মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী থেকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দনা
একজন মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী থেকে দেশের অন্যতম আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়ে ওঠার যাত্রাটা সহজ ছিল না। তবে রশ্মিকা মান্দনা সেই পথকেই নিজের মতো করে রাঙিয়েছেন। তার ক্যারিয়ারের উত্থান কেবল বিনোদন জগতের সাফল্যের গল্প নয়, বরং একজন তরুণীর সাহস, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাসের গল্পও বটে।
রশ্মিকার জন্ম কর্ণাটকের কোডাগু জেলার বিরাজপেট শহরে। স্কুলজীবন কেটেছে কোর্গ পাবলিক স্কুলে। শৈশবে তিনি মৃদুভাষী ও আত্মবিশ্বাসহীন ছিলেন। তবে পরিবারের সমর্থনে এবং নিজের ইচ্ছাশক্তিতে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন।
কলেজে পড়ার সময় বেঙ্গালুরুর এম.এস. রামাইয়া কলেজে মনোবিজ্ঞান, সাংবাদিকতা ও ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন রশ্মিকা। ঠিক এই সময়েই ‘ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার ফ্রেশ ফেস অফ ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে নজর কাড়েন বিজ্ঞাপন জগতের। এরপর মডেলিংয়ের হাত ধরেই চলচ্চিত্রের প্রস্তাব আসে।
২০১৬ সালে রশ্মিকার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে কন্নড় ছবি ‘কিরিক পার্টি’-র মাধ্যমে। ছবিটি যেমন বক্স অফিসে সফল হয়, তেমনি নতুন অভিনেত্রী হিসেবে রশ্মিকা প্রশংসাও কুড়িয়ে নেন। এরপর ‘গীতা গোবিন্দম’, ‘ডিয়ার কমরেড’, ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ থেকে শুরু করে হিন্দি সিনেমা ‘অ্যানিমাল’-এ তাঁর পারফরম্যান্স তাকে এনে দেয় দেশব্যাপী খ্যাতি।
রশ্মিকা বিশ্বাস করেন, তার শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা তাকে অভিনেত্রী হিসেবে একধাপ এগিয়ে রেখেছে। বিশেষত মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান চরিত্র বিশ্লেষণে সাহায্য করেছে এবং সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের পাঠ তাকে স্ক্রিপ্ট বোঝায় সুবিধা দিয়েছে।
চলচ্চিত্রের বাইরে রশ্মিকা সোশ্যাল মিডিয়ায়ও যথেষ্ট সক্রিয়। বিভিন্ন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন। ভক্তদের সঙ্গে তিনি খোলামেলা যোগাযোগ রক্ষা করেন, যা তাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর তামিল-তেলেগু ছবি ‘কুবেরা’ বক্স অফিসে সফলতা পেয়েছে এবং অগস্টে ওটিটিতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি সালমান খানের সঙ্গে ‘সিকান্দর’ এবং ভিকি কৌশলের সঙ্গে ‘ছাভা’ সহ একাধিক প্রকল্পে কাজ করছেন তিনি।
রশ্মিকা মান্দনা এখন শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং ভারতীয় তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার এক প্রতীক। তার শিক্ষা, সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প প্রমাণ করে দেয়—আকাঙ্ক্ষা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়।
রশ্মিকা মান্দনা, যিনি আজকের দিনে দেশের ন্যাশনাল ক্রাশ হিসেবে পরিচিত। তিনি একটি মডেলিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শীর্ষ স্থান অধিকার করেন। এটি ছিল তার জন্য চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় প্রবেশের একটি সুযোগ। কেবল অভিনেত্রী হিসেবেই নয়, রশ্মিকা সোশ্যাল মিডিয়ায়ও বিশেষ পরিচিতি অর্জন করেছেন। তাঁর অমায়িক, হাস্যজ্জ্বল এবং মিষ্টি ব্যক্তিত্ব তাকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
তার ইনস্টাগ্রামে লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার, যে কারো কাছে একটি আলাদা মুগ্ধতা সৃষ্টি করে। তাঁর বিশেষ একটি সেলফি বা ভিডিও অনেকের হৃদয়ে গেঁথে যায়, যেন তাঁকে আরও কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।
নির্ভীকভাবে ভাষা শেখা এবং একাধিক ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন তার অভিনয় দক্ষতাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। ‘অ্যানিমাল’ ছবিতে তার হিন্দি ভাষার দক্ষতা নিয়ে যে কটাক্ষ করা হয়েছিল, তাও একেবারে অল্প সময়ে কাটিয়ে তিনি চরিত্রের গভীরতায় ডুব দেন।
সব মিলিয়ে, রশ্মিকা মান্দনা আজ ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অমূল্য রত্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার কঠোর পরিশ্রম, নিরলস সংগ্রাম, এবং উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব তাকে ন্যাশনাল ক্রাশের তকমা এনে দিয়েছে। তিনি আজকের যুব সমাজের কাছে একটি জীবন্ত উদাহরণ, যে কোনো বাধা অতিক্রম করে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊