নীল পূজাঃ নীলাবতীর বিয়ে- শিব দূর্গার বিয়ে নামেও পরিচিত 

নীল পূজা



কথায় আছে বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বন। সারা বছর এই তেরো পার্বন কে ঘিরে চলে নানা উৎসব মেলা। যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কিছু মানুষের রুজি রোজকার। এই পার্বণের মধ্যে অন্যতম নীল পূজা বা নীল ষষ্ঠী। যা শিব দূর্গার বিবাহ নামে পরিচিত। চৈত্র সংক্রান্তির চরক পুজোর আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় এই পূজো। নীল বা নীলকন্ঠ মহাদেবের অপর নাম। 

সেই নীল বা শিবের সাথে নিলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলক্ষে লৌকিক আচার অনুষ্ঠান সংগঠিত হয়। কাহীনি অনুসারে দক্ষযজ্ঞ এ দেহ ত্যাগের পর শিবজায়া সতী পুনরায় সুন্দরী কন্যা রুপে আবির্ভূত হন। বিবাহ যোগ্য হলে রাজা তাকে শিবের সাথে বিয়ে দেন। বাসর ঘরে লীলাবতী শিব কে মোহিত করেন। নীল পূজা শিব ও নিলাবতীর বিবাহ অনুষ্ঠানের স্মারক। 


এই পুজো তে মানুষ শিব দুর্গার সং সেজে অষ্টক গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা সংগ্রহ করে। এই গানকে নীল গান ও বলে। নীলব্রত সন্তান দের মঙ্গলঅর্থের জন্য করা হয়। নীল পূজোর আগের দিন অধিবাস রাত্রে সমস্ত দেবতার পূজো হয় ও বিয়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই পুজোয় শিবের চ্যালা বা ভূত পেত কে সোল মাছের ঝোল ভোগ দেওয়া হয়।

নীল ষষ্টি কে ঘিরে চলে নানান অনুষ্ঠান, মেলা, যাত্রা। গাজন সন্ন্যাসী রা এই সময়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে দিন অতিবাহিত করে। শহর থেকে গ্রাম বাংলায় বহু মানুষ এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করার চেষ্টা করে। 

সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নীলসন্ন্যাসীরা ও শিব-দুর্গার সঙেরা পূজার সময়ে নীলকে সুসজ্জিত করে গীতিবাদ্য সহযোগে বাড়ি বাড়ি ঘোরান এবং ভিক্ষা সংগ্রহ করেন। নীলের গানকে বলা হয় অষ্টক গান।



আবার নীল ষষ্ঠীর দিনে সন্তানবতী হিন্দু নারীরা সারাদিন উপবাস রেখে সন্তানের আয়ু বৃদ্ধির কামনায় ‘নীল ষষ্ঠী’র ব্রত করে। নীলপূজার পর সন্ধ্যাবেলায় শিবমন্দিরে বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে জলগ্রহণ করে।প্রচলিত ধারণা হল- নীলের ব্রত নিষ্ঠামতো পালন করলে কোনওদিন সন্তানের অমঙ্গল হয় না।