উচ্চমাধ্যমিক বাংলা - ভাষা বিজ্ঞান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মাধ্যমিক শেষ, এবার উচ্চমাধ্যমিকের পালা। জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি। আজ উচ্চমাধ্যমিক ২০২২ পরীক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ের ভাষা বিজ্ঞান অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বিশ্লেষণধর্মি প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ ভাষাবিজ্ঞান বলতে কী বোঝ ? ভাষাবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য তথা তার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ভাষাবিজ্ঞান (ইংরেজি Linguistics) বলতে একটি সংশ্রয় (system) হিসেবে ভাষার প্রকৃতি, গঠন, ঔপাদানিক একক ও এর যে কোনো ধরনের পরিবর্তন নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে বোঝায় । যারা এ বিষয়ে গবেষণা করেন তাঁদেরকে ভাষাবিজ্ঞানী বলা হয়।
ভাষাবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যঃ ক)ভাষাবিজ্ঞানীরা নৈর্ব্যক্তিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষাকে বিশ্লেষণ ও বর্ণনা করেন; ভাষার সঠিক ব্যবহারের কঠোর বিধিবিধান প্রণয়ন তাদের উদ্দেশ্য নয় ।
খ) তাঁরা বিভিন্ন ভাষার মধ্যে তুলনা করে এদের সাধারণ উপাদান এবং অন্তর্নিহিত সূত্রগুলি নিরূপণের চেষ্টা করেন এবং এগুলিকে এমন একটি তাত্ত্বিক কাঠামোয় দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন যে-কাঠামো সমস্ত ভাষার পরিচয় দিতে সক্ষম ।
গ) ভাষাতে কোন্ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারেও ভবিষ্যৎবাণী করতে সক্ষম।
আলোচ্য বিষয়ঃ ভাষাবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দিক ও ব্যবহারিক দিক দুই-ই বিদ্যমান । তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানে ভাষার ধ্বনিসম্ভার (ধ্বনিতত্ত্ব ও ধ্বনিবিজ্ঞান), ব্যাকরণ (বাক্যতত্ত্ব ও রূপমূলতত্ত্ব) এবং শব্দার্থ (অর্থবিজ্ঞান) নিয়ে আলোচনা করা হয় । ব্যবহারিক ভাষাবিজ্ঞানে অনুবাদ, ভাষা শিক্ষণ, বাক-রোগ নির্ণয় ও বাক-চিকিৎসা, ইত্যাদি আলোচিত হয় । এছাড়া ভাষাবিজ্ঞান জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাথে মিলে সমাজভাষাবিজ্ঞান, মনোভাষাবিজ্ঞান, গণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান ইত্যাদির জন্ম দিয়েছে ।
প্রশ্নঃ সমাজভাষাবিজ্ঞান বলতে কী বোঝ ? সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের সাথে ভাষাবিজ্ঞানের পার্থক্য কোথায় ?
উত্তরঃ ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা সমাজ ভাষাবিজ্ঞান । সমাজ ভাষাবিজ্ঞান শব্দটি এসেছে সমাজ ও ভাষা বিজ্ঞান থেকে । আবার ভাষাবিজ্ঞান কথাটি এসেছে ভাষা ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ে । সমাজ ভাষা বিজ্ঞান হল ভাষাবিজ্ঞানের এমন একটি বিভাগ যেখানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের ভাষা বৈচিত্র্যের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
মানুষ সামাজিক জীব । তাই সমাজের পরিবেশ , পরিস্থিতি, কর্ম পদ্ধতি ইত্যাদি সবই ভাষার সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত । অর্থাৎ ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় সমাজ ও ভাষার সম্পর্ক আলোচনা করা হয় তাকে সমাজ ভাষাবিজ্ঞান বলে । কিংবা বলা যেতে পারে ভাষাতত্ত্বের যে দিকটা সমাজদ্বরা নিয়ন্ত্রিত হয় তাই সমাজভাষাবিজ্ঞান ।
সমাজ ভাষা বিজ্ঞানের সাথে ভাষা বিজ্ঞানের পার্থক্যঃ
১) ভাষার উদ্ভব, বিবর্তন, পরিবর্তন, রীতি প্রভৃতি আলোচিত হয় ভাষা বিজ্ঞানে । কিন্তু সমাজ ভাষাবিজ্ঞানে ভাষার বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
২) ভাষা বিজ্ঞানে ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, বাক্যতত্ত্ব ইত্যাদি হল ভাষার ব্যাকরণ । কিন্তু সমাজ ভাষাবিজ্ঞানে সামাজিক রীতিনীতি , অবস্থান, পরিস্থিতি, ইত্যাদি সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের মূলসূত্র ।
৩) ভাষা বিজ্ঞান ভাষা বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট নিয়মে চলে আর সমাজ ভাষাবিজ্ঞান সমাজে নিরিখে আলোচনা করে ।
প্রশ্নঃ তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করো ।
উত্তরঃ ভাষাবিজ্ঞান (ইংরেজি: Linguistics) বলতে একটি সংশ্রয় (system) হিসেবে ভাষার প্রকৃতি, গঠন, ঔপাদানিক একক ও এর যে কোনো ধরনের পরিবর্তন নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে বোঝায় । যারা এ বিষয়ে গবেষণা করেন তাঁদেরকে ভাষাবিজ্ঞানী বলা হয় । তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান এই ভাষাবিজ্ঞানেরই একটি শাখা ।
একাধিক ভাষার মধ্যে পারস্পরিক তুলনা এবং সেইসব ভাষার বংশ নির্নয় ও ঐতিহাসিক বিবর্তনের রুপরেখা চিত্রিত করা হয় ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় , তাকে তুলনামূলক ভাষা বিজ্ঞান বলা হয় ।
তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যঃ
১) একই ভাষা বংশের একাধিক ভাষার মধ্যে পারস্পরিক তুলনামূলক ভাবে আলোচনা করা হয় ।
২) তুলনামূলক আলোচনার মধ্যদিয়ে ভাষার ঐতিহাসিক বিবর্তনের রূপরেখা অঙ্কণ করা হয় ।
৩) পারস্পরিক ভাষার তুলনার মধ্যদিয়ে সেই ভাষার বংশ নির্নয় করা হয় তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের মধ্যদিয়ে ।
প্রশ্নঃ শৈলী কী এবং কেন – আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ইংরেজি style শব্দের প্রতিশব্দ শৈলী । কোন কোন ভাষাবিজ্ঞানীর মতে রীতি । তবে এককথায় বলতে পারি শৈলী নিয়ে নিয়োজিত যে বিজ্ঞান তাই মূলত স্টাইলিস্টিকস বা শৈলী বিজ্ঞান । শিল্প সংস্কৃতির সমস্ত ধারাতেই এই বিজ্ঞানের প্রয়োগ এবং ব্যাপ্তি লক্ষ্য করা যায় । এরিস্টটল বলেছিলেন শৈলী হচ্ছে এমন গুণ যা সমস্ত প্রকাশের মধ্যে থাকে ।
মানুষ সৃজনশীল এবং বৈচিত্রময় প্রানী । তাই প্রতিটি মানুষের প্রকাশের ভাষায় থাকে এক ধরনের স্বাতন্ত্র । একজন লেখক বা কবির ভিন্ন বিষয়ের ভিন্ন লেখা হলেও কোথাও একটা নিজস্বতা থেকে যায় যা দিয়ে তাঁর প্রকাশ ভঙ্গীকে চিহ্নিত করা যায় ।
আবার একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন রচয়িতার লেখা ভিন্ন হয় তাদের নিজস্ব প্রকাশ ভঙ্গীর কারনেই । তাই বলা যায় প্রায় সব রচয়িতারই নিজস্ব একটা ভাষা নির্ভর পরিচয় আছে যা তাঁর বক্তব্য বা লিখনীতে পরিস্ফুট হয় । মূলত প্রত্যেকের অন্তর্নিহিত ব্যক্তিত্ত্বের ছাপ তার লিখনীতে থেকে যায় । । যে কোন লেখক বা কবির এই নিজস্বতাই ভাষা বিজ্ঞানের পরিভাষায় শৈলী নামে পরিচিত ।
কে কত বৈচিত্রময় এবং ভিন্ন শৈলী গঠন করতে পারেন মূলত তা দিয়েই একজন কবির প্রতিভা বিচার হয়ে থাকে । যারা খুব শক্তিমান কবি বা লেখক তাদের লেখা পড়া মাত্রই আমরা বলে দিতে পারি সেটা কার লেখা । রবীন্দ্র সঙ্গীত বা নজরুল সঙ্গীত বৈচিত্রময় হওয়া সত্ত্বেও আমরা শুনামাত্রই অবলীলায় বলে দিতে পারি কোনটা রবীন্দ্র সঙ্গীত বা নজরুল সঙ্গীত । এর পিছনে রয়েছে দুই শক্তিমান কবির নিজস্ব শৈলী ।
প্রশ্নঃ ভাষা বিজ্ঞানের কয়টি ধারা ও কি কি ? সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
উত্তরঃ বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে ভাষাবিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাকরণের থেকে অনেক ব্যাপক। ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনার ৩ টি ধারা রয়েছে-
১) তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান- বিভিন্ন ভাষার মধ্যে তুলনা করে তাদের মিল-অমিল খুঁজে বার করাই তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের কাজ। স্যার উইলিয়াম জোন্স এই আলোচনার সুত্রপাত করেন।
২) ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান- একটি ভাষার ইতিহাস এবং বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- ভারতীয় আর্যভাষা থেকে কীভাবে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশের পর্যায় পেরিয়ে বাংলা ভাষার জন্ম হল এটা আলোচনা করা ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের কাজ।
৩) বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান- একটি ভাষার বর্তমান নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করে। যেমন বাংলা ভাষার বর্ননামূলক আলোচনার মধ্যে পড়বে এর ধ্বনিগত নানা দিক থেকে শুরু করে শব্দগঠন, শব্দের অর্থ প্রভৃতি। বর্তমানে বর্ননামূলক ভাষা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊