Cyber Crime : সাইবার অপরাধ এবং ভুয়ো তথ্য রুখতে কেন্দ্র সরকারের দ্বারস্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা
২০২৫ সালের জুলাই মাসে সাইবার অপরাধ এবং সমাজমাধ্যমে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে এক গভীর সামাজিক সংকটের চিত্র, যেখানে প্রযুক্তির অপব্যবহার সমাজের শান্তি, নিরাপত্তা এবং সংহতির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে সমাজমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য, জাল ভিডিও এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে সমাজের একাংশে আগ্রাসী মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, যা অপরাধপ্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ফাটল ধরানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন, যাতে এই ধরনের সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, সাইবার অপরাধের পরিধি এখন আর শুধু তথ্যচুরি বা আর্থিক প্রতারণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই। এটি আজ সামাজিক, মানসিক এবং সাংস্কৃতিক সংকটের রূপ নিয়েছে। প্রতারণা, পরিচয়পত্র চুরি, ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্যের অপব্যবহার, অবমাননাকর মন্তব্য—এই সবই সাধারণ মানুষকে বিপন্ন করছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মহিলারা, শিশুরা, প্রবীণ নাগরিক এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ, যাঁদের পক্ষে এই প্রযুক্তিগত অপরাধ প্রতিহত করা প্রায় অসম্ভব।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সমাজমাধ্যমে ব্যক্তি, সংস্থা বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এই প্রবণতা রুখতে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, প্রয়োজন সাইবার পরিকাঠামোর উন্নয়ন, ডিজিটাল শিক্ষা প্রসার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি। তিনি মনে করেন, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনকেও আধুনিক ও কার্যকর করতে হবে। বর্তমান আইন যথেষ্ট নয়, তাই নতুন আইন প্রণয়ন অথবা বিদ্যমান আইনের সংশোধন জরুরি।
এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন জাতীয় নিরাপত্তা, সামাজিক সংহতি এবং নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা হয়। তিনি চিঠিতে টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার কাজ হবে গুজব এবং ভুয়ো তথ্য চিহ্নিত করা। পাশাপাশি, সন্দেহজনক সাইবার কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রিপোর্টিং পদ্ধতিকে আরও সহজ ও কার্যকর করার কথাও বলেছেন।
এই চিঠি শুধু একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি এক সামাজিক বার্তা—যেখানে প্রযুক্তির অপব্যবহার রুখতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ রাজ্য এবং দেশের অন্যান্য প্রশাসনিক স্তরকে সচেতন করে তুলতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত ও শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊