ছট পুজো কেন করা হয়? ছট পুজোর নিয়মাবলী থেকে পুজোর ইতিহাস...
-ড.শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
সংসারের শ্রীবৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনার এ পুজো দুর্গা পুজোর মতোই চার দিনের। চার দিনের এই পর্বে পূজিত হন সূর্য দেবতা এবং দেবী ষষ্ঠী। প্রথম দিন নহায় খায়, দ্বিতীয় দিন খরনা, তৃতীয় দিন সন্ধ্যা অর্ঘ্য এবং শেষ দিন সূর্যোদয় অর্ঘ্য - এই হল চারদিনের সম্পূর্ণ পর্ব।
নবরাত্রি ব্রতের মতো ছটও পালিত হয় বছরে দুবার। একবার কার্তিক মাসে, আর একবার চৈত্র মাসে। দুটি ক্ষেত্রেই শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে।
প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে বিহার ও উত্তর প্রদেশে এই পুজো হয় মহা সমারোহে। তবে এই পুজোতে আজ অংশ নেন আরও অনেকেই। সেখানেও কথা বলে শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং বিশ্বাস।
ছটপুজো সাধারণত মহিলারাই করে থাকেন। সারা দিন উপবাস রাখতে হয়, শয়ন করতে হয় বাড়ির মেঝেতে। ছটপুজোর দিন বাড়ি ঘর ভাল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। তৈরি করা হয় নানা রকম খাবার। যাঁরা এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা অন্যদের এই পুজো পর্বে স্পর্শ পর্যন্ত করেন না।
প্রচলিত ধারণা, এই ছট পুজোর দিন দেবী ষষ্ঠীর পুজো করা হয় এবং তাঁর নাম থেকেই 'ছট' নামের উৎপত্তি। তবে এই দিন দেবী ষষ্ঠীর পুজোর সঙ্গে সঙ্গে সূর্যদেবেরও পুজো করা হয়।
এই মা ষষ্ঠী ছঠি মাইয়া নামেও পরিচিত। বলা হয় - তিনি ব্রহ্মার মানসকন্যা। কেউ কেউ বলেন - ছটি মাইয়া সূর্যদেবের বোন। কেউ কেউ আবার বলেন, তিনি ছট লক্ষ্মী। অনেকে আবার বলেন- দেবী পার্বতীর ষষ্ঠ রূপ হলেন ছঠি মাইয়া। লোক বিশ্বাস - এই পুজোতে ছঠি মাইয়া ও সূর্যদেবের কাছে যা প্রার্থনা করা হয়, তাই পূরণ হয়। অনেকে বলেন - এই কারণেই তৃতীয় দিনে অস্তগামী সূর্যকে 'সান্ধ্য অর্ঘ্য' এবং চতুর্থ দিনে উদীয়মান সূর্যকে 'ঊষা অর্ঘ্য' নিবেদন করা হয়।
এই ছটপুজো নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত আছে। কথিত আছে, বনবাস থেকে ফেরার পর ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এবং দেবী সীতা সূর্যদেবের আরাধনা করেছিলেন। আবার অন্য কাহিনিতে আছে, পাণ্ডবরা বনবাসে থাকাকালীন অন্নকষ্ট দূর করার কামনায় রাজপুরোহিতের পরামর্শে সূর্যের আরাধনা করেন। রাজা প্রিয়ব্রতর আখ্যান অনুসারে, নিঃসন্তান রাজা প্রিয়ব্রত মহর্ষি কাশ্যপের পরামর্শে যজ্ঞ করেন। কিন্তু রানি মালিনী মৃত সন্তান প্রসব করেন। এরপর ষষ্ঠীদেবীর আশীর্বাদে ঐ শিশু প্রাণ ফিরে পায়। তখন থেকেই রাজা এই দেবীর পুজো শুরু করেন।
উৎসব পর্বের দ্বিতীয় রাত থেকে ছটের ডালা সাজানোর প্রস্তুতি চলে। তারপর বিকেলে জলাশয়ে গিয়ে ডুবন্ত সূর্যের পুজো করা হয়। পুজো শেষে জলাশয়ে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পুজোর ডালায় ফল ছাড়াও থাকে ঠেকুয়া। উৎসবের শেষ সকালে সূর্য ওঠার আগেই ব্রতপালনকারীরা আবার জলাশয়ে যান। সেখানে অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। তারপর পুজো সমাপ্ত হয়। পুজো শেষে বাড়ি আসার পরই ভাঙা হয় দীর্ঘ উপবাস। এই পুজো তাই শুধুমাত্র ব্রত কিংবা সৌর সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের চিহ্ন নয়, বিশ্বাস - ভক্তি এবং সমর্পণের প্রতীকও।
*লেখক পুরাণ গবেষক।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊