সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়: শিশুর জাতিপত্রে মায়ের পরিচয়ই যথেষ্ট, বাবার অনুপস্থিতি বাধা নয়
ভারতের বিচারব্যবস্থায় এক নিঃশব্দ কিন্তু যুগান্তকারী পরিবর্তনের দিন লেখা হয়ে গেল। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট এমন এক রায় দিল, যা শুধু আইনের পাতায় নয়—অগণিত একক মায়ের সন্তানদের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়ে দিল। এই রায়ে বলা হয়েছে, কোনও শিশুর জাতিপত্র পেতে বাবার পরিচয় বাধ্যতামূলক নয়; মায়ের জাতিগত পরিচয়ই যথেষ্ট, যদি সন্তান তাঁর সঙ্গেই বড় হয়ে ওঠে।
ঘটনার সূত্রপাত পুদুচেরির এক মা ও তাঁর কন্যাকে ঘিরে। মা নিজে আদি দ্রাবিড় তপশিলি জাতিভুক্ত, কিন্তু বাবার পরিচয় নেই বা সন্তানের জীবনে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। প্রশাসনিক দফতরে গিয়ে সেই মা শুনেছিলেন, “জাতিপত্র দিতে হলে বাবার পরিচয় চাই।” এই অস্বীকৃতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই গিয়ে পৌঁছয় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি–র বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানায়, জাতি কোনও যান্ত্রিক সূত্র নয়, বরং সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক পরিচয়। যদি কোনও শিশু মায়ের সংস্কৃতি, সংগ্রাম ও জীবনযাপনেই বড় হয়, তবে তার জাতিপত্রে মায়ের পরিচয়ই যথার্থ।
আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, পিতৃতান্ত্রিক ধারণার অন্ধ অনুসরণে বহু শিশু এতদিন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একা মা হওয়া মানেই দুর্বলতা নয়; বরং সেই মায়ের কাঁধেই সংসার, সমাজ আর সন্তানের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে থাকে।
এই রায় যুক্তি ও সংবিধানের আত্মা মেনে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতিরা বলেন, যেখানে বাবা অনুপস্থিত বা অচেনা, সেখানে মায়ের সামাজিক পরিচয়ই শিশুর প্রকৃত ভিত্তি। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই শিক্ষা, সংরক্ষণ বা অন্যান্য সুযোগের দরজা খুলে দেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত একক মায়েদের জন্য শুধু স্বস্তি নয়—এটা সম্মানের স্বীকৃতি। যেসব পরিবার চেনা ছকের বাইরে, যেসব শিশুর বেড়ে ওঠা শুধুই মায়ের আঁচলে, তাদের আর বারবার প্রমাণ দিতে হবে না যে তারা “সম্পূর্ণ”।
এই রায়ের প্রভাব পড়বে বহু স্তরে—স্কুলে ভর্তি, সরকারি সুবিধা, সংরক্ষণ, জাতিপত্র—সব জায়গায়। প্রশাসনিক ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে বুঝতে শিখবে, সমাজ বদলায়, পরিবার বদলায়, আর আইনের কাজ সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলানো ।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊