Debangshu Bhattacharya: 'আজ অবধি কোনও মন্ত্রীর কাছে অন্যায় দরখাস্ত করিনি'! বিস্ফোরক দেবাংশু



Debangshu Bhattacharjee



নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্যে। কোনঠাসা রাজ্য শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস তখন বাম জমানার নিয়োগ নিয়ে পাল্টা সুর চড়িয়েছেন তৃণমূল নেতারা। এর মাঝেই বিস্ফোরক তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ঝড় উঠেছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই পরিস্থিতিতে দেবাংশু নিজের জীবনের কঠিন লড়াইয়ের কথা বললেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বললেন, 'আজ অবধি কোনও মন্ত্রীর কাছে অন্যায় দরখাস্ত করিনি, কোন ভাই-বোনেদের চাকরির জন্য "চিরকুট" জমা দিইনি.. রাত্রিবেলা হয়তো তাই শান্তিতে ঘুমাতে পারি'।




এদিন দেবাংশু তাঁর পোস্টে লেখেন, "বাবা মোটামুটি রোজগার করতেন, আজ তা অনেকটাই তলানিতে এসে ঠেকেছে। মা গৃহবধূ। বাড়ির ১ কাকা ৬০ এর দোরগোড়ায় এসেও ১৩ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিয়ে টুপি, মোজা বিক্রি করেন.. আরেক কাকা ৭০ পেরিয়েছেন, মাস ৬ আগে অবধিও বাজারে প্লাস্টিক বিছিয়ে বারমুডা, মাস্ক বিক্রি করতেন। শরীরের অবস্থার জন্য আজ আর পারেন না।



৭০ পেরোনো কাকার ৫৫ বছর বয়সী স্ত্রী, আমার কাকিমা ঘরে ভাই বোনেদের রেখে আয়ার কাজ করতে যান। রাত্রি, দিন দুই শিফটে। ৬০ পেরোনো কাকার ৫০ ছুঁই ছুঁই কাকিমা বিকেলে রুটি বিক্রি করেন। দুজনেরই ছেলে-মেয়েরা বছর খানেক হল ছোট খাটো কাজ করছে. কিন্তু স্বচ্ছল ভাবে কারোরই চলে না। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এক কাঠার সামান্য বেশি জায়গায় একতলা, একদিক প্রায় ভেঙে পড়া একটা বাড়িতে আমরা ১৭ জন সদস্য একসাথে থাকতাম। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর বাবারা চার ভাই মিলে ঠিক করেন বাড়িটা এবার থাকার মত করে করতে হবে। আমার এই দুই কাকা বড় অংকের লোন নিয়ে বাড়ি তৈরীর কাজে নামেন..(যিনি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ৫ বছরের টাকা শোধের চুক্তিতে বাড়ি বানিয়ে দেন), ২০১৯ এ ওই এক কাঠা জায়গাতেই কোনরকমে একটা দোতলা বাড়ি তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই লোন (রাজমিস্ত্রির টাকা + খুচরো লোন) আজও সেভাবে শোধ হয়নি..




বাবা গত ৪৮ বছর ধরে বাইরে কাজ করেন। আজ বাবার বয়স ৭৪ প্রায়। ২২০০ কিলোমিটার ট্রেনে করে যাতায়াত করেন মাস চারেক ছাড়া ছাড়া। যে কোম্পানিতে কাজ করেন তাদের অবস্থা এখন আগের মত নেই.. দিদি একটি বেসরকারি ফার্মে কাজ করে। আমার রোজগার বলতে ফেসবুকের আয়.. তার সঙ্গে কিছু ফ্রি ল্যানসিং লেখালিখি.. কিছু পোর্টালের সাথে কাজ.. আমি কখনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসিনি, প্রাইভেটেও যাইনি.. ব্যবসার ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই ছিল..




যতদিন না অন্তত একটা ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছি, বাবাকে আজও বলতে পারিনা, তুমি চলে এসো.. এখানে এসে থাকো। কারণ বাবা চলে এলে সংসার বসে যাবে.. মায়ের প্রায় গোটা জীবনটা কেটে গেল বাবাকে ছাড়াই!




এসব কথা কখনো বলিনা... আজ বললাম, কারণ তথাকথিত "সর্বহারা"দের চতুর্দিকে যা অবস্থা দেখছি.. তাতে ভিতরে একটা অদ্ভুত বাজে অনুভূতি হয়..। ভালো লাগেনা.. যন্ত্রণা হয়.. রাজনীতি নিজের ভালোর জন্য, নাকি সমাজের ভালোর জন্য? আজ অবধি কোনও মন্ত্রীর কাছে অন্যায় দরখাস্ত করিনি, কোন ভাই-বোনেদের চাকরির জন্য "চিরকুট" জমা দিইনি.. রাত্রিবেলা হয়তো তাই শান্তিতে ঘুমাতে পারি।




ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যতদিন রাজনীতি করব, যেন সমস্ত কালি, সমস্ত দাগ এড়িয়ে চলতে পারি.. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন সত্যি সত্যিই অনুসরণ করে বাকি রাজনৈতিক জীবনটা কাটিয়ে ফেলতে পারি...। আর কখনো যদি গায়ে কালি লাগে, সেদিনই যেন নির্দ্বিধায় মৃত্যু ধেয়ে আসেন আমায় গ্রাস করতে..."