বিধানসভায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা জারি, টাঙানো হলো নোটিশ
রাজ্যের বিধানসভায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়া করা হলো। সোমবার বিধানসভার বাইরে টাঙানো হলো একটি নতুন নোটিশ, যেখানে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, কোনও বিধায়কের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বিধানসভার ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেবলমাত্র বিধায়ক নিজে এবং তার গাড়ির ড্রাইভার ছাড়া অন্য কারও প্রবেশাধিকার থাকবে না।
এর আগে প্রথা ছিল, বিধানসভায় উপস্থিত বিরোধী বা শাসক দলের কোনও বিধায়ক এলে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা বাইরের অংশে অবস্থান করতেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে তিনি জানান, বিধায়কদের নিরাপত্তা রক্ষীদের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়া হলে তা তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আজকের নোটিশে বলা হয়েছে, বিধানসভার ভেতরে প্রবেশের অনুমতি শুধুমাত্র নির্বাচিত বিধায়কদের জন্য। তাঁদের সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত রক্ষী, সহকারী কিংবা অন্য কোনও পরিচিতিকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী শিবিরের দাবি, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে তাঁদের কণ্ঠ রোধ করা যায়। তবে শাসকদল জানিয়েছে, বিধানসভার ভেতরে আইনশৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এখন নজর আদালতের দিকে— ভবিষ্যতে এই নিয়ম নিয়ে নতুন কোনও নির্দেশ আসে কি না, সেটাই দেখার।
বিধানসভায় নিরাপত্তা নিয়ে যে বিতর্ক এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তার সূত্রপাত গত বছরের আগস্টে। সেই সময় বিধানসভায় তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। ঘটনার পরই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁদের অভিযোগ, শাসক দলের বিধায়কেরা নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করতে পারলেও বিরোধী বিধায়কেরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
ঘটনার পর বিজেপি শিবিরের একাধিক বিধায়ক লিখিতভাবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান, তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করার প্রয়োজন। কিন্তু অভিযোগ, সেই চিঠি পাওয়ার পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ফলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিষয়টি আদালতের দ্বারস্থ করেন। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে তিনি প্রশ্ন তোলেন— তৃণমূল বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষী বিধানসভায় ঢুকতে পারলেও, বিজেপি বিধায়কদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা কেন প্রবেশ করতে পারবেন না?
গত বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি ছিল। বিধানসভায় নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিধায়কদের প্রবেশের ক্ষেত্রে সমান নিয়ম করা হোক বলেই জানান বিচারপতি। সোমবার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, কেউ আর নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিধানসভায় ঢুকতে পারবেন না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কারও নিরাপত্তারক্ষী বিধানসভার অন্দরে ঢুকতে পারবেন না।”
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ছাড় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনকি কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, “মুখ্যমন্ত্রী রক্ষী নিয়ে বিধানসভায় ঢুকলে কলকাতা হাই কোর্টে যাব। স্পিকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করব।”
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊