টাইম-এর ‘কিড অফ দ্য ইয়ার ২০২৫’ নির্বাচিত হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত তেজস্বী মনোজ
টাইম-এর ‘কিড অফ দ্য ইয়ার ২০২৫’ নির্বাচিত হলেন তেজস্বী মনোজ, বয়স্কদের অনলাইন প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে গড়ে তুলেছেন ‘শিল্ড সিনিয়র্স’। সতেরো বছর বয়সেই অসাধারণ এক কৃতিত্ব অর্জন করলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কিশোরী তেজস্বী মনোজ। বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে ২০২৫ সালের ‘Kid of the Year’ বা ‘বছরের শ্রেষ্ঠ কিশোর/কিশোরী’ হিসেবে সম্মানিত করেছে। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ এবং মানবিক উদ্যোগ—‘শিল্ড সিনিয়র্স’ (Shield Seniors), যা মূলত বয়স্ক নাগরিকদের অনলাইন জালিয়াতি ও প্রতারণা থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে।
তেজস্বীর শিকড় ভারতের তামিলনাড়ুতে হলেও তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বসবাস করেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি আমেরিকায় আসেন এবং ধীরে ধীরে প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ জন্মায় তাঁর মধ্যে। হাইস্কুলে পড়াকালীন ‘Girls Who Code’ নামের একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে কোডিংয়ের জগতে প্রবেশ ঘটে তাঁর। তবে এই প্রযুক্তি-ভিত্তিক দক্ষতা কেবল নিজের ভবিষ্যতের জন্য নয়, তেজস্বী তা কাজে লাগাতে চেয়েছেন সমাজের কল্যাণে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে একটি পারিবারিক ঘটনার মাধ্যমে তাঁর চোখ খুলে যায়। একদিন তাঁর দাদু এক ভয়ংকর অনলাইন প্রতারণার মুখে পড়েন। একজন জালিয়াত আত্মীয় পরিচয়ে ফোন করে আর্থিক সহায়তা চান। ভাগ্য ভালো যে টাকা পাঠানোর আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তেজস্বী উপলব্ধি করেন, বয়স্ক মানুষদের অনলাইনে নিরাপত্তা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা নেই। এই প্রজন্ম ডিজিটালি এগিয়ে গেলেও অনেক সিনিয়র নাগরিক এখনও প্রতারণার ফাঁদে পড়েন প্রায়শই।
এই চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় ‘শিল্ড সিনিয়র্স’। এটি এমন একটি প্রকল্প যা বয়স্ক নাগরিকদের ডিজিটাল দুনিয়ায় নিরাপদ থাকতে সাহায্য করে। তাঁরা কীভাবে স্ক্যাম চিনবেন, সন্দেহজনক বার্তা বা ইমেল কীভাবে এড়িয়ে চলবেন, কোথায় রিপোর্ট করবেন। এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শুধু প্রযুক্তিগত সমাধান নয়, তেজস্বী নিয়মিত বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করেন, যেখানে সিনিয়র নাগরিকেরা সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন এবং ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
তেজস্বীর এই উদ্যোগ যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন তাদের নির্বাচনে জানায়, শুধু ২০২৪ সালেই অনলাইন স্ক্যামের শিকার হয়ে বয়স্ক আমেরিকানরা প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ‘শিল্ড সিনিয়র্স’-এর মতো একটি সচেতনতামূলক প্ল্যাটফর্ম সমাজে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
এই তরুণীর উদ্যোগ ইতিমধ্যেই মার্কিন কংগ্রেসের ‘Congressional App Challenge’-এ স্বীকৃতি পেয়েছে। পাশাপাশি, প্লানো শহরের TEDx টকেও নিজের গল্প ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন তেজস্বী। শুধুই প্রযুক্তির দুনিয়ায় নয়, তিনি সামাজিক কাজেও সক্রিয়, শরণার্থীদের সাহায্য করেন, দরিদ্রদের আশ্রয় দিয়ে থাকেন এবং স্কুলের অর্কেস্ট্রায় বেহালা বাজান।
তেজস্বীর স্বপ্ন ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার। তাঁর মতে, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে সামাজিক সমস্যার সমাধানে। তাঁর পরিবার ও সমাজের প্রতি তাঁর একান্ত বার্তা, বয়স্ক আত্মীয়স্বজনদের অনলাইন কার্যক্রমের দিকে নজর দিন, তাঁদের পাশে থাকুন এবং তাঁদের ডিজিটালভাবে সচেতন করে তুলুন।
তেজস্বীর এই কৃতিত্ব শুধু একটি পুরস্কারের গল্প নয়, বরং একটি প্রজন্মের পক্ষ থেকে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর মতো তরুণরা দেখিয়ে দিচ্ছেন ইচ্ছা, উদ্যোগ ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কত বড় পরিবর্তন সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊