Role of family towards Children in the current situation.
শিশুরা ভালোবাসার নিশ্চয়তা চায়

একটা সুন্দর পরিবার । মা, বাবা, দাদু, ঠামি, ভাই, বোন – সবাইকে নিয়ে সুখের সংসার । বাড়ীতে একরত্তি ছোট্ট মেয়ে রিয়া (কাল্পনিক)। বয়স চার , সবার ছোট । সপ্তাহের কাজের দিনগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বড়রা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে । বাবা চাকরীতে চলে যায়, দাদু বন্ধুদের সাথে গল্প করতে যান । মা ঘরে বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকে । রিয়া সারাদিন সবাইকে পায় না ।মা আর ঠামিকে অনেকটা সময়ই পায় । কাজ থেকে ফিরে রাত্রে বাবা সময় দেয় । বিকালে  দাদাকে কিছুটা পাওয়া যায়। মোটকথা,  খুব কমসময়ের জন্যই সবাই একসাথে থাকে । বিভিন্ন সময়ে রিয়া বিভিন্ন জনকে পায় । রিয়ার মন ভরে যায় । আশায় থাকে, এই সময় তো বাবা আমাকে আদর করবে !

রবিবারটা তাই ভালো দিন । কিন্তু সপ্তাহে মাত্র একবার আসে । সেইরকম সুযোগ কিন্তু এসেই গেলো -বর্তমান পরিস্থিতিতে ।ঘরে বন্দী সবাই ।মা, বাবা, দাদু, ঠামি আর দাদা। কি মজা ! রিয়াও খুশী। বাড়ীর সকলেই খুব খুশী।

কিন্ত সপ্তাহ দুয়েক যওয়ার পর থেকেই সুরটা বেসুরো হয়ে গেল। সবাই রিয়াকে ভালোবাসতে চায় - যার যার নিজের মতো করে ,যার যার পছন্দসই সময়ে। বড়দের মধ্যে ঠোকাঠুকি লেগে যাচ্ছে। এই ছোট্ট বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি, রাগারাগি। রিয়া দেখছে - বাবা মাকে বা ঠামিকে বিচ্ছিরি ভাবে বকছে, বা উল্টোটাও ঘটছে। দাদাকে বকুনি খেতে হচ্ছে। এমনকি কখনও  কখনও রিয়াও বকুনি খাচ্ছে। বড়রা বকার সময় চোখগুলো এমন হয়ে যাচ্ছে যে রিয়ার ভয় করছে। রিয়া হিংসাকে দেখছে , আবার হিংসার শিকারও হচ্ছে। 

মনস্তত্ত্বের ভাষায় পারিবারিক হিংস্রতার পরিবেশ তৈরী হচ্ছে। আমাদের এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এটা ভাববার কোনো কারণ নেই যে একজন খারাপ মানুষই হিংস্র আচরণ করতে পারে। একজন স্বাভাবিক মানুষও এই আচরণ করতে পারে , যেমনটা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে । ঘরের মধ্যে একাধিক মানুষ দিনের পর দিন বন্ধ থাকার ফলে বহির্জগতে মনের ভাব  প্রকাশে বঞ্চিত হচ্ছে। জমা ক্ষোভ বাড়ীর অন্য সদস্যদের উপর গিয়ে পড়ছে। সেই ক্ষোভের সংঘাতের দৃশ্য রিয়াকে বিচলিত করছে। কখন কখন তার কিছুটা ফুলকি রিয়ার গায়ে গিয়েও পড়ছে। 

এতে কিন্তু রিয়ার ক্ষতি হতে পারে। পারিবারিক হিংস্রতার সাক্ষী বা শিকার হওয়ার ফলে মোটিমুটি পাঁচ বছরের নীচের বাচ্চাদের  কি কি অসুবিধা হতে পারে বলছি :-
• ঘুম এবং খাওয়ার অসুবিধা।
• নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া;মনেরআবেগ প্রকাশে অনীহা ।
• একা থাকার দুঃশ্চিন্তা।
• অঝোরে কেঁদে চলা।
• যে দক্ষতাগুলি অর্জন করেছিল , সেগুলি হারিয়ে ফেলা ; যেমন টয়লেট ব্যবহার।
• আগের আচরণে ফিরে যাওয়া। যেমন বোতলে দুধ খেতে চাওয়া।
• অতিরিক্ত রাগ দেখানো।
• খেলাতে হিংস্রতার আচরণ, যেমন পুতুলকে জোরে জোরে আছাড় মারা।
ইত্যাদি।

তাই , পরিস্থিতিক মেনে নিয়ে খুশী মনে থাকুন। আগে বাইরের জগতকে কেন্দ্র করে নিজেকে সাজাতেন , এখন নিজেকে কেন্দ্র করে বাইরের জগতকে সাজিয়ে নিন। পরিবারের সম্পর্ক গুলোকে নিয়ে মজা করুন। অন্যের মতকে প্রাধান্য দিন। রাগের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাণখোলা হাসি হাসুন। আপনার খুশীর এ নীল আকাশ রিয়াকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

সবচাইতে বড় কথা , রিয়ার কাছে ভালোবাসার অর্থ  - ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকা। কখন বাবা আসবে ? কখন মায়ের হাত খালি হবে ? কখন দাদা  স্কুল থেকে ফিরবে ?নিজের পুতুল খেলার ঘর আর এই সবের প্রতীক্ষা নিয়ে রিয়ার জগত।  ঘরে আছেন বলে রিয়াকে যখন তখন সবাই মিলে আদর করতে যাবেন – এটা ঠিক নয়। রিয়াকে নিজের পুতুল খেলার ঘরে , নিজের মনের জগতে থাকতে দিন। ছোট্ট আদর করে চলে যান। দেখবেন, বড়দের কাজে ওকে নিয়ে কোনো অশান্তি তৈরী হচ্ছে না। ওকে ভালোবাসার নিশ্চয়তা দিন। ওর মনে সেই বিশ্বাস থাকতে দিন – বড়রা নিজেদের নিয়ে ঠিকঠাক আছে ; যাকেই ডাকা যাবে , তখনই তাকে পাওয়া যাবে।কেউই ভালোবাসা জোর করে চাপিয়ে দেবে না।( সত্য ঘটনার আলোকে।)

Dr. Nita Mitra Chanda
Honorary Coordinator of Find_Mind, Siliguri
(Psychological Research and Counseling Unit)
And
Associate Professor, Siliguri B.Ed.College