সামনে পরীক্ষা, পড়লেও মনে থাকছে না? তাহলে জেনেনিন কীভাবে সহজে মনে রাখবেন
কলকাতা, ১০ই জুলাই, ২০২৫: পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করেও যদি মনে না থাকে, তবে তা শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পড়াশোনার সময় মনে হলেও, পরে ভুলে যাওয়া বা পরীক্ষার হলে সঠিক উত্তর মনে করতে না পারা - এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়। তবে কিছু কার্যকর কৌশল অবলম্বন করলে এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। নিচে জেনে নিন পড়া সহজে মনে রাখার কিছু প্রমাণিত পদ্ধতি:
১. সক্রিয় শিক্ষণ (Active Learning) পদ্ধতি অনুসরণ করুন: শুধুমাত্র বই বা নোট পড়ে যাওয়াকে নিষ্ক্রিয় পড়াশোনা বলে। এর পরিবর্তে, পড়াকে সক্রিয় করে তুলুন।
প্রশ্ন করুন: যা পড়ছেন, তা থেকে নিজে নিজেই প্রশ্ন তৈরি করুন এবং উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন।
আলোচনা করুন: বন্ধু বা সহপাঠীদের সাথে পড়া বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। অন্যদের বোঝানোর চেষ্টা করলে আপনার ধারণা আরও স্পষ্ট হবে।
২. নোট তৈরি করুন, শুধুমাত্র বই পড়া নয়: পড়ার সময় অবশ্যই খাতায় নোট নিন। এটি কেবল তথ্য সংগ্রহ নয়, এটি মস্তিষ্ককে সক্রিয়ভাবে তথ্য প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে।
নিজের ভাষায় নোট লিখুন: যা বুঝছেন, তা নিজের মতো করে লিখুন, এতে মনে রাখা সহজ হবে।
সংক্ষিপ্ত এবং সারসংক্ষেপ: মূল পয়েন্টগুলো বুলেট বা ফ্লোচার্টের মাধ্যমে লিখুন। কঠিন বিষয়গুলোকে সহজ করে উপস্থাপন করুন।
৩. পুনরাবৃত্তি বা রিভিশন (Repetition) কৌশল: স্মৃতিশক্তির উন্নতির জন্য পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত জরুরি।
তিন ধাপ পদ্ধতি: মনোবিজ্ঞানীরা একটি কার্যকর তিন ধাপের পুনরাবৃত্তি পদ্ধতির কথা বলেন:
প্রথম ধাপ: বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে পড়ুন।
দ্বিতীয় ধাপ: তিন দিনের মধ্যে আবার তা পড়ুন।
তৃতীয় ধাপ: সাত দিনের মধ্যে সংক্ষেপে একবার রিভিশন দিন। এই পদ্ধতিতে পড়লে তথ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়।
নিয়মিত বিরতিতে রিভিশন: শুধু পরীক্ষার আগে নয়, নিয়মিত বিরতিতে পড়া বিষয়গুলো রিভিশন করুন। এতে তথ্য দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে জমা হবে।
৪. সক্রিয় স্মরণ (Active Recall) অনুশীলন করুন: পড়া শেষ করে চোখ বন্ধ করে বা বই না দেখে মনে করার চেষ্টা করুন কী কী পড়েছেন।
নিজেকে পরীক্ষা করুন: নিজের তৈরি নোট বা প্রশ্ন থেকে নিজেকেই কুইজ করুন। এতে আপনার মনে রাখার ক্ষমতা বাড়বে এবং আপনি বুঝতে পারবেন কোন বিষয়ে আপনার দুর্বলতা আছে।
ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করুন: গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা, সূত্র বা তারিখের জন্য ফ্ল্যাশকার্ড তৈরি করে অনুশীলন করতে পারেন।
৫. ধারণাগত স্বচ্ছতা (Conceptual Clarity): কোনো বিষয় মুখস্থ না করে তার মূল ধারণা বোঝার চেষ্টা করুন। একবার কোনো ধারণা স্পষ্ট হয়ে গেলে, তা মনে রাখা এবং প্রয়োগ করা অনেক সহজ হয়।
৬. ভিজ্যুয়াল এইড (Visual Aids) ব্যবহার করুন: অনেক মানুষের জন্য ছবি বা চিত্র দেখে মনে রাখা সহজ হয়।
মাইন্ড ম্যাপ (Mind Map) তৈরি করুন: কোনো বিষয়ের মূল ধারণা এবং তার শাখা-প্রশাখাগুলো মাইন্ড ম্যাপের মাধ্যমে চিত্রিত করুন।
ফ্লোচার্ট ও ডায়াগ্রাম: জটিল প্রক্রিয়া বা ঘটনাপ্রবাহকে ফ্লোচার্ট বা ডায়াগ্রামের মাধ্যমে উপস্থাপন করুন।
আরও পড়ুনঃ চাকরির MCQ পরীক্ষায় সাফল্যের কৌশল জেনেনিন, যা আপনার জীবনকে পাল্টে দেবে
৭. স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখুন: শারীরিক সুস্থতা স্মৃতিশক্তির জন্য অপরিহার্য।
পর্যাপ্ত ঘুম: মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
সুষম খাদ্য: পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
ব্যায়াম: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।
বিরতি: দীর্ঘ সময় ধরে একটানা পড়াশোনা না করে, নিয়মিত বিরতি নিন। এটি মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করে এবং মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
৮. বিক্ষিপ্ততা এড়িয়ে চলুন (Minimize Distractions): পড়াশোনার সময় মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য যেকোনো ধরনের বিক্ষিপ্ততা এড়িয়ে চলুন। একটি শান্ত ও নিরিবিলি স্থানে পড়াশোনা করার চেষ্টা করুন।
এই কৌশলগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে পরীক্ষার আগে পড়া মনে না থাকার দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে এবং আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষায় বসতে পারবেন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊