বর্ধমানের ইতিহাসে আরেক নাম ১০৮ শিব মন্দির।
১৭৯০ সালে বর্ধমানের নবাবহাট এলাকায় তৈরি হয় এই ১০৮ শিব মন্দিরটি।জপ মালার আদলে এই ১০৮ শিব মন্দিরের গা ঘেঁষে রয়েছে আরও একটি শিব মন্দির। অর্থাৎ ১০৯ টি শিব মন্দির আছে এই স্থানে।
লোকমুখে প্রচলিত ১৭৮৮ সাল নাগাদ বর্ধমানের নবাব হাট এলাকায় মহামারি দেখা দিয়েছিল। মহামারীতে মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের।স্বজনদের হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। শোকার্ত মানুষদের শোক ভোলাতে এলাকায় মন্দির গড়ার উদ্যোগ নেন মহারানি বিষ্ণুকুমারী।মহারানী এলাকায় মন্দির প্রতিষ্ঠিত করে সকলকে ঈশ্বরমুখী করে তাঁদের শোক ভোলাতে চেয়েছিলেন।
১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের নবাহাটে শুরু হয় মন্দির নির্মাণের কাজ। শেষ হয়েছিল ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে।প্রায় দুই বছর ধরে চলে মন্দির নির্মাণের কাজ।মন্দিরমালায় রয়েছে এক অনন্য শিল্পকীর্তি।মন্দিরের সৌন্দর্যের জন্য মূল ফটকে করা হয়েছে একটি গেট।মূল ফটকের বাঁদিকে রয়েছে কৃত্রিম পাহাড়। পাহাড়ে আছে শিব গৌড়ি। মন্দিরে ভিতরে দুদিকে সারি বদ্ধ ভাবে রয়েছে ১০৮ টি শিবি মন্দির। ডান দিকের সারিবদ্ধ কয়েকটি মন্দিরের বাইরে দিকে জপ মালার মেরু চিহ্নের মতো আছে আরো একটি শিব মন্দির।মোট ১০৯ টি শিব মন্দির। এই ১০৯টি মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে লক্ষ সাধুর উপস্থিতি ঘটেছিল। তাঁদের পদধূলি রাজপরিবার একটি সোনার কলসিতে সংরক্ষণও করে রেখেছিল।প্রবেশের ডান দিকে প্রথম মন্দিরে আছে রুপোর অলঙ্কারে মোরা গৌরি পট্টের মধ্যে শিবলিঙ্গ। আছে রুপোর নাগ দেবী,ও রুপোর ত্রিশূল।পরের প্রতিটি মন্দিরে আছে কষ্টিপাথরের গৌরি পট্টের মধ্যে শিবলিঙ্গ।
মন্দির গুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যা একে অপরের গা ঘেঁষে রয়েছে।দুটি মন্দিরের মাঝে কোনো ফাঁকা নেই। মন্দির গুলো নির্মিত হয়েছিল ওড়িষ্যার বালেশ্বর মন্দিরের আটচলার আদলে। লোকমুখে প্রচলিত মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় প্রতিটি মন্দিরের সামনে একটি করে বেলগাছ রোপন করা হয়েছিল ।যাতে সেই বেলপাতা দিয়ে ভক্তরা শিবের পুজো দিতে পারেন। তবে এখন আর বেল গাছগুলোর অস্তিত্ব নেই।মন্দিরের ভিতরে আছে দুটি পুকুর।রয়েছে ফুলের বাগান। প্রবেশের সম্মুখে রয়েছে মানত নন্দী পার্ক। সেখানে আছে নন্দিনী,ভিরিঙ্গির সাথে স্বয়ং ভোলেনাথ।এর পিছনেই আছে ১০৮ টি পিতলের ঘন্টা। পাশেই আছে টেরা কোটা নকশার মধ্যে স্বয়ং ভোলেনাথের পরিবার। পাশেই আছে আটচালার মধ্যে যোজ্ঞোর স্থান। সেখানে আছে রাজা বিজয় চাঁদ,উদয় চাঁদ,ও রাজ পুত্র প্রনয় চাঁদ মাহতাবের প্রতিকৃতি।আছে রাজ পরিবারের অন্যান্যদের প্রতিকৃতি।
বর্তমানে শিব পূজো উপলক্ষে শিবরাত্রি এবং শ্রাবণ মাসজুড়ে চলে শিব পূজো। শিবের মাথায় জল ঢালতে ভক্তদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। মন্দির সংস্কার ও মন্দির চত্বর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ভক্তদের কাছ থেকে নেওয়া হয় দুটাকা প্রবেশ মূল্য।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊