Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

প্রফুল্ল - ধনঞ্জয় - পান্নালালের পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের জীবন কথা

প্রফুল্ল - ধনঞ্জয় - পান্নালালের পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের জীবন কথা

প্রফুল্ল - ধনঞ্জয় - পান্নালালের পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের জীবন কথা

-সাধন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 

তিনি সুরেন্দ্রনাথ। তাঁর জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল তাঁর কাকা "ভাদুড়ী মহাশয়" অর্থাৎ পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের। মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের রচিত ও সুরারোপিত পরমার্থ সঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ। মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের পথ অনুসরণ করে নিজের জন্য সাধন জীবন বেছে নিয়েছিলেন পরমহংস মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র ননীলাল ভাদুড়ী - পরবর্তীকালের মহান যোগী ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারী। একই পথ অবলম্বন করতে চেয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথও। কিন্তু সন্ন্যাসী হতে যাওয়া সুরেন্দ্রনাথ শেষ পর্যন্ত সংসারেই থেকে যান। সাঁতরাগাছির গুরুপরিবারের নির্দেশে বিবাহ করেন অন্নপূর্ণা দেবীকে। এই সুরেন্দ্রনাথ - অন্নপূর্ণা দেবীরই তিন পুত্র বাংলা সঙ্গীত জগতের তিন নক্ষত্র - সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্য, স্বর্ণকণ্ঠশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং সাধক শিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্য।

সুরেন্দ্রনাথের পিতা প্রতাপচন্দ্র ধনাঢ্য জমিদার পরিবারের সন্তান হলেও সংসার এবং সম্পদ সম্পর্কে ছিলেন আশ্চর্য উদাসীন। শাস্ত্র এবং সঙ্গীতে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। আসলে ভাদুড়ী বংশেই ছিল শাস্ত্র এবং সঙ্গীতের নিরন্তন চর্চা।

সুরেন্দ্রনাথও বংশের এই ধারায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সে যুগে সেতার এবং এস্রাজ বাদক হিসেবে সুরেন্দ্রনাথের যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল।

পূর্বপুরুষের প্রচুর সম্পত্তি বংশানুক্রমে পেয়েছিলেন তিনি। চাকরি করতেন বিএনআর-এ। কিন্তু সম্পত্তি নিয়ে  পারিবারিক অশান্তি শুরু হলে সুরেন্দ্রনাথ চলে আসেন হাওড়ার আমতা-য়। থাকতে শুরু করেন একটি ভাড়াবাড়িতে। সেখান থেকে চলে আসেন বালি বারেন্দ্র পাড়ায়। এখানেই গৃহ নির্মাণ করান সুরেন্দ্রনাথ।

ভাদুড়ী হলেও সুরেন্দ্রনাথ ব্যবহার করতেন ভট্টাচার্য। শোনা যায় - বর্ধমানের মহারাজা এই বংশের কোনও পুরুষকে ভট্টাচার্য উপাধি প্রদান করেছিলেন। সুরেন্দ্রনাথ সেই ভট্টাচার্যই ব্যবহার করতেন।

সন্ন্যাস নেওয়া না হলেও সন্ন্যাসী মন ছিল তাঁর। পূর্বপুরুষের বাণলিঙ্গ শিবের পুজো করতেন তিনি। সাধন ভজনে ব্যয় করতেন দীর্ঘ সময়। তাঁর পূজিত বাণলিঙ্গ শিবের পুজো করতেন তাঁর বড়ো ছেলে লক্ষ্মীকান্তও। বাবা সুরেন্দ্রনাথের মতোই অসাধারণ এস্রাজ বাজাতেন লক্ষ্মীকান্তও। লক্ষ্মীকান্তর অকাল মৃত্যুর পর পরবর্তীকালে গৃহদেবতা বাণলিঙ্গ শিবের আরাধনা করতেন সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্য। কারণ লক্ষ্মীকান্তের চিরবিদায়ের পর প্রফুল্ল ভট্টাচার্যই হয়ে ওঠেন পরিবারের বড়ো ছেলে। সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং পান্নালাল ভট্টাচার্য সুরেন্দ্রনাথের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই ধর্মীয় চেতনা পেয়েছিলেন। তার প্রমাণ তাঁদের সাধন সঙ্গীত।

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ-লক্ষীকান্ত দু’জনেরই অকালমৃত্যু হয়। সুরেন্দ্রনাথের যখন অকাল প্রয়াণ ঘটে তখন পান্নালাল ভট্টাচার্য সাত মাসের মাতৃগর্ভে। প্রফুল্ল ভট্টাচার্যের বয়স তখন মোটামুটি বারো বছর আর ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের বয়েস তখন সাত। হঠাৎ বিপর্যয়ের সেই দিনে দিশেহারা হয়ে পড়েন অন্নপূর্ণা। তবু তিনি ফিরে যাননি স্বামীর জমিদারিতে। ব্রাহ্মণের ঘরের বিধবা হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন প্রত্যেকটি নিয়ম আর শত কষ্টের মধ্যেও মানুষ করেছেন নিজের সন্তানদের। সেখান থেকেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সুরকার হিসেবে প্রফুল্ল ভট্টাচার্য। কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী হয়ে উঠেছেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং পান্নালাল ভট্টাচার্য। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর এ এক বৈধব্য যন্ত্রণাপীড়িত নারীর কঠিন সংগ্রামের পর ঘুরে দাঁড়ানো। 

এই লেখাটি লেখকের অপ্রকাশিত রচনা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code