২০২৬ সালে অন্তত আটটি ছুটি নষ্ট!
নতুন বছর দোরগোড়ায়, হাতে মাত্র ৩৩ দিন। বছরের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন বর্ষের প্রস্তুতি। অনেকেই ইতিমধ্যেই ২০২৬ সালের ক্যালেন্ডার উল্টেপাল্টে দেখছেন কবে ছুটি, কবে লম্বা উইকএন্ড, আর কোন কোন দিনে মিলতে পারে ঘোরাঘুরির সুযোগ। ঠিক সেই সময়ই রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত হল আগামী বছরের সরকারি ছুটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা।
বৃহস্পতিবার নবান্নের নির্দেশে রাজ্যের অর্থ দফতর একটি বিস্তারিত বিবৃতি জারি করে। তাতে শুধু রাজ্য সরকারি দফতরগুলির ছুটি নয়, কেন্দ্রের Negotiable Instruments Act (NIA) অনুযায়ী ব্যাংক ছুটি এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবভিত্তিক ছুটির দিনগুলিও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফলে সরকারি কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ সকলের কাছেই আগামী বছরের ছুটির খাতা এখন একেবারে পরিষ্কার।
প্রতি বছরই ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ রাজ্য সরকারের ছুটির তালিকা প্রকাশিত হয়। কারণ ছুটির দিনকে কেন্দ্র করেই সাধারণ মানুষ বহু আগেই বার্ষিক পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন কেউ পরিবার নিয়ে দূরের পাহাড়-সমুদ্রে বেড়ানোর সুযোগ খোঁজেন, আবার কেউ উৎসব-অনুষ্ঠানের তারিখ মিলিয়ে কর্মব্যস্ততার মাঝে কিছুটা ছুটি নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তাই ছুটির তালিকা প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল বহু মানুষ।
রাজ্য সরকারি সূত্রের মতে, ছুটির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব, রাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সাধারণ মানুষের সুবিধাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই তালিকাটি প্রকাশিত হতেই কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি একদিকে সরকারি কাজের পরিকল্পনা স্পষ্ট হল, অন্যদিকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর দিনগুলিও এখন ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত হয়ে গেল।
নতুন বছরের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। হাতে যখন কয়েক সপ্তাহ বাকি, তখনই নবান্নের প্রকাশিত এই ছুটির তালিকা আগামী বছরের পরিকল্পনা সাজাতে আরও উৎসাহ জোগাবে বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
এনআই অ্যাক্ট, ১৮৮১ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর প্রতি বছর ছুটির একটি তালিকা তৈরি করে। সেই তালিকা এক এক রাজ্যের জন্য এক এক রকম। ২০২৬ সালের সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য রয়েছে ২৭টি ছুটি। এ ছাড়া, রাজ্য সরকার দিচ্ছে আরও ২৪টি ছুটি। সম্প্রদায়ভিত্তিক মোট দু’টি ছুটির কথা রয়েছে নবান্নের বিবৃতিতে। ২০২৬ সালে মোট আটটি ছুটি নষ্ট হচ্ছে। ওই সমস্ত ছুটির দিন হয় রবিবার পড়েছে, নয়তো দু’টি উৎসব একই দিনে পড়েছে। এনআইএ অনুযায়ী রবিবার এমনিতেই ছুটি থাকে। তাই আলাদা করে ছুটির তালিকায় ওই দিনগুলিকে রাখা হয়নি।
কেন্দ্রীয় আইন অনুসারে ছুটির তালিকা
নববর্ষ: ১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার)
স্বামী বিবেকানন্দ জন্মজয়ন্তী: ১২ জানুয়ারি (সোমবার)
নেতাজিজয়ন্তী: ২৩ জানুয়ারি (শুক্রবার)
সরস্বতী পুজো: ২৩ জানুয়ারি (শুক্রবার)
সাধারণতন্ত্র দিবস: ২৬ জানুয়ারি (সোমবার)
দোলযাত্রা: ৩ মার্চ (মঙ্গলবার)
ইদ-উল-ফিতর: ২১ মার্চ (শনিবার)
রামনবমী: ২৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার)
মহাবীর জয়ন্তী: ৩১ মার্চ (মঙ্গলবার)
গুড ফ্রাইডে: ৩ এপ্রিল (শুক্রবার)
বিআর অম্বেডকরের জন্মদিন: ১৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার)
বাংলা নববর্ষ: ১৫ এপ্রিল (বুধবার)
মে ডে: ১ মে (শুক্রবার)
বুদ্ধপূর্ণিমা: ১ মে (শুক্রবার)
রবীন্দ্রজয়ন্তী: ৯ মে (শনিবার)
ইদুজ্জোহা: ২৭ মে (বুধবার)
মহরম: ২৬ জুন (শুক্রবার)
স্বাধীনতা দিবস: ১৫ অগস্ট (শনিবার)
জন্মাষ্টমী: ৪ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার)
গান্ধীজয়ন্তী: ২ অক্টোবর (শুক্রবার)
মহালয়া: ১০ অক্টোবর (শনিবার)
দুর্গাপুজোর ছুটি: অষ্টমী থেকে দশমী (১৯ অক্টোবর সোমবার থেকে ২১ অক্টোবর বুধবার)
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া: ১১ নভেম্বর (বুধবার)
নানকজয়ন্তী: ২৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার)
বড়দিন: ২৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার)
রাজ্য সরকারের ছুটির তালিকা
সরস্বতী পুজোর আগের দিন: ২২ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার)
শবে বরাত: ৪ ফেব্রুয়ারি (বুধবার)
পঞ্চানন বর্মার জন্মবার্ষিকী: ১৪ ফেব্রুয়ারি (শনিবার)
হোলি, দোলযাত্রার পরদিন: ৪ মার্চ (বুধবার)
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী: ১৭ মার্চ (মঙ্গলবার)
ইদ-উল-ফিতরের আগের দিন: ২০ মার্চ (শুক্রবার)
ইদুজ্জোহার আগের দিন: ২৬ মে (মঙ্গলবার)
রথযাত্রা: ১৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার)
ফাতেহা-দোয়াজ়-দাহাম: ২৬ অগস্ট (বুধবার)
রাখিবন্ধন: ২৮ অগস্ট (শুক্রবার)
বিশ্বকর্মা পুজো: ১৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার)
দুর্গাপুজোর ছুটি: চতুর্থী থেকে লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন পর্যন্ত (১৫ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর)
কালীপুজো (অতিরিক্ত ছুটি): ৯ নভেম্বর (সোমবার) এবং ১০ নভেম্বর (মঙ্গলবার)
ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার পরের দিন: ১২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার)
ছটপুজোর অতিরিক্ত ছুটি: ১৬ নভেম্বর (সোমবার)
ইস্টার স্যাটারডে উপলক্ষে খ্রিস্টানদের ৪ এপ্রিল (শনিবার) ছুটি থাকবে। হুল দিবস উপলক্ষে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় ছুটি পাবে ৩০ জুন (মঙ্গলবার)। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার লোকজন কবি ভানু ভক্তের জন্মদিবস উপলক্ষে ১৩ জুলাই (সোমবার) ছুটি পাবেন।
নষ্ট ছুটির তালিকায় রয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রি, ১৮ অক্টোবর দুর্গাপুজোর সপ্তমী, ২৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজো, ৮ নভেম্বর কালীপুজো, ১৫ নভেম্বর ছট পুজো এবং বীরসা মুন্ডার জন্মদিবস ২০২৬ সালের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রবিবার। তা না হলে এই দিনগুলিতে আলাদা করে ছুটি পাওয়া যেত। এ ছাড়া, নেতাজিজয়ন্তী এবং সরস্বতী পুজো আগামী বছর একই দিনে পড়েছে। বুদ্ধপূর্ণিমা এবং মে দিবস একই দিনে পড়েছে। এখানে দু’টি ছুটি নষ্ট হচ্ছে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊