২৮ বছর নিখোঁজ থাকার পর ভোটার তালিকায় ফিরলেন জগবন্ধু , পরিবারে ফিরে এল বিস্ময়ের ঝড়
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদাহ গ্রামে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া চলাকালীন এক অভাবনীয় ঘটনা সামনে এসেছে। ২৮ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা জগবন্ধু মণ্ডল হঠাৎ করেই আবির্ভূত হয়েছেন, যাঁকে তাঁর পরিবার বহু বছর আগে মৃত ধরে নিয়ে শেষকৃত্য পর্যন্ত সম্পন্ন করেছিল।
১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারির এক শীতল সকালে জগবন্ধু বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবার বহু জায়গায় খোঁজ করেছে, এমনকি জ্যোতিষীর পরামর্শও নিয়েছে। শেষপর্যন্ত তাঁর স্ত্রী সুপ্রিয়া মণ্ডল স্বামীর আত্মার শান্তির জন্য শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন এবং দুই সন্তানকে একা লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তবে সোমবার, ভোটার আইডি কার্ড পুনরুদ্ধারের জন্য জগবন্ধু নিজেই হাজির হন বাগদাহ গ্রামে। তাঁর স্ত্রী এবং বাবা বিজয় মণ্ডল তাঁকে চিনে ফেলেন, চোখে জল আসে সুপ্রিয়ার। শুধু মুখ নয়, কণ্ঠস্বরেও তিনি স্বামীকে শনাক্ত করেন।
জগবন্ধু জানিয়েছেন, তিনি ছত্তিশগড়ে দীর্ঘদিন ছিলেন। চাকরি হারানোর পর তিনি নিজের জন্মস্থানে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর দাবি, বাঁকুড়ার ভোটার তালিকায় এখনও তাঁর নাম রয়েছে। যদিও বাঁকুড়ায় তাঁর নামের পাশে “সুলেখা মণ্ডল” নামে এক মহিলার নাম থাকায় পুনর্বিবাহের সন্দেহ তৈরি হয়, তিনি তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি গুজরাট, মুম্বাই ঘুরে অবশেষে ছত্তিশগড়ে স্থায়ী হয়েছিলাম।”
স্থানীয় বুথ কমিটির সদস্য সমীর গুহ জানিয়েছেন, এসআইআর (Special Intensive Revision) চলাকালীন ভোটার তালিকায় নাম রাখতে হলে জগবন্ধুর আসল ভোটার আইডি এবং জমির কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। ২০০২ সালের পর থেকে তাঁর নাম তালিকায় নেই, যদিও তাঁর বাবার নাম এখনও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিএলও (Booth Level Officer) জানিয়েছেন, ২৮ বছর ধরে কোনো সরকারি প্রমাণ না থাকায় জগবন্ধুর দাবি যাচাই করা এবং তাঁর ভোটার মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই ঘটনাটি ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় বিরোধীদের তোলা অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন আলো ফেলেছে। বিহার নির্বাচনের আগে ভোটার শুদ্ধিকরণ নিয়ে যেমন বিতর্ক শুরু হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে এই ঘটনা তা আরও জটিল করে তুলেছে। নিখোঁজ ব্যক্তির ফিরে আসা শুধু প্রশাসনিক নয়, সামাজিক স্তরেও এক গভীর আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊