রামমোহন রায়কে ‘ব্রিটিশদের দালাল' বলে বঙ্গ বিজেপিকে চাপে ফেলেছে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী!
বাঙালি মনীষী, বাংলার নবজাগরণের দূত রাজা রামমোহন রায়কে ‘ব্রিটিশদের দালাল’ বলে মন্তব্য করে রাজ্যের পদ্মশিবিরের চাপ বাড়িয়ে দিলেন বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী। প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ওই মন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার। কিন্তু তার এই মন্তব্য যে বাংলায় কতটা ব্যাকফুটে ফেলতে পারে বিজেপিকে তা কি তিনি আদৌ জানতেন?
বিরসা মুন্ডার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে পারমার দাবি করেছিলেন, ঔপনিবেশিক শাসনকালে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস পরিবর্তনের জন্য যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামমোহন। তাঁর মতে, ‘‘বাংলা এবং আশপাশের অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে সে সময় মানুষের বিশ্বাস পরিবর্তনের জন্য একটি চক্র কাজ কাজ করছিল। ব্রিটিশেরা বেশ কয়েক জন ভারতীয়কে ভুয়ো সমাজ সংস্কারক হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন তাঁদের মধ্যে এক জন, যিনি ব্রিটিশদের দালাল হিসাবে কাজ করতেন।’’
রাজা রামমোহন রায়কে নিয়ে এমন মন্তব্যে তোলপাড় রাজনীতিতে। সমাজ এবং ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে সারা বিশ্বে সুপরিচিত রাজা রামমোহন রায়। রামমোহনই প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় মনীষী, যিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের আড়ালে থাকা জ্ঞানবিজ্ঞান এ দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। যদিও ব্রিটিশদের শোষণনীতি তিনি কখনও সমর্থন করেননি। এক আধুনিক ভারতেরই স্বপ্ন দেখেছিলেন রামমোহন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের নেপথ্যে কান্ডারিও ছিলেন তিনি। তাঁর সম্পর্কে এমন মন্তব্য কোনো বাঙালিই মানতে পারবে না। এটা বলাইবাহুল্য । স্বাভাবিক ভাবেই মন্ত্রীর সেই মন্তব্যকে ‘অস্ত্র’ করেছে তৃণমূল। ‘বাঙালি বিদ্বেষী’ বলে বিজেপি-কে তারা যে তকমা দিয়ে থাকে, তা আরও জোরালো করছে তৃণমূল।
ভোট মুখী বঙ্গে ‘বাংলা এবং বাঙালি অস্মিতা’র ভাষ্যকে সামনে রেখেই তৃণমূল লড়াইয়ে নামবে তা স্পষ্ট। এদিকে মন্ত্রীর এরকম মন্তব্যের পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে ধমক খান এমনটাই সূত্রের খবর। তারপর ক্ষমাও চান তিনি। তারপর বঙ্গ বিজেপির তরফে সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই মন্তব্যের নিন্দা করেন।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন থেকে ‘বাঙালি গরিমা’কে হাতিয়ার করছে তৃণমূল। ২০২৪-এর লোকসভাতেও অন্যথা হয়নি। ২০২৬-এও সেই পথেই এগোচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে ভিন্ রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হেনস্থার অভিযোগ, বাংলার প্রতিটি কেন্দ্রে বঞ্চনার অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ, এসাইআর আতঙ্কে রাজ্যে অন্তত ১৫ জনের প্রাণ গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিজেপিকে ‘বাঙালি বিরোধী’ তকমা দিতে ছাড়ছে না তৃণমূল। রাজা রামমোহন রায়কে নিয়ে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর এরকম মন্তব্যের পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিতে থাকে তৃণমূল।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊