বন্ধুকে বাঁচাতে প্রাণ দিল সাহিল — শোকের ছায়া
মিরিকের কালীপুজো রাত, যা সাধারণত আলো, আনন্দ আর উৎসবের রঙে রাঙানো থাকে, এবার মুহূর্তেই পরিণত হলো এক গভীর শোকের রাতে। ২২ বছরের তরুণ সাহিল রাই বন্ধুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেলেন জীবনের পথ থেকে। তাঁর এই আত্মত্যাগ শুধু মিরিক নয়, গোটা পাহাড়বাসীর হৃদয়ে এক অনন্য মানবতার দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিরিক বাজারের বাসিন্দা সাদিপ দর্জি মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে মিরিক লেকে ঝাঁপ দেন। ঘটনাটি চোখে পড়তেই সাহিল এক মুহূর্তও দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়েন বন্ধুর পিছু পিছু। সাহসিকতার সঙ্গে জলের তলা থেকে বন্ধুকে টেনে তুলতে সক্ষম হলেও, নিজের প্রাণ আর রক্ষা করতে পারেননি তিনি। বন্ধুকে বাঁচিয়ে সাহিল নিজেই হারিয়ে গেলেন চিরতরে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর স্থানীয় পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স ও উদ্ধারকারী দল সাহিলের নিথর দেহ উদ্ধার করে মিরিক ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান, যেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, সাদিপকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।
সাহিল রাই মিরিকের থারবু এল.ডি. বাহাদুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর এই আত্মত্যাগে শোকস্তব্ধ গোটা পাহাড়। প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সাহিল ছিলেন শান্ত স্বভাবের, সদালাপী এবং সর্বদা সাহায্যপ্রবণ — যিনি বিপদের মুহূর্তে কখনও পিছিয়ে পড়েননি। তাঁর সাহসিকতা ও মানবিকতা আজ মিরিকের প্রতিটি মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছে।
মিরিকের মানুষ বলছেন, “যে সময়ে সবাই নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত, সেই সময়ে সাহিল নিজের জীবন দিয়ে বন্ধুকে ফিরিয়ে এনেছে — এমন দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা যায়।” এই কথাগুলো যেন সাহিলের আত্মত্যাগের গভীরতা আরও স্পষ্ট করে তোলে।
বছরের শেষে যখন পাহাড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্ঘটনার স্মৃতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন সাহিলের মৃত্যু যেন আরও একটি গভীর ক্ষত তৈরি করল। তবে তাঁর সাহসিকতা, মানবিকতা এবং বন্ধুত্বের নিদর্শন চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে মিরিকবাসীর মনে। সাহিল রাই আজ নেই, কিন্তু তাঁর গল্প রয়ে যাবে — এক তরুণের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের গল্প, যা সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊