চৈত্র সংক্রান্তিতে রাজবংশী সমাজে পালিত হল বিষমা পার্বন


rajbangshi bishuya



নিজস্ব সংবাদদাতা, সংবাদ একলব্য: 

আজ 'বিষমা' গোটা উত্তরবঙ্গে রাজবংশী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পালিত হচ্ছে বিষমা উৎসব। এই উৎসব কোথাও কোথাও বিষুয়া বা শিরুয়া উৎসব নামে পরিচিত। সাধারণত নেপালের রাজবংশী জনজাতির মধ্যে এই বিষমা উৎসব শিরুয়া নামে পরিচিত।

মূলত বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন রাজবংশী জনজাতির মধ্যে এই পূজার প্রচলন আছে। সাধারণত কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আসামের গোয়ালপাড়া, বাংলাদেশের রংপুর জেলার ক্ষত্রিয় রাজবংশী সমাজের মানুষ জন চৈত্র সংক্রান্তির দিনে এই বিষুয়া পার্বন পালন করে থাকেন। আসামের কোথাও কোথাও বিষমা কে কেন্দ্র করে মেলা বসে।

মূলত এই সংক্রান্তি তিথিতে সারাদিন নানান নিয়ম আচার পালন করে থাকেন রাজবংশী জনজাতির মানুষেরা। সকাল হতেই তেতো খাওয়া, বিভিন্ন ভেষজ মূলের রস খাওয়ার রীতি আছে।

এছাড়াও এদিন বিভিন্ন শষ্য যেমন চাল, ডাল, গম, তিসি, সরিষা, ভূট্টা, আলু , ভেজে তা বাড়ির ঠাকুর দেবতাকে প্রসাদ হিসেবে নিবেদন করা হয়। একে "আটকালাই- বাটকালাই" বলে।

এদিন রসুন, লেবু, গাঞ্জা ,বিষ ঢেকিয়া , শুটি ,পানিমুথারি, হারগজি বা শতমূলী, বিস্তি প্রভৃতির মূল এক সঙ্গে বেঁধে বাড়ির গেটে বা ঘরের দরজায় কিংবা ঠাকুর ঘরের দরজায় বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কথিত আছে দেও দেবতার অশুভ হাওয়া যাতে না লাগে এই জন্য এটা করা হয়। একে নিয়ে পৌরাণিক কাহিনীও আছে।

রাজবংশী বাড়ি বাড়ি এদিন "বিষশাক" যেমন পাট, ডাটা , লাউ, কানশিষা (দন্ড করে) , খুরিয়া , কচু পাতা, ঢেঁকি শাক, পুই শাক, কলমি শাক, বতুয়া শাক, থানকুনি অর্থাৎ ঢোলামানামানি, ক্ষুদিমানামানি ,নিম পাতা,কারি পাতা প্রভৃতি শাক পাতা খাবার মেনুতে রাখা হয়। এই শাকের তরকারিতে কাঁচা আম কেটে দেওয়া হয়। এছাড়াও ডালে সজিনা খাওয়ার রীতি আছে।

যেহেতু বছরের শেষ দিন তাই বাড়ি শুদ্ধ করার জন্য এদিন বিষ ঢেকিয়া, শুটি , গাঞ্জা,কারি পাতার ডাল (নস্যিং)বেঁধে তা দিয়ে একটা ঘটে জল নিয়ে তা সারা বাড়ি বাড়িতে এমনকি ঘরের ভীতরে কাপড় চোপরেও ছিটানো হয়। এটাকে " বিষপনি" ছিটানো বলে । কোনো কোনো অঞ্চলে এদিন কাঞ্জির জল বানানো শুরু করা হয়।

যদিও বর্তমানকালে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে অনেক রীতি নীতি। হারিয়ে যেতে চলেছে অনেক প্রাচীন সংস্কৃতি। আবার কোনো কোনো অঞ্চলে এই দিনটিকে কবিরাজি করার উপযুক্ত দিন হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। এই দিন বাড়ির তুলশী তলায় বসে তাবিজ কবিচ, জাব বানানোর রীতি আছে। এছাড়া তন্ত্র মন্ত্র প্রয়োগ করে এইদিন নানান "বান ধরি" করা হয়। বাড়ির দোষ কাটানো জন্য " বাড়ি বন", শরীরের ভূত ছাড়ানোর জন্য "শরীর বন" করার রীতি প্রচলিত আছে।

যদিও শিক্ষার প্রসার আধুনিকতার ছোঁয়ায় তন্ত্র মন্ত্রের প্রতি মানুষের বিশ্বাস এখন অনেকাংশেই উঠে গেছে। যার ফল কবিরাজির তন্ত্র মন্ত্রের কারসাজি এখন নেই বললেই চলে।