দুর্গাষষ্ঠীতে মা দুর্গার প্রকাশ দেবী কাত্যায়নী রূপে, জানুন বিস্তারিত
- ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
দেবী দুর্গার ন’টি রূপের নামকরণ করেছিলেন স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা। নবরাত্রির এক একটি তিথিতে তিনি পূজিত হন এক এক রূপে। দুর্গাষষ্ঠীতে তাঁর প্রকাশ কাত্যায়নী রূপে।
এই দেবীর লীলা ক্ষেত্র বিন্ধ্যাচল। দেবী এইরূপে রণরঙ্গিনী। ইনিই মহিষমর্দিনী দুর্গা। তাই যুগ যুগ ধরে এই দেবী - দেবী চণ্ডী বা দেবী ভদ্রকালীর মতোই যুদ্ধের দেবী হিসেবে পূজিতা হন।
মহর্ষি কাত্যায়ন এই দেবীর প্রথম পুজো করেন তাই দেবীর নাম কাত্যায়নী। মহিষাসুর তিন কল্পে তিনবার দেবীর তিন রূপের হাতে নিহত হন। তৃতীয়বার তিনি নিহত হন দুর্গার হাতে। বামনপুরাণ এবং কালিকাপুরাণ মতে, তৃতীয়বারে দেবী আশ্বিনের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে কাত্যায়নের আশ্রমে দেবতাদের সম্মিলিত তেজ থেকে দশভুজা রূপে আবির্ভূত হন। এই তেজে সম্মিলিত হয় কাত্যায়নের তেজও। দেবী নিজেই কাত্যায়নের কন্যাত্ব স্বীকার করে কাত্যায়নী নামে বিরাজিত হন। দেবীভাগবত থেকে জানা যায় - মহিষাসুর শুক্লাষ্টমীতে দশভুজা দেবী দুর্গার হাতে পরাজিত এবং নিহত হন। কিন্তু অন্য মতও আছে। সেই মতে - আশ্বিনের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে ইনি সৃষ্টি হয়ে শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে কাত্যায়নের পুজো গ্রহণের পর দশমীতে মহিষাসুরকে বধ করেন। তাই দেবী কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী। আবার এও বলা হয় যে, কাত্য শব্দের অর্থ ব্রহ্মজ্ঞানী এবং অয়ন বলতে বোঝায় পথ। দেবী এই রূপে ব্রহ্মজ্ঞানীদের পথ প্রদর্শন করেন। তাই তিনি কাত্যায়নী।
দেবাদিদেব শিবের ছয়টি মুখের একটি মুখ থেকেও দেবী কাত্যায়নীর আবির্ভাবের কথা শোনা যায়। বলা হয় - তিনিই দক্ষিণকালী, মহাকালী, উগ্রতারা, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী এবং অন্যান্য দেবীর ধর্মীয় আচার ও মন্ত্র প্রকাশ করেন। দেবী কন্যাকুমারীকেও দেবী কাত্যায়নীর এক রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দেবী কাত্যায়নী চতুর্ভুজা। তিনি যেমন খড়্গ ধারণ করেন তেমনই ধারণ করেন পদ্ম। দেবী দান করেন বর এবং অভয়ও। দেবীর বাহন সিংহ।
বৃন্দাবনের গোপিনীরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য ঊষাকালে যমুনায় স্নান করে বালুকার প্রতিমূর্তি তৈরি করে দেবীর উপাসনা করতেন। এই ব্রতই কাত্যায়নী ব্রত। এই কারণেই বোধহয় বিশ্বাস করা হয় - অগ্রহায়ণ মাস জুড়ে দেবী কাত্যায়নীর উপাসনা করলে কুমারীদের স্বামীভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। বিবাহের বাধা কাটাতেও মা কাত্যায়নীর মন্ত্র জপ করার কথা বলা হয়।
এই দেবী প্রসন্ন হলে ভক্তদের রোগ, শোক, দুঃখ, ভয়কে দূর করেন। সেই সঙ্গেই দেবী বিনাশ করেন ভক্তদের জন্ম জন্মান্তরের পাপ, পূর্ণ করেন ভক্তদের সমস্ত ইচ্ছা। দেবীর এই পুজোর দিন আবার বলা হয় সাধকের মন আজ্ঞা চক্রে স্থিত হয়। দেবীর কৃপায় এই সংযোগে সাধকের যোগ সিদ্ধি ঘটে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊