Coochbehar Rasmela: রাসমেলা ঘিরে রেলের বিশেষ ব্যবস্থা, অথচ বঞ্চিত কোচবিহার
৩০শে অক্টোবর, ২০২৫, বৃহস্পতিবার
প্রতি বছর রাস উৎসবকে ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে জনসমাগম হয়, তার সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভারতীয় রেল। তবে এই সুবিধার ভাগাভাগিতে বারবার উঠে আসে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যেকার চিরায়ত বৈষম্যের ছবি। সম্প্রতি, নবদ্বীপধামের রাসমেলা উপলক্ষে পূর্ব রেলের বিশেষ ট্রেন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা এবং রেল পরিষেবার বঞ্চনা।
রাস পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর নবদ্বীপধামে লক্ষাধিক পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ভিড় হয়। এই বিপুল জনসমাগমের সুবিধার্থে পূর্ব রেল বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। রেল সূত্রে খবর, আগামী ৫ এবং ৬ নভেম্বর পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনে একজোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এর আগে দুর্গাপূজা এবং কালীপূজার সময়েও যাত্রীদের সুবিধার জন্য বাড়তি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
- সময়সূচি: আপে ট্রেনটি ব্যান্ডেল থেকে ৫ এবং ৬ নভেম্বর দুপুর ২টোয় ছেড়ে কাটোয়ায় পৌঁছবে ৪টে ১০ মিনিটে। ডাউনে ট্রেনটি কাটোয়া থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়বে এবং রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ব্যান্ডেলে পৌঁছবে।
- সুবিধা: যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এই বিশেষ ট্রেনটি প্রতিটি স্টেশনে থামবে।
এই বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে নবদ্বীপগামী হাজার হাজার যাত্রীর জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর।
অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন উৎসব হলো কোচবিহারের রাজ আমলের রাস উৎসব। উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহত্তম এই মেলাকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকেও ব্যাপক জনসমাগম হয়। কোচবিহার বর্তমানে একটি হেরিটেজ শহর হিসেবে পরিচিত। এই শহরের নামাঙ্কিত একটি রেলস্টেশনও রয়েছে।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, একসময় কোচবিহারের মহারাজার রাজপ্রশাসনের তরফে রাসমেলার সময় বিশেষ প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানো হত। অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষ ট্রেনে চেপে কোচবিহারে আসতেন। গবেষকরা জানান, এই বিশেষ ট্রেন একসময় বাংলাদেশের গিতালদহ থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত চলত।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই বৃহত্তম মেলাকে কেন্দ্র করে রেলের তরফে কোনও বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয় না, যা দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ।
বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থার অনুপস্থিতির পাশাপাশি কোচবিহার শহরের উপর দিয়ে যাওয়া একমাত্র এক্সপ্রেস ট্রেন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসও কোচবিহার স্টেশনে দাঁড়ায় না। ঐতিহ্যবাহী একটি শহর ও রেলওয়ে স্টেশনকে এভাবে এড়িয়ে যাওয়া স্থানীয় মানুষের কাছে বঞ্চনার নামান্তর।
যদি কোচবিহারের রাসমেলাকে কেন্দ্র করে বিশেষ প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু করা হয় এবং এক্সপ্রেস ট্রেনগুলির স্টপেজ দেওয়া হয়, তবে তা শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষের সুবিধা বাড়াবে না, বরং এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় আরও বেশি সংখ্যক মানুষের আগমন নিশ্চিত করত এবং পর্যটন প্রসারেও সহায়ক হত। চিরায়ত ঐতিহ্যবাহী উৎসব এবং হেরিটেজ শহরের প্রতি রেলের এই অবহেলা উত্তরবঙ্গের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊