন কিংবা শ্রমিকদের অনুদান দিয়ে এই সংকট মোকাবেলা করা হয়তো কিছুটা সম্ভব কিন্তু সার্বজনীন এই দুর্যোগ কাটতে হলে আগে নিজেদের স্বচ্ছ হতে হবে । দল নয় , রাজনীতি নয় চাই দু মুঠো ভাত অভুক্ত দের মুখে । 


করোনার সংকট কালে আমরা অনেক কিছুই শিখলাম । অনেক পুরনো জিনিস আবার ঝালাই করে নিলাম । 


এই সংকট একদিন কেটে যাবে । কিন্তু একটা শ্রেণী আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না । যাঁর নাম মধ্যবিত্ত । কেননা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে তা একমাত্র ভবিষৎই বলে দেবে । 


কী জানি এর শেষ কোথায় ?