Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

'গণতন্ত্রের উপর হিটলারী আঘাত, কোর্টের ক্ষমতা নেওয়া হচ্ছে’! ৩০ দিন হেফাজতে থাকলেই খোয়া যাবে মন্ত্রীত্ব বিল নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা

'গণতন্ত্রের উপর হিটলারী আঘাত, কোর্টের ক্ষমতা নেওয়া হচ্ছে’! ৩০ দিন হেফাজতে থাকলেই খোয়া যাবে মন্ত্রীত্ব বিল নিয়ে  সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা

Mamata Banerjee


বুধবার কেন্দ্র যে বিল পেশ করেছে লোকসভায়, তাতে বলা হয়েছে— যদি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের মন্ত্রী গুরুতর অভিযোগে টানা ৩০ দিন ধরে হেফাজতে থাকেন এবং যদি তাঁর পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে ৩১ দিনের দিন সেই অভিযুক্তকে পদ থেকে সরে যেতে হবে। এই বিল পেশ হতেই বিরোধীদের হট্টগোল শুরু হয় লোকসভায়। বিলের বিরোধিতা করে সরব হন বিরোধীরা। শেষমেষ মুলতবি হয় লোকসভা। সেই বিলের তীব্র বিরোধিতা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর মত, এই বিল এনে হিটলারি কায়দায় গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিলের মাধ্যমে আদতে আদালত-বিচারব্যবস্থার ক্ষমতাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।



মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়া 'Black Day, Black Bill' কালো পোস্টার সহ লেখেন, "আমি আজ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পেশ করা ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল-এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটি কেবলমাত্র একটি সুপার-ইমার্জেন্সির থেকেও ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নয়, বরং ভারতের গণতান্ত্রিক যুগকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার এক বিপজ্জনক পদক্ষেপ। এই বিল গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৃত্যুঘণ্টা।" 

তিনি আরো লেখেন, "বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)-এর নামে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টার পর, এখন কেন্দ্র আরেকটি অতি-অমানবিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে।"

তার কথায়, "এই বিল সরাসরি বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চায়। এটি নজিরবিহীন ভারতীয় গণতন্ত্রের আত্মার উপর এক হিটলারীয় আক্রমণ। আদালতের সাংবিধানিক ভূমিকা কেড়ে নিয়ে, ন্যায়বিচার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারসাম্যের প্রশ্নে বিচারবিভাগকে ক্ষমতাহীন করার চেষ্টা চলছে। পক্ষপাতদুষ্ট শক্তির হাতে এমন ক্ষমতা তুলে দেওয়ার মানে হলো গণতন্ত্রকে বিকৃত করা।"

তিনি আরো লিখেছেন, "এটি সংস্কার নয়, বরং পশ্চাদপসরণ— এমন এক ব্যবস্থার দিকে, যেখানে স্বাধীন আদালতের হাত থেকে আইন কেড়ে নিয়ে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। এটি এক ভয়াবহ প্রচেষ্টা, যেখানে বিচারিক পর্যালোচনাকে স্তব্ধ করা হবে, সাংবিধানিক সুরক্ষাকে ভেঙে ফেলা হবে, আর জনগণের অধিকার পদদলিত হবে। ইতিহাসে ফ্যাসিস্ট শাসকরা এভাবেই ক্ষমতা দখল করেছিল। এই শতকের অন্ধকার অধ্যায়ে যে মানসিকতাকে গোটা বিশ্ব একদিন নিন্দা করেছিল, আজ সেই মানসিকতারই গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।"

তিনি আরো লেখেন, "আদালতকে দুর্বল করা মানে জনগণকে দুর্বল করা। তাঁদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া মানে তাঁদের গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া। এই বিল সরাসরি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর আঘাত যুক্তরাষ্ট্রীয়তা, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং বিচারিক পর্যালোচনা যা সংসদও অতিক্রম করতে পারে না। যদি এই বিল পাশ হয়, তবে তা ভারতের সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থার মৃত্যু পরোয়ানা হয়ে উঠবে।"

"আমাদের এই বিপজ্জনক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সংবিধান ক্ষমতায় থাকা কয়েকজন মানুষের সম্পত্তি নয়, এটি ভারতের জনগণের।" লেখেন তিনি। 

তিনি জানান, "এই বিলের উদ্দেশ্য হল একজন ব্যক্তি—এক দল—এক সরকার-এর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে পদদলিত করছে।

বিলটি কেন্দ্রকে এমন ক্ষমতা দিচ্ছে যাতে তারা জনগণের ম্যান্ডেটে হস্তক্ষেপ করতে পারে। অগণতান্ত্রিক সংস্থা যেমন ED ও CBI— যাদের সুপ্রিম কোর্ট একসময় "খাঁচাবন্দি তোতা" বলেছিল— তাঁদের হাতে নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির উপর হস্তক্ষেপের সুযোগ তুলে দিচ্ছে এই বিল। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষমতাশালী করে তোলা হচ্ছে, সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলিকে ধ্বংস করে।"

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, যে কোনও মূল্যে কেন্দ্রের নয়া বিলকে আটকাতে হবে। তিনি আহ্বান জানিয়ে লেখেন, "এই বিল যে কোনও মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে! এই মুহূর্তে গণতন্ত্রকে বাঁচাতেই হবে! জনগণ তাঁদের আদালত, তাঁদের অধিকার এবং তাঁদের গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা কোনওদিন ক্ষমা করবে না। জয় হিন্দ"



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code